
রসগোল্লা রহস্য
অঙ্কন মুখোপাধ্যায়
শখের নাম বিচিত্রবাবু।
বিচিত্রবাবুর
শখ
জেগেছে
এবার
উনি
গোয়েন্দা
হবেন, আস্ত
গোয়েন্দা।
কয়েক
মাস
আগে
কাতার
থেকে
ঘুরে
এসে
ওনার
মনে
হয়েছে
পৃথিবীতে
সব
থেকে
বেশি
ডিমান্ড
হল
গোয়েন্দাদের।
পুলিশ-টুলিশের
চেয়েও
উপরে।
ডাক্তার
ইঞ্জিনিয়ারও
একজন
গোয়েন্দার
কাছে
ফেল
মারে।
তাই
কাতার
থেকে
ফিরে
এসে
ওনার
শখ
জেগেছে
গোয়েন্দা
বনে
একটু
ডিমান্ড
কুড়িয়ে
নেওয়ার।
সুখ্যাতি
অর্জন
আর-কি।
‘বিচিত্র’ নামটার মতোই
বড়ো
বিচিত্র
উনি।
উনি
আমার
প্রতিবেশী, পাড়ার
লোক।
তবে
পাড়ার
বাকি
লোকেদের
সঙ্গে
বিচিত্রবাবুর
তেমন
মিলমিশ
নেই।
পাড়ায়
থাকেনও
না
বিশেষ, এদেশ-সেদেশ
করে
বেড়ান
উনি
প্রায়
সারা
বছর
জুড়েই।
ওনার
পায়ের
তলায়
সর্ষে।
ন’মাসে, ছ’মাসে
একবার
করে
দর্শন
দেন।
পাড়ায়
বিশেষ
না
মিশলেও
আমার
সঙ্গে
বিচিত্রবাবুর
একটা
গভীর
সম্পর্ক
গড়ে
উঠেছে,
কী
জানি
কেমন
করে
যেন! বয়সের
পার্থক্য
অনেকখানি, তবুও।
তাই
ওনার
সকল
বিচিত্র
কাণ্ডের
একমাত্র
সাক্ষী
হলাম
আমি।
আরও
ভালোভাবে
বললে
রাজসাক্ষীও
বলা
যায়
আমাকে।
এবারেও
তাই
হল, হাতের
মুঠোয়
পেয়ে
আমাকে
একেবারে
চেপে
ধরলেন
বিচিত্রবাবু
- “ভায়া, সামান্য হেল্প
লাগবে
যে
তোমার... তুমি
ছাড়া
আমি
যে
অসম্পূর্ণ, অমীমাংসিত, অসহায়, অ...”
“থাক থাক।
আর
লাগবে
না।
আমি
কী
উপায়ে
আপনাকে
সাহায্য
করতে
পারি, সেটাই
বলুন
বরং
বিচিত্রবাবু?” ওনাকে
মাঝপথে
থামিয়ে
দিয়ে
আমি
বললাম।
বিচিত্রবাবু
মানুষটি
আমার
চেয়ে
বয়সে
অনেকখানি
বড়ো
হলেও, ওনাকে
বড়ো
ভালোবাসি
আমি।
ফেরাতে
পারলাম
না
ওনাকে, “বলুন
কী
করতে
হবে
আমাকে?”
“তেমন কিছু না, শুধু...”
একটু
থামলেন
উনি।
“শুধু?”
“তোমাকে শুধু আমার
অ্যাসিস্ট্যান্ট
হতে
হবে।”
“অ্যাসিস্ট্যান্ট...! মানে?”
“মানে এই বিচিত্র
গোয়েন্দার
অ্যাসিস্ট্যান্ট।
দেখনি, পৃথিবীতে
যত
গোয়েন্দা
আছে
তাদের
কম
করে
একজন
অ্যাসিস্ট্যান্ট
থাকে।
শার্লক
হোমসের
সঙ্গে
ওয়াটসন, ব্যোমকেশ
বক্সীর
অজিত, ফেলু
মিত্তিরের
তোপসে, তেমনি
আমার
সঙ্গে
তুমি।
অ্যাসিস্ট্যান্ট
ছাড়া
একজন
গোয়েন্দা
অসম্পূর্ণ, অমীমাংসিত, অসহায়, অ...”
“থাক থাক বুঝেছি।”
“আমার তো তুমি
ছাড়া
কেউ
নেই
ভায়া।
তাই
তোমাকেই
হতে
হবে
এই
নিউ
আপ-কামিং
বিচিত্র
গোয়েন্দার
অ্যাসিস্ট্যান্ট।
অ্যাসিস্ট্যান্ট
চিত্রণ
মুখার্জি।” আবার
একটু
থেমে
বিচিত্রবাবু
বললেন, “আমি
বিচিত্র, তুমি
চিত্রণ।
তাই
আমাদের
সংস্থার
নাম
ভেবেছি, ‘বিচিত্রচিত্রণ
গোয়েন্দা
সংস্থা’।
কী
কেমন?”
বিচিত্রবাবুর বিচিত্রভবনে, অর্থাৎ
বিচিত্রবাবুর
বাড়ির
একটা
ঘরে
চেম্বার
খোলা
হল।
সাইনবোর্ড
টাঙিয়ে
দেওয়া
হল
বাড়ির
গেটে।
বড়ো
বড়ো
করে
লিখে
দেওয়া
হল
তাতে, ‘বিচিত্রচিত্রণ
গোয়েন্দা
সংস্থা’।
তার
নীচে
ছোটো
করে –
‘এখানে
সুলভে
রহস্য
উন্মোচন
করা
হয়ে
থাকে’।
একইভাবে
বিজ্ঞাপন
দেওয়া
হয়েছে
খবরের
কাগজে।
বিজ্ঞাপন
ছড়িয়ে
দেওয়া
হয়েছে
ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম
ইত্যাদি
সোশ্যাল
মিডিয়াতেও।
বিচিত্রবাবু
সারাদিন
হাতে
একটা
আতশিকাচ
নিয়ে
বসে
থাকেন
নিজের
চেম্বারে।
আর
সেই
আতশিকাচের
নীচে
মোটা
মোটা
বই।
আমি
বিচিত্রভবনে
যাই
দু-বার।
একবার
সকালে, একবার
বিকালে।
গোটা
একমাস
কেটে
গেলেও, তেমন
কোনো
কেস
আসেনি
গোয়েন্দা
বিচিত্রবাবুর
কাছে।
অবশ্য
একদম
যে
আসেনি
তা
বলা
ভুল।
পড়ার
ধীমাজেঠুর
ছেলে
পিন্টুর
খেলার
ব্যাট
হারানো
কেস, রাধা
কাকিমার
হাঁস
হারানো
কেস
ইত্যাদি
কিছু
আছে
ঝুলিতে।
তবে
জোরালো
কেস
এখনও
পর্যন্ত
আসেনি।
বিচিত্রবাবু
কিন্তু
হাল
ছাড়েননি।
আতশিকাচ
চোখে
লাগিয়ে
উনি
বলেন, “আরে
সবের
শুরুটাই
অল্প
দিয়ে
হয়।
কোনো
গোয়েন্দাই
একদিনে
বড়ো
হননি
ভায়া।
পিন্টুর
খেলার
ব্যাট, রাধা
বৌদির
হাঁসও
তেমনি।
জুতসই
কেস
এল
বলে।”
বিচিত্রবাবু কথা শেষ না করতেই
ফোনটা
বেজে
উঠল
আমার।
বিচিত্রবাবু
স্মার্টফোনের
বিষয়ে
একটু
নড়বড়ে।
আমার
নম্বরটাই
দেওয়া
হয়েছে
তাই।
“হ্যালো কে বলছেন?”
