
সামন্ত বাড়ির রহস্য
ডঃ শ্রীতা মুখার্জী
বিল্টুর বয়স এখন আট বছর। বালক
থেকে কিশোর হতে তার এখনও অনেক দেরি আছে। অথচ নিজেকে সে বড়ো ভাবতে ভারী ভালোবাসে।
মাঝে মাঝে এমন সব কাণ্ডকারখানা করে বসে, যাতে বাড়ির লোক আশ্চর্য হওয়ার বদলে হেসে
ফেলে। সবার কাছে হাসির পাত্র হতে বিল্টুর মোটেও ভালো লাগে না। অথচ নিজের বিরাটত্ব
যে সকলের সামনে জাহির না করলেই নয়।
সেদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে
সামন্তদের বাড়ির পেছনের মাঠটা দিয়ে শর্টকাট নিচ্ছিল বিল্টু। এমন সময় ভ্যাবলাদা’র
সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। ভ্যাবলাদা ওদের পাড়াতেই থাকে। কাজকর্ম বিশেষ করে না কিছু।
ভ্যাবলাদাই খবরটা দিল তাকে। সামন্তদের বিশাল বড়ো সাহেবি কেতার বাড়িটা, যেটা এতদিন
বন্ধ থাকত, সেখানে নাকি এখন কাদের আনাগোনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা মানুষ, নাকি
অন্য গ্রহের কোনো প্রাণী, ভ্যাবলাদার সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। লোকগুলো নাকি বাড়ি থেকে
বের হয় না। পাড়ায় কারুর সঙ্গে মেলামেশা করতেও তাদের দেখা যায় না। একটা চাকর মতো
লোক সপ্তাহে একদিন বেরিয়ে হাট থেকে সপ্তাহের বাজার সেরে সেই যে বাড়িতে ঢুকে দরজা
বন্ধ করে দেয়, আর কেউ সে বাড়ির ভেতর কী হচ্ছে, সে কথা জানতে পারে না। বাড়ির পেছন
দিকের উঠোনটায় একটা নাকি ল্যাবরেটরি বানানো হয়েছে। গোবী ধোপা একদিন কী যেন কাজে ও
বাড়িতে ঢুকেছিল, সে দেখে জানিয়েছে। ওই বাড়ির লোকগুলো নাকি মাথায় হ্যাট পড়ে থাকে।
আর মুখে পাতলা কাপড়ের টুকরো দিয়ে বানানো মাস্ক লাগিয়ে রাখে। হাতে
নাকি থাকে গ্লাভস। পায়ে বুটজুতো। কথাও তারা নাকি সাধারণ মানুষের মতো বলে না।
আকারে-ইঙ্গিতে, ভাবভঙ্গিতে মনের কথা বুঝিয়ে দিতে চায়। গোবী ধোপার সঙ্গে ভাব থাকায়
গোবী ধোপা এসব গোপন তথ্য ভ্যাবলা দা’কে দিয়েছিল। এখন সে কথা ভ্যাবলা দা’র থেকে
বিল্টু জেনে গেল।
‘সত্যজিৎ’ আর ‘শীর্ষেন্দু’ পড়ে
বড়ো হওয়া বিল্টুর মনে রীতিমতো রোমাঞ্চ জাগল। তাদের শহরে লোকচক্ষুর অন্তরালে একটা
এত বড়ো কাণ্ড ঘটে যাচ্ছে, এটা ভেবেই তার গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেল। স্কুল থেকে ফিরে
সেদিন আর ফুটবল খেলতে গেল না। গরম দুধ বিনা প্রতিবাদে চোঁ চোঁ করে খেয়ে নিল। আর
পড়ার টেবিলে বইখাতা ছড়িয়ে বসার বদলে সারাটা সন্ধে খাটে শুয়ে ঠ্যাং নাচাল আর
বুদ্ধিতে শান দিল। এত দিনে একটা ভালো কেস পাওয়া গেছে। এই রহস্য উদ্ধার করতে পারলে
শুধু বাড়ি কেন, গোটা শহরের লোককে অবাক করে দিতে পারবে বিল্টু।
পরদিন স্কুলে গিয়েই প্রশান্ত
আর বাদলকে পাকড়াও করল বিল্টু। স্কুলের টিফিনটা তিনজনের জামরুল গাছের নীচে বসে
কাটল। তাদের শহর যে আর নিরাপদ নয়, অন্য গ্রহের প্রাণীরাই হোক, বা গুন্ডা-বদমাস –