“এটা কি বিচিত্রচিত্রণ
গোয়েন্দা
সংস্থা?”
“হ্যাঁ। আপনি...?”
বিচিত্রবাবুর কথা সত্যি
হল, জুতসই
কেস
এল
শেষ
পর্যন্ত
আমাদের
হাতে।
ফোনের
ওদিক
থেকে
একটি
বৃদ্ধের
কাঁপা
কাঁপা
কণ্ঠস্বর
ভেসে
উঠল, “সর্বনাশ
কাণ্ড! আমাকে
বাঁচান
আপনারা।”
তারপর কালবিলম্ব না করে বিচিত্রবাবু
আর
আমি
সেই
বৃদ্ধের
বলে
দেওয়া
ঠিকানায়
গিয়ে
হাজির
হলাম
পরের
দিন
বিকালে।
মেন রোড থেকে
কিছুটা
ঢুকে
গিয়ে
রাস্তার
উপর
দোতলা
বাড়ি।
কলিং
বেল
বাজানোর
বেশ
কিছুক্ষণ
পরে
একজন
মহিলা
এসে
দাঁড়ালেন, “কাকে
চান
আপনারা?”
“আমি বিচিত্র গোয়েন্দা
আর
ও
আমার
সহকারী
চিত্রণ
মুখার্জি।” বিচিত্রবাবু
আগবাড়িয়ে
নিজের
গোয়েন্দা
পরিচয়টা
প্রথমে
দিলেন।
“গোয়েন্দা...!” মহিলা
খুব
বিস্মিত
হয়ছেন
বোঝা
গেল, “এ
বাড়িতে
গোয়েন্দা? কিছু
কি
হয়েছে?”
“হয়েছে মানে... অনাদিবাবু
এখানেই
থাকেন
তো?”
আমি
জিজ্ঞেস
করলাম
এইবার।
“হ্যাঁ, উনি এখানেই
থাকেন।”
“উনিই আমাদের ফোন করে আসতে
বলেছেন।”
“ও আচ্ছা।
ওই
বাম
দিকের
সিঁড়ি
দিয়ে
উপরে
উঠে
যান।
উপরেই
থাকেন
উনি।” তারপর
আবার
কী
মনে
হতে
মহিলাটি
নিজেই
আমাদের
নিয়ে
গেলেন
অনাদিবাবুর
ঘরে।
“কাকাবাবু। এনারা
আপনার
সঙ্গে
দেখা
করতে
এসেছেন।”
বৃদ্ধ হাড়ে অনাদিবাবু
ডামবেল
নিয়ে
কসরত
করছিলেন।
ভ্রু
কুঁচকে
তাকালেন, “আপনারা?”
“বিচিত্রচিত্রণ গোয়েন্দা
সংস্থা
থেকে
আসছি...”
“ও, আসুন আসুন।”
বারান্দায় রাখা বেতের
চেয়ারে
বসে
তিনজনের
কথা
হচ্ছে।
মহিলাটি
নীচে
চলে
গেছেন
ততক্ষণে।
অনাদিবাবু
ইলেকট্রিক
কেটলিতে
চা
করে
আমাদের
দিয়েছেন।
সঙ্গে
বিস্কুট, দুটো
করে।
বিচিত্রবাবু
তখনও
চা
বিস্কুট
কিছুই
ছোঁননি।
গম্ভীর
স্বরে
বলে
উঠলেন, “এবার
কেসের
ব্যপারে
কথা
শুরু
করুন।
কী
যেন
ঘোরতর
একটা
বিপদের
কথা
বলেছিলেন
আপনি
ফোনে...?”
“আর বলবেন না।
এক
সপ্তাহ
ধরে...,”
অনাদিবাবু
হড়বড় করে
কথা
শুরু
করতেই
বিচিত্রবাবু
মানে
বিচিত্র
গোয়েন্দা
হাত
তুলে
ওনাকে
থামিয়ে
দিলেন, “না
না, শুধু
এক
সপ্তাহ
নয়।
সম্পূর্ণ
জানতে
চাই।
আপনার
জীবন, আপনার
যাপন, তারপর
আপনার
সমস্যা।
বলুন
একে
একে।”
“আমি অনাদি দেব।
মিলিটারিতে
ছিলাম
এক
সময়।
বৃদ্ধ
হলেও, চেহারা
দেখে
মালুম
পাচ্ছেন
নিশ্চয়ই।
তা
দেশসেবা
করতে
করতে
আমার
আর
সংসার
করা
হয়নি।
সারাজীবন
বর্ডারে
কাটিয়েছি।
শেষ
বেলায়
ফিরে
এলাম
আবার
নিজের
এই
পিতৃভূমিতে।
বিয়ে-থা
করিনি,
এত
বড়ো
দ্বিতলবিশিষ্ট
বাড়িতে
কে
থাকবে
ভেবে
নীচের
তলায়
ভাড়াটে
বসিয়েছি।
বাড়ি
ভাড়ার
প্রয়োজন
নেই
আমার, তবে
কথা
বলার
দুজন
লোক
হয়েছে
ভাড়া
দিয়ে।
বোঝেনই
তো,
এখন
ওই
কথা
বলার
মানুষের
বড়ো
অভাব...।”
“ওই মহিলা তাহলে
আপনার
ভাড়াটে?”
“হ্যাঁ। ও রেবা, ওর
স্বামী
আর
ছেলের
সঙ্গে
থাকে
নীচের
এক
দিকটায়।
অনেকদিন
আছে
এখানে।
আর
একজন
একবছর
হল
এসেছে।
ব্যাচেলর।
ছেলেটি
কীসব
ছবি-টবি
আঁকে।”
“আপনার রান্নাবান্না
আপনি
নিজেই
করেন?”
“না, পঞ্চম নামের
একজন
লোক
আছে।
বাকি
কাজের
সঙ্গে
আমার
দু-বেলার
রান্নাটা
করে
দেয়।
আর
এই
টুকটাক
চা-টার
জন্য
এই
ব্যবস্থা।” ইলেকট্রিক
কেটলির
দিকে
তাকিয়ে
বললেন।
অনাদিবাবু
বলতে
লাগলেন, “এই
আমার
সামান্য
জীবন
যাপন।”
“এইবার আপনার সমস্যার
কথা
বলুন,”
বিচিত্রবাবু
পাকা
গোয়েন্দাদের
মতো
পয়েন্ট
টু
পয়েন্ট
এগোচ্ছেন।
আমার
করণীয়
বলতে, হাতের
বিস্কুট
চায়ের
কাপে
সম্পূর্ণ
ডুবে
যাওয়ার
থেকে
বাঁচাতে
বাঁচাতে
সবকিছু
অবজার্ভ
করা।
অনাদি
দেব
একেবারে
শুরুতে
যে
টোনে
কথা
শুরু
করেছিলেন
সেভাবেই
আবার
বলতে
শুরু
করলেন, “এক
সপ্তাহ
ধরে
একটা
উদ্ভট
সমস্যা
শুরু
হয়েছে
আমার
জীবনে...”
“বলতে থাকুন,” বিচিত্রবাবু
আগের
থেকেও
গম্ভীর
গোয়েন্দা
এখন।
“আমার খুব প্রিয়
খাবার
হল
রসগোল্লা।
মিলিটারিতে
ছিলাম, তা
তো আগেই বলেছি।
যৌবনের
আমি
দিনে
কুড়ি-পঁচিশটা
করে
রসগোল্লা
খেতাম।
মানে
যা
কিছুই
ঘটুক
না
কেন, রসগোল্লা
আমার
চাই-ই
চাই।
এখন, এই
বয়সে
পাঁচটায়
এসে
ঠেকেছে।
প্রতিদিন
আমার
পাঁচটা
করে
রসগোল্লা
লাগে।
সাদা
রসগোল্লাই
সারা
বছর
জুড়ে
চলে।
শীতের
দিকে
কিন্তু
নলেন
গুড়ের
রসগোল্ল
মাস্ট।”
আমি কিছুই বুঝতে
পারছি
না
অনাদিবাবু
ঠিক
কী
বলতে
চাইছেন! রসগোল্লতে
আবার
কী
রহস্য! কিন্তু
বিচিত্রবাবুর
দিকে
তাকিয়ে
দেখলাম
এক
মনে
শুনে
যাচ্ছেন
অনাদিবাবুর
কথাগুলো।
“বলতে পারেন রসগোল্লা
আমার
একটা
নেশার
বস্তু।
বাকিরা
যেমন
বিভিন্ন
নেশা
করে, আমার
তেমনি
রসগোল্লা।
সকালে
ঘুম
থেকে
উঠি
রসগোল্লার
রসে
কুলকুচি
করে।
তারপর
একটা
রসগোল্লা
খাই।
জলখাবারে
একটা।
দুপুরে
খাওয়ার
পর
আবার
একটা।
তারপর
আবার
বিকেল
পাঁচটায়
একটা।
আর
শেষে
একেবারে
রাতে
শোবার
আগে।
ওই
একটা।
মোট
পাঁচবার, পাঁচটা।”
একটু থেমে অনাদি
দেব
চায়ে
চুমুক
দিলেন, “কিন্তু
গত
সপ্তাহ
থেকে
সমস্যা
শুরু
হয়েছে।”
ওইভাবে মুড়ি-মুড়কির
মতো
রসগোল্লা
খেলে
সমস্যা
তো
হবেই
বাবা।
মনের
কথা
মুখে
নিলাম
না।
কারণ, বিচিত্রবাবুর
থেকেই
পাঠ
নিয়ে
জেনেছি, গোয়েন্দার
অ্যাসিস্ট্যান্টদের কিছু
প্রোটোকল
মেনে
চলতে
হয়।
সব
জায়গায়
সব
বলতে
নেই।
“গত সপ্তাহের মঙ্গলবার
ছিল।
সেদিন
প্রথম
শুরু
হয়
সমস্যা।
সকালে, জলখাবারে, দুপুরে
এমনকি
বিকেলে
পর্যন্ত
সব
কিছু
ঠিক
ছিল।
কিন্তু...”
“কিন্তু কী অনাদিবাবু?”
বিচিত্রবাবু
সরু
চোখে
তাকালেন
অনাদি
দেবের
দিকে।
অনাদি
দেব
করুণ
গলায়
বললেন, “রাতে
খাওয়ার
রসগোল্লাটা
নিতে
গিয়ে
আর
পাওয়া
গেল
না।
মানে
পাঁচ
নম্বর
রসগোল্লাটা
হঠাৎ
উধাও।”
“তারপর থেকেই প্রতিদিন
ওই
শেষ
পঞ্চম
রসগোল্লাটা
উধাও
হয়ে
যাচ্ছে।
তাই
তো
অনাদিবাবু?”
বিচিত্রবাবু
যেন
অনাদি
দেবের
মুখ
থেকে
কথাগুলো
ছোঁ
মেরে
নিয়ে
বলে
দিলেন!
“হ্যাঁ, একদমই তাই।
কিন্তু
আপনি
জানলেন
কীভাবে!”
অনাদি
দেব
বিচিত্রবাবুর
এই
অনুমানে
অভিভূত
হয়ে
উঠলেন, “আমার
এই
পঞ্চম
রসগোল্লাটা
রোজ
রোজ
আমাকে
ফাঁকি
দিয়ে
কোথায়
যাচ্ছে
সে
রহস্যের
সমাধান
আপনাকে
করতে
হবে
গোয়েন্দাবাবু।
এর
জন্য
যা
বলবেন, আমি
সেই
মূল্য
দিতে
প্রস্তুত।
শুধু
ওই
পাঁচ
নম্বর
রসগোল্লার
খোঁজ
আমার
চাই।”
গালে হাত দিয়ে
অনেকক্ষণ
ভেবে
বিচিত্রবাবু
জানতে
চাইলেন, “আচ্ছা,
আপনার
সেই
সাধের
পঞ্চরত্ন, মানে
রসগোল্লাগুলো
রাখেন
কোথায়? ফ্রিজে?”