এই শহরের আনাচে কানাচে থাবা গেড়ে বসে আছে, সেটা ভেবে তিনজনে যথেষ্ট উত্তেজিত হয়ে
পড়ল। কিন্তু তিনটে বাচ্ছা ছেলে কীই বা করতে পারে! তাদের কথা বড়োরা কেনই বা বিশ্বাস
করবে। অনেক ভেবেচিন্তে প্রশান্ত বলল ওদের একবার স্পটে গিয়ে তদন্ত করা উচিত। সত্যিই
বাড়িটায় কেউ থাকে কিনা, সেটা আগে জানা খুব দরকার। হতেই পারে ভ্যাবলাদা জাস্ট গুল
দিয়েছে, বা মজা করেছে বিল্টুর সঙ্গে। তবে সেটা জানতে গেলে, বাড়িটার আশেপাশে যেতে
হবে সন্ধের পরে। কিন্তু তিনজনের কাউকেই সন্ধের পরে বাড়ি থেকে বেরোনোর অনুমতি দেওয়া
হবে না।
সুযোগ খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে
উপায় একটা বের হল। সেদিন পাড়ায় ফাংশান। ফাংশান দেখার অজুহাতে তিনজনে যে যার বাড়ি
থেকে বেরিয়ে পড়ল। তারপর একটা নির্দিষ্ট জায়গায় এসে জমা হল। অবশেষে পায়ে পায়ে এসে
পৌঁছোলো সামন্তদের বাড়িটার পেছন দিকে। অনেক ঝোপ-জঙ্গল পেরিয়ে কাঁটাতারের বেড়ার
একেবারে কাছে চলে গেল। আর তখনই দেখল বাড়িটার ভেতরে রীতিমতো আলো জ্বলছে। কয়েকটা লোক
বড়ো বড়ো কীসব যন্ত্রপাতি নিয়ে ছুটোছুটি করে কাজ করছে। তবে তাদের পরনে মোটেও হ্যাট,
কোট নেই। সাধারণ জামাকাপড় পরা লোক সব। আর একটা অদ্ভুত কড়া-উগ্র গন্ধে শরীর-মন যেন
আচ্ছন্ন হয়ে যেতে বসেছে। বেশীক্ষণ সেখানে থাকা নিরাপদ নয় বুঝে একসময় পায়ে পায়ে
ওখান থেকে সরে এল তিনজন। তাও সন্ধেবেলা অন্ধকার ছিল বলে ওরা এতটা দেখতে পেল। দিনের
বেলা হলে লোকগুলো ঠিক ওদের দেখতে পেয়ে যেত আর ধরে ফেলত। ওদের
এই সব গোপন কীর্তিকলাপের কোনো ছবি বিল্টুরা তুলতে পারল না। বাড়ির বড়োরা এখনও এত কম
বয়স বলে তাদের হাতে ফোন দেয়নি। আসলে ওদের এই শহরটা কলকাতা থেকে অনেকটা দূরে হওয়ায় এখানে
এসব অনুশাসন চালানোর রেওয়াজ এখনও আছে। ছোটোদের ফোন
না ঘেঁটে, অবসর সময়ে গল্পের বই পড়তে হয়। পাড়ার সবার সঙ্গে সবাই সদ্ভাব রেখে চলে।
বড়োদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে হয়। পরস্পরের ভালোমন্দে একে অন্যের খোঁজখবর
রাখতে হয়। ফোন নেই বলে লোকগুলোর ক্রিয়াকলাপ
ক্যাপচার করা গেল না, এই আপশোশ নিয়ে বাড়ি ফিরল বিল্টু। কিন্তু রাতে ঘুমোনোর সময়ও
ওই গন্ধটা তার নাকে লেগে থাকল। কিছু একটা কাণ্ড যে ওখানে হচ্ছে এ ব্যাপারে সে এবং
তার বন্ধুরা একমত। কিন্তু ব্যাপারটার গোড়ায় পৌঁছোতে হবে।
পরদিন স্কুলফেরতা পথে তারা
গিয়ে ধরল গোবী ধোপাকে। তাকে অনেক জেরা করেও কিছু বের করতে পারল না। কিন্তু এই কথা
আদায় করে নিল যে পরের রবিবার গোবী ধোপা সামন্তদের বাড়ি কোনো একটা কাজের অজুহাতে
যাবে এবং বিল্টুকে সে সঙ্গে নেবে। ওখানে কী হচ্ছে, সেটা স্বচক্ষে না দেখতে পারলে
এবং প্রমাণ সংগ্রহ করতে না পারলে, অপরাধীদের ধরবে কী করে বিল্টু!