“আপনি একেবারে ঠিক বলেছেন
গোয়েন্দাবাবু।
মনে
হচ্ছে
আপনি
পারবেন
রসগোল্লা
রহস্যের
সমাধান
করতে।
আমার
কাছে
রসগোল্লা
যে কোনো
মূল্যবান
রত্নের
থেকেও
দামি।
জীবনে
কত
রসগোল্লা
যে
খেয়েছি
তার
হিসেব
নেই।
রসগোল্লা
আমার
কাছে
অতি
মূল্যবান
একটি
বস্তু।
আর
দামি
বলেই
স্বাদ
খারাপ
করি না
ফ্রিজে
রেখে।
খাঁটি
স্বাদ
ছাড়া
আমি
নিতে
পারি
না।
তাই
রাখার
একটা
বিশেষ
ব্যবস্থা
আছে।
চলুন
দেখাচ্ছি।”
অনাদি দেবের পিছু
পিছু
আমি
আর
বিচিত্রবাবু
চললাম।
অনাদি
দেবের
বাড়িটা
পুরোনো
দিনের।
বড়ো
বড়ো
জানলা
দরজা।
মোটা
মোটা
পিলার।
লম্বা
বারান্দা
পেরিয়ে
যে
ঘরে
প্রবেশ
করলাম
আমরা, সেটা
অনাদি
দেবের
বেডরুম, মানে
শোবার
ঘর।
একটা
বড়ো
পালঙ্ক।
দুটো
আলমারি, একটা
দেয়াল
আলমারি
আর
একটা
পালঙ্কের
পাশে
রাখা।
সেই
আলমারির
সামনে
একটা
কাঠের
টুল।
আর
আসবাব
বলতে
দক্ষিণ
জানালার
কাছে
একটা
ইজি
চেয়ার।
“আসুন, এই হল আমার
ঘর।”
বিচিত্রবাবু বিবেকানন্দের
স্টাইলে
বুকের
কাছে
হাত
জড়ো
করে
তীক্ষ্ণ
দৃষ্টিতে
দেখে
নিচ্ছেন
ঘরের
সব কিছু।
অনাদি
দেব
এরপর
উপরের
দিকে
নির্দেশ
করে
বললেন, “ওই
যে
দেখছেন
দড়ি
ঝুলছে...”
এতক্ষণে লক্ষ করলাম
ঘরের
কড়িকাঠ
থেকে
একটা
দড়ি
ঝুলছে।
দড়ির
নীচের
দিকে
একটা
বড়ো
মাটির
হাঁড়ি
বসানো।
“এইটেই হল সেই বিশেষ
জায়গা
যেখানে
আমি
রসগোল্লা
রাখি।
আর
এখান
থেকেই
রোজ
একটা
করে
রসগোল্লা
উধাও
হচ্ছে,”
অনাদি
দেবের
গলায়
দুঃখ
ঝরে
পড়ল
আবার।
“হুম। এখন তাহলে
হিসেবমতো
ওই
হাঁড়ির
মধ্যে
দুটো
রসগোল্লা
রয়েছে।
বিকালেরটা
আর
রাত্রেরটা,”
বিচিত্রবাবু হাতের ঘড়িতে সময়টা
দেখে
নিয়ে
বললেন।
আমরা
অনাদি
দেবের
বাড়িতে
এসেছি
তিনটে
পঞ্চাশ
নাগাদ।
এখন
সাড়ে
চারটে
বাজে।
“হ্যাঁ। আমার
বিকালের
রসগোল্লাটা
এখনও
খাওয়া
হয়নি।
শরীরচর্চা
করে
ঠিক
পাঁচটায়
একটা
খাই।
দুটোই
থাকবে
ওখানে
এখন।”
“হাঁড়িটা কি একবার
দেখা
যাবে
নীচে
নামিয়ে?”
বিচিত্রবাবু
জিজ্ঞেস
করলেন।
“নিশ্চয়ই দেখা যাবে।” এরপর
অনাদি
দেব
আলমারির
সামনে
থেকে
কাঠের
টুলটা
ব্যবহার
করে
শিকে
থেকে
রসগোল্লার
হাঁড়িটা
নামিয়ে
আনলেন
ননীচোরার
ভঙ্গিতে।
তারপর
হাঁড়িটার
মুখ
থেকে
শালপাতার
আবরণটা
সরিয়ে
মেলে
ধরলেন
আমাদের
সামনে।
যা
ভেবেছিলাম
তা
নয়, ভিতরে
থাকা
বল
দুটি
রত্নই
বটে! পুরুষ্টু
কয়েদ
বেলের
সাইজের
দুটো
বিরাট
বিরাট
রসগোল্লা
হাঁড়ি
থেকে
উঁকি
দিচ্ছে।
রসগোল্লার
গতর
দেখে
আমি
জিজ্ঞেস
না
করে
থাকতে
পারলাম
না, “এ
জিনিস
কোথা
থেকে
আমদানি
হয়? মানে
এমন
সাইজের
রসগোল্লা
তো
আগে...”
“আগে দেখেননি, তাই তো?”
অনাদি
দেব
আমার
কথাটা
সম্পূর্ণ
করলেন।
আমি
মাথা
নেড়ে
সম্মতি
জানালাম।
“এ
রসগোল্লা
বিশেষ
পাকে
তৈরি
করিয়ে
নিয়ে
আসা
হয়
ময়রার
দোকান
থেকে
খাস
আমার
জন্য।
ময়রাকে
সাইজ
বলা
আছে, সে
দিনের
প্রথম
দোহন
করা
গরুর
বাঁটের
দুধ
থেকে
তৈরি
ছানা
দাঁড়িপাল্লায়
ওজন
করে, ফিতে
দিয়ে
সাইজ
মেপে
এই
রসগোল্লা
বানায়।
ভিতরে
থাকে
মোটা
করে
ক্ষীরের
পুর।
এক
পিসের
দাম
একশো
টাকা।
বুঝলে
তো, আমার
জীবনের
অন্যতম
ভালোবাসা
হল
এই
রসগোল্লা।
দীর্ঘদিনের
অভ্যাস।
ও
ব্যাপারে
আমি
একটু
খুঁতখুঁতে
স্বভাবের
বলতে
পারেন।
তাই
যখন
থেকে
এই
রসগোল্লা
উধাও
হচ্ছে, আমার
খাওয়া, ঘুম
সব
উড়ে
গেছে।
এখন
আপনিই
একটা
কিছু
সুব্যবস্থা
করুন
গোয়েন্দাবাবু।”
সমস্যাটা এইবার টের পাওয়া
যাচ্ছে
বেশ।
অনাদি
দেব
হাঁড়ি
থেকে
উপরের
রসগোল্লাটা
বের
করে
নিয়ে
হাঁড়িটা
আবার
টাঙিয়ে
দিলেন
শিকেতে।
তারপর
তিনটে
প্লেট
আর
তিনটে
চামচ
এনে
হাজির
হলেন, “দাঁড়ান, গোয়েন্দাগিরি
শুরু
করার
আগে
এ
জিনিসের
মর্মটা
একটু
বুঝে
নিন।” বিকালের
জন্য
বরাদ্দ
বিরাটাকার
রসগোল্লাটা
কেক
কাটার
মতন
করে
তিনভাগ
করে
আমাদের
দিলেন
উনি।
আমার
ভাগের
পিসটার
চেহারার
কাছে
বাজারে
চলতি
দশ
টাকার
জিরো
ফিগারের
রসগোল্লারা
দাঁড়াতে
লজ্জা
পাবে।
মুখে
পুরতেই
চোখ
বুজে
এল
আমার! এ কী
রসগোল্লা? নাকি
অমৃত! যত
চর্বণ
করছি, ততই
বুঝতে
পারছি
এত
কাল
ধরে
রাস্তাঘাটে
রসগোল্লার
নামে
যা
সব
খেয়ে
এসেছি
সেগুলো
আর
যাই
হোক
রসগোল্লা
হতে
পারে
না।
রসগোল্লা
বলে
একেই, এই
বৃহৎ
আকার
অমৃতসুধায়
পূর্ণ
শ্বেতগোলককে! এই
জিনিস
যার
দাম
একশো
টাকা, তা
উধাও
হলে
সত্যিই
গোয়েন্দা
পুলিশ
করা
উচিত।
থানা
অবধি
যাওয়া
উচিত।
অনাদি
দেবের
দুঃখটা
কোন
পর্যায়ের, তা
অনুভব
করছিলাম
রসগোল্লা
খেতে
খেতে।
তারপর ইনভেস্টিগেশন
শুরু
হল।
আমরা
ফিরে
এসেছি
বারান্দায়।
বিচিত্রবাবু
প্রশ্ন
করলেন, “আচ্ছা
আপনি
তো
একাই
এই
উপরতলায়
থাকেন।
আপনি
ছাড়া
এখানে
কে
কে
আসেন?”
“আসে বলতে আমার
ওই
রান্নার
ছেলেটিই
প্রথম
আসে।
ও-ই
ময়রার
দোকান
থেকে
হাঁড়ি
করে
পাঁচটা
রসগোল্লা
নিয়ে
আসে
সকাল
হতেই।
তারপর
কিছু
ঘরের
কাজ
আর
রান্না
করে
এগারোটার
মধ্যে
চলে
যায়।
আর
আসে
না।”
“কী নাম বললেন
ছেলেটার?”
“পঞ্চম। খুব ঠান্ডা
ছেলে।”
“কতদিন এখানে কাজ করছে?”
“আড়াই মাস হল...”
“তার আগে কে কাজ করত?”
“পঞ্চমের আগে একটি
মেয়ে
ছিল।
পদ্ম।”
“তাকে ছাড়ালেন কেন?”
“সে নিজেই ছেড়ে
দিয়ে
চলে
গেছে...,”
বলতে
বলতে
একটা
লম্বা
হাই
তুললেন
অনাদি
দেব।
“আচ্ছা। আর ভাড়াটেদের
মধ্যে
কেউ”
“রেবা আসে মাঝে মধ্যে।
তবে
খুব
কম।
পাপাই
আসে।
ওর
আসার
কোনো
ঠিক
নেই।”
“পাপাই কে?”
“ওই রেবা আর অলোকের
ছেলে।”
“আচ্ছা পাপাই কাজটা
করে
না
তো? বাচ্চা
ছেলে,
হয়তো
লোভ
থেকে?”
আমি
প্রশ্ন
করলাম
এইবার।
অনাদি দেব আমার
অনুমানটা
পুরোপুরি
নস্যাৎ
করে
দিলেন
প্রথমেই, “না
না, ওর
আসার
সময়
সকালে
ইস্কুল
থেকে
ফিরে,
আর
দুপুরে
একবার।
কিন্তু
রসগোল্লা
উধাও
হচ্ছে
বিকালের
পর।
বিকালে
পাপাই-এর
কম্পিউটার
ক্লাস
থাকে।
কম্পিউটার
ক্লাস
থেকে
ফিরতে
ফিরতে
সাতটা।
এসেই
পড়তে
বসে।
তারপর
খেয়েদেয়ে
ঘুম।
আমার
কাছে
আসার
সময়
কোথায়
দুপুরের
পর
থেকে?”
“হুম,” আমি গালে
হাত
দিয়ে
বসলাম।
রসগোল্লার
এক
পিস
খেয়েই
যেন
খুব
ক্লান্ত
হয়ে
গেছি
আমি।
ঘুম
ঘুম
ভাব
চারিদিকে।
“আপনার আর একজন
ভাড়াটে? তাকে
সন্দেহ
হয়?”
বিচিত্রবাবুই
কথা
বলে
চললেন।
“কী বলি বলুন
তো।
ছেলেটা
বড়ো
অদ্ভুত
টাইপের।”
“যেমন?”
“যেমন ধরুন ছেলেটার
নাম, বাবলো
বিকাশো।”
“বাবলো বিকাশো!”
“হ্যাঁ। কথা একদম
বলে
না।
নিজের
খেয়ালে
থাকে।
ছবি-টবি
আঁকে।
ছাদে
গিয়ে
হাঁটাহাঁটি
করে
রাত
জেগে।
তবে
হ্যাঁ
মাসের
পয়লা
তারিখ
ভাড়া
মিটিয়ে
দেয়।
খাওয়া-দাওয়ার
দিকে
ইন্টারেস্ট
আছে
বলে
তো
মনে
হয়
না।”
আমি ওখানে বসে বসেই
কখন
যেন
ঘুমিয়ে
পড়েছিলাম
খেয়াল
নেই।
খেয়াল
হল
বিচিত্রবাবুর
ডাকে, “ভায়া? ভায়া?”
“কী কী কী?”
“সব্বোনাশ হয়ে গেছে...”
“কী হয়েছে বিচিত্রবাবু?”
“রসগোল্লা উধাও...!”
“উধাও মানে?”
“উধাও মানে নেই, এই
কয়েক
ঘণ্টার
মধ্যে
রসগোল্লা
ভ্যানিশ
হয়ে
গেছে
ভায়া! ঘুমাও
তুমি
বসে
বসে...”
ওদের কথার মাঝে
আমি
একটু
ঘুমিয়ে
পড়েছিলাম, তার
মধ্যেই
হাঁড়ি
থেকে
রসগোল্লা
উধাও! বড়ো
আশ্চর্য
ঘটনা! রসগোল্লা
তো
আর
কর্পূর
নয়
যে
বাতাসে
উবে
যাবে! তাহলে?
“বিচিত্রবাবু, তাহলে?”
“পুরো আধঘণ্টা ধরে ঘুমিয়েছিলে
তুমি।”
“বলেন কী! আধঘন্টা!”
“হ্যাঁ...”
“অনাদিবাবু কোথায়?”
“ওনার ঘরে।
চলো, দেখবে
চলো...।”
“এইবার দেখলেন তো কী বিপদে
আছি
আমি,”
সেই
দুঃখজড়িত
কণ্ঠে
বলে
উঠলেন
অনাদি
দেব।
তার
হাতে
রসগোল্লার
শূন্য
হাঁড়ি।
“অনাদিবাবু, আমি আপনার
বাড়ির
সবার
সঙ্গে
আলাদাভাবে
কথা
বলতে
চাই।”
“সবাই বলতে তো দু-ঘর
ভাড়াটে
আর
কাজের
ছেলে
পঞ্চম।”
“হ্যাঁ, ওদের সঙ্গেই
কথা
বলতে
চাই।
ইনভেস্টিগেশনের
জন্য
এটা
খুব
প্রয়োজন।”
“ব্যস। আপনার
যেমন
ইচ্ছে।
তবে
দেখবেন, সবাই
তো
ভদ্রলোক
আর
আমি
ওদের
ভাড়াটে
হিসেবেও
দেখি
না...”