শনিবার রাত থেকেই খুব টেনশন
হতে লাগল। রবিবার তো একাই তাকে অভিযানে যেতে হবে। প্রশান্ত আর বাদলকে সঙ্গে পাবে না।
বাড়ি থেকে ওদের ছাড়বে না। গোবী ধোপাও শেষ পর্যন্ত তাকে নিয়ে যাবে কিনা, এ ব্যাপারে
সন্দেহ আছে বিল্টুর। কিন্তু এতদূর এসে পিছিয়ে গেলেও তো চলবে না। এক্সাইটমেন্টের
চোটে গত দশদিন ধরে সে পড়াশোনাতেও মন বসাতে পারছে না। এদিকে সামনেই ইউনিট টেস্ট।
গতকালও ভূগোল ক্লাসে দাঁড় খেয়েছে। অতএব রবিবার সকাল হতেই গোবী ধোপার আস্তানায় গিয়ে
হাজির হল সে। গোবী ধোপা যথারীতি জামাকাপড় ইস্তিরির কাজে ব্যস্ত ছিল। বিল্টুকে সে
পাত্তাও দিল না। বিল্টুর সমস্ত আবেদন-নিবেদন অগ্রাহ্য করে নিজের কাজে মন দিল সে।
এবার বিল্টুর মানে লাগল। সে একাই হাঁটা দিল সামন্তদের বাংলো বাড়ির দিকে।
একটা হলুদ পাখি টিরিটির করে
ডাকছে খুব কাছে কোথাও। পাখির ডাক শুনতে শুনতে কখন যে অন্যমনস্ক ভাবে সামন্ত বাড়ির
বড়ো লোহার দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে, সেটা খেয়ালও করেনি বিল্টু। খেয়াল করল যখন
দরজা পেরিয়ে বাড়ির মধ্যের বড়ো চাতালটায় এসে পৌঁছোল। সেখানে বসে গামছা দিয়ে ঘাম
মুছছিল একটা লোক। বিল্টুকে দেখেও কিছু বলল না। লোকটাকে একপাশে রেখে গুটি গুটি সামনের
দিকে এগিয়ে গেল বিল্টু। বড়ো বড়ো সব ঘর তালাবন্ধ। কে জানে ওখানে অন্য গ্রহের কোনো
প্রাণী লুকিয়ে আছে কিনা। সামনের চাতাল থেকে পেছনের উঠোনটায় পৌঁছে অবাক হয়ে গেল
বিল্টু। খোলা উঠোনটাকে শেড দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে। একদিকে লাল-নীল কাচের ঘর তৈরি
হয়েছে। ঘরের মধ্যে কয়েকটা লোক অদ্ভুত সব পোশাক পরে কীসব পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে। পা
টিপে টিপে একটা ঘরের দরজাটা আস্তে করে খুলে উঁকি দেওয়ার ইচ্ছে ছিল বিল্টুর। কিন্তু
দরজা খুলতেই ‘ক্যাঁচ’ – করে একটা আওয়াজ হল আর সঙ্গে সঙ্গে চেয়ারে বসা লোকটা তার
দিকে মুখ ফিরিয়ে তাকাল। লোকটার চোখ দুটো একেবারে কাচের গুলির
মতো সবুজ। আর লোকটার মুখের মধ্যে দাঁতগুলো সব কালো মতো। তাই
দেখেই দরজাটা বাইরে থেকে টেনে দৌড়ে পালাতে চেষ্টা করল বিল্টু। কিন্তু
সামনের বড়ো চাতালটায় পৌঁছে বড়ো দরজার দিকে যাওয়ার আগেই দেখল দোতলার সিঁড়ি দিয়ে কাচের
বয়াম হাতে একজন বউ নেমে আসছে। তাড়াহুড়োতে তার সঙ্গে ধাক্কা লেগে সেই কাচের বয়ামটা