“চিন্তা করবেন না আপনি
সেই
সব
নিয়ে।”
বিচিত্রবাবু আর আমি নীচে
নেমে
এলাম
চিন্তিতভাবে।
অনাদি
দেব
সঙ্গে
এলেন।
প্রথমে
রেবা
আর
অলোকবাবুদের
ঘরে
নিয়ে
গেলেন
আমাদের।
অলোকবাবু
সবে
ফিরেছেন
ওনার
অফিস
থেকে।
“কী ব্যাপার বলুন
তো?”
অলোকবাবু
জিজ্ঞেস
করলেন
নিজে
থেকেই।
রেবাদেবী
সম্ভবত
গোয়েন্দা
আসার
বিষয়টা
আগেই
স্বামীকে
জানিয়েছেন।
“আমি কয়েকটা প্রশ্ন
করব
শুধু
আপনাদের।”
“কী প্রশ্ন?”
“আপনি কীসে কাজ করেন?”
“সরকারি অফিসের কেরানি।
ছেলে
বউ
নিয়ে
এই
ভাড়া
বাড়িতে
রয়েছি
তা
বছর
দশেক
তো
হলই...”
“আগে থাকতেন কোথায়?”
“মালদা। এখানে
কর্মসূত্রে
আসা।
তাছাড়া
ছেলের
পড়াশোনা।”
“কোন ক্লাস আপনার
ছেলের?”
“এইট হচ্ছে।”
“আপনাদের চায়ে চিনি
দেব?”
রেবাদেবী
চা
করে
আনলেন
আমাদের
জন্য।
“চিনি ছাড়া আবার
চা
হয়
নাকি।
সে তো
নিমপাতার
রস,”
বিচিত্রবাবু
বলে
উঠলেন
রেবাদেবীর
প্রশ্নে।
“আমরা কিন্তু ওই নিমপাতার
রসই
খাই।
হাই
সুগার
আমাদের
স্বামী, স্ত্রীর।” বলতে
বলতে
আমাদের
কাপে
পরিমাণমতো
চিনি
মিশিয়ে
দিলেন
রেবাদেবী।
বিচিত্রবাবু
আমার
দিকে
তাকালেন।
আমি
ঘরটা
দেখলাম।
টিভি, ফ্রিজ, এসি
সহ
নিত্যপ্রয়োজনীয়
সবকিছুই
এখানে
মজুত।
রসগোল্লা
চুরি
করার
প্রয়োজন
এখানে
কতটা?
“আর কিছু জিজ্ঞেস
করবেন?”
অনাদি
দেব
ফিসফিস
করে
উঠলেন
বিচিত্রবাবুর
কানে।
এরপর আমরা গেলাম
দ্বিতীয়
ভাড়াটের
ঘরে।
রেবাদেবীদের
ঘর
ছেড়ে
বেরিয়ে
আসার
সময়
পাপাই-এর
সঙ্গে
চোখাচোখি
হল
একবার।
দরজার
আড়াল
থেকে
ছেলেটা
আমাদের
লক্ষ
করছিল।
আমাদের
কথা
শুনছিল
আড়ি
পেতে।
কিন্তু
কেন?
“আপনার নাম?” বিচিত্রবাবু
সামনে
বসে
থাকা
ছেলেটাকে
জিজ্ঞেস
করল।
ঘর
জুড়ে
অসংখ্য
পেইন্টিং।
কোথাও
সাদা
কালো, কোথাও
রঙের
মেলা।
ছেলেটার
সারা
হাতেও
রং।
মাথা
ভর্তি
ঝাঁকড়া
চুল।
চোখে
মোটা
ফ্রেমের
চশমা।
“বাবলো বিকাশো।”
“আপনি বাঙালি?”
“এনি ডাউট?”
“আপনার নামটা...?”
“আমার গুরু বিখ্যাত
স্পেনীয়
চিত্রশিল্পী
পাবলো
পিকাসোর
অনুকরণে।
আমার
ডাকনাম
ছিল
বাবলা, আর
অফিসিয়াল
নাম
বিকাশ।
সেই
দুটোই
মিক্সিং
করে
নামটা
তৈরি।
আমি
নিজেই
নিজের
নামকরণ
করেছি।”
“ইন্টারেস্টিং।”
“শিল্পীরা এমন ইন্টারেস্টিং-ই
হয়।
বাই
দ্য
ওয়ে, আপনারা?”
“গোয়েন্দা...”
“রিয়েলি? ওয়াও।”
“আমি বিচিত্র গোয়েন্দা
আর
ও
আমার
সহকারী
চিত্রণ।”
“আমার কাছে কী মনে করে?”
“আপনি রসগোল্লা খান?”
“হোয়াট...!”
ছেলেটার যে এইসব
খাওয়ার
বিষয়ে
তেমন
আগ্রহ
নেই
তা
বুঝতে
পেরেই
আর
বেশি
সময়
নষ্ট
করলাম
না
ওখানে
বসে।
ফিরে
এলাম
অনাদি
দেবের
দোতলার
বারান্দায়।
“কিছু বুঝতে পারলেন?”
“কী বুঝতে পারলাম
আর
কী
বুঝতে
পারলাম
না
তা
সময়
হলে
জানতে
পারবেন
অনাদিবাবু। এখন আর বাকি
রইল
আপনার
কাজের
ছেলেটি।
কী
নাম
যেন?”
“পঞ্চম।”
“হ্যাঁ। ওকে কোথায়
পাব?”
“আজ তো আর পাচ্ছেন
না
ওকে।
আবার
কাল
সকালে
একেবারে
রসগোল্লা
নিয়ে
আসবে।”
“আচ্ছা, একটা কথা।
পঞ্চম
যখন
রসগোল্লা
আনে, আপনি
গুনে
দেখে
নেন
তো?”
“হ্যাঁ, আমার চোখের
সামনে
ও
গুনে
গুনে
পাঁচটা
রসগোল্লা
হাঁড়িতে
রেখে
আমার
ঘরের
দড়িতে
ঝুলিয়ে
দেয়।
তারপর
কাজ
শুরু
করে।”
অনেকটা রাত হয়ে
গেছে।
ফিরতে
হবে
আমাদের।
বিচিত্রবাবু
ঘড়ি
দেখলেন।
“তাহলে
কাল
সকালেই
একেবারে
আসব
না হয়।
আর
যাওয়ার
আগে
আর
একবার
আপনার
ঘরটা
দেখে
আসি।
বেড়াল-টেড়াল
আছে
কিনা।”
“আপনি যেমন ভালো
বুঝবেন।
তবে
বেড়াল
এই
দোতলায়
নেই।
তার
উপর
ওই
শিকের
উপর
হাঁড়ি।”
একটা ওলা বুক করে ফিরছি
আমি
আর
বিচিত্রবাবু।
“এই সব গোয়েন্দাগিরি-টোয়েন্দাগিরিতে
নামা
আপনার
ঠিক
হয়নি
বিচিত্রবাবু।
এসব
বড়ো
জটিল
ব্যাপার-স্যাপার।”
আমাকে পাত্তা না দিয়ে
বিচিত্রবাবু
বললেন, “আচ্ছা
ভায়া, আমাকে
একটা
কথা
বলবে?”
“কী?”
“ভূতে রসগোল্লা খায়?”
“ভূত...! এর মধ্যে
আপনি
ভূত
দেখছেন? আশ্চর্য!”
“না মানে কৌতুক
আর-কি।
খায়? তোমার
জানা
আছে?”
“না, জানা নেই।”
“জানা যখন নেই তখন একটু
জেনে
নিও
তো
কালকের
মধ্যে।” পকেট
থেকে
প্লাস্টিকে
মোড়ানো
রসগোল্লার
টুকরো
আমার
হাতে
দিলেন
বিচিত্রবাবু, “ল্যাব
থেকে
রিপোর্ট
করে
জেনে
নিও
ভূতে
রসগোল্লা
খায়
কিনা।
নিজে
দাঁড়িয়ে
রিপোর্ট
করবে, আজকের
মধ্যে।”
“বিচিত্রবাবু, এর মধ্যে
এত
কিছু
করেছেন
আপনি!”
“ভায়া।” এক গাল হেসে
উঠলেন
উনি।
পরদিন সাতসকালে আমরা
আবার
গিয়ে
হাজির
হলাম
অনাদি
দেবের
বাড়ি।
তবে
প্রথমেই
বাড়িতে
না
ঢুকে
বাইরে
অপেক্ষা
করতে
লাগলাম।
অপেক্ষা
সেই
পঞ্চম
নামের
কাজের
লোকটির।
রাস্তার
একপাশে
চায়ের
দোকানে
দু-কাপ
করে
চা
ইতিমধ্যে
খাওয়া
হয়ে
গেছে
আমাদের।
হঠাৎ
চোখে
পড়ল
মিষ্টির
হাঁড়ি
হাতে
নিয়ে
একজন
বছর
ছত্রিশের
লোককে
হেঁটে
হেঁটে
আসতে।
অনাদি
দেবের
বাড়িতে
না
ঢুকে
সে
এল
চায়ের
দোকানে।
আমরা
নিজেদের
আড়াল
করেছি
খবরের
কাগজের
পাতায়।
“বিরুদা, একটা বিড়ি।”
“কাল বিকালের টাকাটা
বাকি
আছে
পঞ্চম।”
“দেব দেব, এত তাড়া
কীসের।
আমি
পালাচ্ছি
নাকি।
আগুনটা
দাও।”
আমরা নিশ্চিত হলাম, এই
সেই।
দড়িতে
বাঁধা
লাইটার
জ্বালিয়ে
বিড়ি
ধরিয়ে
চলে
গেল
পঞ্চম।
“টাকাটা...?” দোকানি
ডেকে
উঠল।
“ওঃ, টাকা টাকা করে মরলে
তুমি
বিরুদা।
কত
হয়েছে? আজকের
মালটা
দাও।
আর
বিকালে
তো
আসছি, তখন
পাবে
টাকা।”
দোকানি একটা সাদা
কাগজ
দিল
ওকে।
পঞ্চম
চলে
গেল
অনাদি
দেবের
বাড়িতে।
কোনো
অস্বাভাবিকতার
লক্ষণ
ওর
মধ্যে
পাওয়া
গেল
না।
আরও
কিছুক্ষণ
বসে
থেকে
বিচিত্রবাবু
বললেন, “চলো
ফেরা
যাক।”
“ফেরা যাক মানে? যাবেন
না
অনাদি
দেবের
বাড়িতে
পঞ্চমকে
জেরা
করতে?”
“জেরাটা বিকালেই করব একবারে।
মিষ্টির
রিপোর্ট
পেয়েছ?”
“কাল রাত হয়ে
যাওয়ায়
আর
হয়নি, আজ
পেয়ে
যাব।”
চমকে যাওয়ার মতন রিপোর্ট
হাতে
এল
আমাদের।
রসগোল্লার
টুকরো
পরীক্ষা
করে
তাতে
পাওয়া
গেল
স্লিপিং
পিল! ঘুমের
ওষুধ!
“বিচিত্রবাবু...! তার মানে
সত্যি
রসগোল্লায়
রহস্য
আছে!”
“হ্যাঁ আছে।
ভায়া
তোমার
মনে
আছে, গতকাল
বিকালে
তুমি
অনাদি
দেবের
বাড়ির
বারান্দায়
বসে
ঘুমিয়ে
পড়েছিলে?”
“হ্যাঁ মনে আছে...”
“শুধু তুমি একা ঘুমিয়ে
পড়নি
তখন।
ঘুমিয়ে
পড়েছিলাম
আমরা
তিনজনেই।
তুমি, আমি
আর
অনাদি
দেব।
আর
কেন
ওই
অসময়ে
ঘুমিয়ে
ছিলাম
বল তো?”
“ঘুমের ওষুধ মেশানো
রসগোল্লা
খেয়ে...?”
“ঠিক তাই।”
“এবার তাহলে কী করবেন
আপনি?”
“ঘুম দিয়েই যে খেলা
শুরু, ঘুম
দিয়েই
তার
সমাধান
হবে।
বিকাল
ঠিক
পাঁচটার
আগে
আমরা
যাচ্ছি
অনাদি
দেবের
বাড়িতে।”
অনাদি দেব আগের
দিনের
মতোই
বুড়ো
হাড়ে
কসরত
করছিলেন।
আমাদের
দেখে
বলে
উঠলেন, “হল
রহস্যের
সমাধান?”
“এখনও হয়নি।
তবে
হবে।”
“আজকেই হবে?” খুব উত্তেজিত
লাগছে
অনাদি
দেবকে।
“দেখা যাক, যদি বেড়াল-টেড়াল
আসে।”
“বলেছিলাম না, এই দোতলায়
বেড়াল
ওঠে
না।”
“ওঠে ওঠে, আপনি
ঘুমিয়ে
থাকলে
কীভাবে
জানবেন।”
“মানে?”
“মানে জানতে হলে আপনাকে
ঘুমাতে
হবে।”
“কী হেঁয়ালি করছেন
বলুন
তো
আপনি? কিছু
যে
বুঝতে
পারছি
না!”