মাটিতে পড়ে ভেঙে গেল আর তার মধ্যে থেকে পাউডারের মতো সাদা রঙের কীসব গুঁড়ো গুঁড়ো
মতো জিনিস মাটিতে ছড়িয়ে পড়ল। আর অদ্ভুত একটা গন্ধ আচ্ছন্ন করে ফেলতে লাগল
বিল্টুকে। এমন সময় কোথা থেকে গামছা কাঁধে সেই লোকটা এসে তাকে ‘চ্যাংদোলা’-র
ভঙ্গিতে ধরে ফেলতে চাইল। পায়ে আর কোনো বল পাচ্ছে না বিল্টু। তবু পালাতে তাকে হবেই।
তাই প্রাণপণে লোকটাকে এড়িয়ে ছুট মারল। ছুটতে ছুটতে সোজা নিজের বাড়ির ক্যাম্পাসে
এসে থামল সে। দৌড়ে পালিয়ে আসার সময় তার পা কাঁটা-ঝোপে ছড়ে গেছে। পকেটে রাখা একটা
দশ টাকার নোট কোথাও পড়ে গেছে। তবে এখন সেসব বিষয় ভাববার কথা নয়। সামন্ত বাড়িতে যে
জটিল কোনো গবেষণা হচ্ছে, পৃথিবীটাকে ধ্বংস করার কোনো ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সে ব্যাপারে
আর কোনো সন্দেহ থাকল না বিল্টুর।
বিল্টুর কাছে কোনো প্রমাণ
নেই। কিন্তু বাড়ির বড়োদের এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে হবেই। তাই বিল্টু ভাবছিল তার রহস্য
অভিযানের প্রসঙ্গ কীভাবে বাড়িতে উত্থাপন করবে। দুপুরে ভাত খেয়ে এসব আকাশ-পাতাল
ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়েছিল সে। রবিবারের দুপুর যেহেতু, তাই বাবাও বাড়িতে রয়েছে। কিন্তু
অন্য রবিবারের মতো সেদিন বাবা আর বিল্টুকে সারা দুপুর অঙ্ক করতে বলল না। কী কারণে
যেন বাবাকে খুব খুশি খুশি লাগছে। রাতের জন্য মা অনেক রকম খাবার বানাতে বসল যখন তখন
মাকে প্রশ্ন করে বিল্টু জানল রাতে তাদের বাড়িতে একজন অতিথি আসবে। বিল্টুর দাদুর
ছোটোবেলার এক বন্ধু।
বাড়িতে কারুর আসার থাকলে
ঘর-বার করা বিল্টুর স্বভাব। সন্ধে থেকেই সে বারান্দা-ঘর করছিল। রাত আটটার সময়
বাড়ির সামনে একটা গাড়ি এসে দাঁড়াল। গাড়ি থেকে যিনি নামলেন, তাকে দেখে বিল্টু অবাক
হয়ে গেল। অবাক না বলে চমকে যাওয়াও বলা যেতে পারে। সেদিন সকালে সামন্তদের বাড়িতে
লাল-নীল কাচ ঢাকা ঘরে এই লোকটাকেই সে দেখেছিল। ছুটে ঘরে ঢুকতে গিয়ে বাবার সঙ্গে
ধাক্কা লেগে গেল। বাড়িতে ঢুকে বসার ঘরে এসে সেই ভদ্রলোক বসলেন। বাবা একে একে মা,
কাকাই, দিদি আর বিল্টুর সঙ্গে সেই ভদ্রলোকের আলাপ করিয়ে দিল। তাঁর নাম অভিজিত
সামন্ত। বিল্টুর দাদুর তিনি বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলেন।
একসঙ্গে তাঁরা স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করেছেন। তারপর বহু বছর আগে তিনি
বিদেশে চলে যান। সেখানেই এখন তাঁর বিশাল বাড়ি রয়েছে। ভদ্রলোকের ছেলেমেয়েরাও
বিদেশেই থাকে। তিনি কিছুদিন আগে দেশে ফিরেছেন অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে। দেশে ফিরেই
সোজা চলে এসেছেন নিজের শহর বিশালগড়ে নিজের বাড়িতে বসবাস করতে। নিজের বাড়িতেই সামন্তবাবু
নাকি হোমিওপ্যাথি ওষুধের একটা কারখানা বানিয়ে তুলেছেন। কলকাতা থেকে কিছু
কর্মচারীকেও নিয়ে এসেছেন। এভাবেই নিজের অবসর জীবনকেও তিনি কাজের মধ্যে দিয়ে
অতিবাহিত করতে চান। পুরো ব্যাপারটাই এক্সপেরিমেন্টাল যদিও। বেশ আত্মপ্রসাদের ভঙ্গিতে
এসব কথা বললেন ভদ্রলোক। এবং এও জানালেন এখানকার জল-হাওয়াতে তাঁর স্ত্রীর শরীর ভালো
হয়ে গেছে। তাই এবার হয়তো তাঁরা কিছু সময়ের মধ্যেই বিদেশে ফিরে যাবেন।
গল্প-টল্প করে যাওয়ার সময়
সামন্তবাবু ওদের নিজের কারখানার কিছু ওষুধ দিয়ে গেলেন। হোমিওপ্যাথি ওষুধ খেতে
এমনিতে বিল্টুর দারুণ ভালো লাগে। কী সুন্দর মিষ্টি মিষ্টি হয়। কিন্তু সকালের
অভিযানের ব্যাপারটা মনে আসতেই তার মনটা দুঃখে ভরে গেল। এত দিন ধরে যে রহস্যের সে
কুল-কিনারা করার চেষ্টা করছিল, তার প্রকৃত কারণ জেনে গোয়েন্দা বিল্টুর মন খারাপ
হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। রাতের ডিনার করে সামন্তবাবুর রেখে যাওয়া ওষুধের শিশিটা
খুলতেই অদ্ভুত এক কড়া গন্ধ এসে আচ্ছন্ন করে দিল বিল্টুকে। তবে ওষুধের কয়েক দানা
মুখে দেওয়ার পরে আর কিছু মনে হল না। আর হঠাৎ তখনই লোকটার মুখের মধ্যের পোড়া মতো
ক্ষয়ে যাওয়া দাঁতগুলোর কথা মনে পড়ে মুখটা বিস্বাদ হয়ে গেল।
রাতে রোজকার মতো সেদিনও টিভি-তে
নিউজ শুনে নিজের ঘরে ঢুকতেই পড়ার টেবিলের দিকে চোখ যেতেই বিল্টুর চুল আবার খাড়া
হয়ে গেল। টেবিলের ওপর দুটো কটকটে সবুজ রঙের মার্বেল গুলি রাখা রয়েছে। এই
সন্ধেবেলাও তো ওগুলো ছিল না। সকালে দেখা
লোকটার চোখের কথা মনে পড়ে গেল বিল্টুর। কী করে যে সেই গুলিগুলো বিল্টুর টেবিলে
এসেছিল, সে রহস্যের অবশ্য বিল্টু কিনারা করতে পারেনি। তবে সামন্তবাবু তার কয়েক
সপ্তাহ পরেই ওদের শহর ছেড়ে চলে গিয়েছিল। সামন্তদের বাড়িটা তারপর থেকে আবার বন্ধ
পড়ে রয়েছে। আর তারপর থেকে মনখারাপ করে ভ্যাবলাদা’র সঙ্গে কথা বলা বিল্টু বন্ধ করে
দিয়েছে।
----------
ছবি – শুভশ্রী দাস
No comments:
Post a Comment