“বুঝবেন সময়মতো।” বিচিত্রবাবু
খানিক
চুপ
করে
হাতের
ঘড়ি
দেখে
আবার
বললেন, “পাঁচটা
বাজে।
আপনার
রসগোল্লা
খাওয়ার
টাইম
হল
যে।”
অনাদি দেব ঘরের
দিকে
যাচ্ছিলেন
রসগোল্লা
আনতে।
বিচিত্রবাবু
তাকে
থামিয়ে
বলে
উঠলেন, “শুনুন?”
“কী হল?”
“রসগোল্লা খাওয়ার আগে একটু
ঘুমিয়ে
নিলে
কেমন
হয়?”
“কী বলছেন বলুন
তো
তখন
থেকে?”
“বলছি আজ রসগোল্লাটা
খাবেন
না।
ওটা
যেমন
আছে
থাক।
আপনি
বরং
এখানে
এই
সোফাতে
বসুন।” অনাদি
দেবের
হাত
ধরে
বসিয়ে
দিলেন
বিচিত্রবাবু।
“ভায়া তুমিও বসো।”
আমিও বসলাম বিচিত্রবাবুর
কথামতো।
শেষে
বসলেন
বিচিত্রবাবু
নিজে।
কী
করতে
চাইছেন
উনি
কিছুই
বুঝতে
পারছি
না, “এবার
কী
হবে
বিচিত্রবাবু?”
“এবার, চোখ বন্ধ
করে
শুয়ে
থাকুন
ঘুমের
ভান
করে।”
“ঘুমের ভান করে মানে?”
অনাদি
দেব
আমার
থেকেও
বেশি
কৌতূহলী
হয়ে
উঠেছেন।
“আপনি এত মানে
মানে
করেন
কেন
বলুন
তো
অনাদিবাবু? আপনি
তো
রহস্যের
সমাধান
চান, নাকি?”
“হ্যাঁ চাই তো।”
“তাহলে যা বলছি
করুন
এখন।
ভালো
ছেলের
মতো
ঘুমিয়ে
পড়ুন।”
আমরা তিনজনে চোখ বন্ধ
করে
শুয়ে
রইলাম।
সময়
কাটতে
লাগল
একটু
করে।
“বিচিত্রবাবু, এভাবে
আর
কতক্ষণ?”
“উঁহু কথা নয়।
একদম
চুপ।” ফিসফিস
করে
বললেন
উনি।
আরও মিনিটখানেক পর হঠাৎ
একটা
শব্দ
কানে
এল।
গেট
ঠেলে
এগিয়ে
আসা
পায়ের
শব্দ।
“ওই বেড়াল আসছে।
সাবধান।”
আমরা আগের মতনই
শুয়ে
রইলাম।
পায়ের
শব্দটা
আমাদের
কাছে
এসে
দাঁড়াল।
চোখ
বন্ধ
অবস্থায়
বুক
দুরুদুরু
করতে
শুরু
করেছে
বুঝলাম।
তারপর
পায়ের
শব্দ
আমাদের
পেরিয়ে
চলে
গেল
অনাদি
দেবের
ঘরের
দিকে।
একটা
কাঠের
টুল
সরানোর
শব্দ
হল
তারপর।
বিচিত্রবাবু আমাকে আর অনাদি
দেবকে
এইসময়
ডেকে
নিয়ে
গেলেন
অনাদি
দেবের
ঘরে।
“ওই
আপনার
বেড়াল
অনাদিবাবু।”
“পঞ্চম তুমি?”
শিকের হাঁড়িতে হাত রেখে
টুলের
উপর
দাঁড়িয়ে
আছে
পঞ্চম
নামের
লোকটা।
“আপনার মনে আছে, গতকাল
এখানে
বসেই
ঘুমিয়ে
পড়েছিলেন
আপনি
কথা
বলতে
বলতে?”
“হ্যাঁ মনে আছে।”
“শুধু আপনি একা ঘুমিয়ে
পড়েননি।
ঘুমিয়ে
পড়েছিলাম
আমরা
তিন
জনেই।
প্রায়
আধঘণ্টা
মতো
ঘুমিয়েছিলাম
আমরা
এখানে
বসেই।”
“বলেন কী?” অনাদি
দেব
বলে
উঠলেন।
“আর ঘুমিয়েছিলাম
আপনার
দেওয়া
ওই
চার
নম্বর
রসগোল্লাটা
খেয়েই।
আমার
ধারণা
কেউ
ওই
চার
নম্বর
রসগোল্লায়
ঘুমের
ওষুধ
মিশিয়ে
দিয়েছিল।
দিয়েছিল
কেন
বলছি, রোজ
দেয়।
আপনি
সেই
ঘুমের
ওষুধ
মেশানো
রসগোল্লা
খেয়ে
ঘুমিয়ে
পড়লে, সে
পাঁচ
নম্বর
রসগোল্লাটা
নিয়ে
যায়
সু্যোগ
বুঝে।
কিন্তু
কে
বুঝতে
পারিনি।
আজ
চায়ের
দোকানের
দোকানদারের
কাছে
শুনলাম
পঞ্চম
কাল
বিকেলে
এখানে
আসে।
আমার
ধারণা
যদি
সত্যি
হয়, তাহলে
পঞ্চম
রয়েছেন
গোটা
রসগোল্লা
রহস্যের
মূলে।
কী
পঞ্চম?”
“কিচ্ছু করোনি তুমি? ভায়া
যাও তো
রসগোল্লার
হাঁড়িটা
অনাদিবাবুর
ঘর
থেকে
নিয়ে
এসো
তো
একবার।”
আমি তাই করলাম।
মিষ্টির
হাঁড়িটা
নামিয়ে
এনে
বিচিত্রবাবুর
হাতে
দিলাম।
এখন
হাঁড়ি
ভর্তি
পাঁচটা
রসগোল্লা।
বিচিত্রবাবু
একটা
করে
বের
করে
আনলেন।
উপরে
একটা।
তার
নীচে
দুটো।
তার
তলায়
একটা
আর
একদম
হাঁড়ির
নীচে
আরও
একটা।
“এই চার নম্বর
রসগোল্লাতে
ঘুমের
ওষুধ
মেশানো
আছে।
পঞ্চম
নাও, সবার
সামনে
তুমি
খাও
এটা।”
পঞ্চম আর কিছু
না
বলে, গিয়ে
পড়ল
অনাদি
দেবের
পায়ের
কাছে, “আমাকে
ক্ষমা
করে
দিন
বাবু।
খুব
ভুল
করে
ফেলেছি।”
“পঞ্চম তুমি!”
“আমার ছেলে রসগোল্লা
খেতে
বড়ো
ভালোবাসে
বাবু।
কিন্তু
আমি
গরিব
খেটে
খাওয়া
মানুষ।
কোথা
থেকে
রোজ
পাব
বলুন
রসগোল্লা।
ছেলে
মেয়ে
বউ-এর
খাওয়া
জোটাতেই
হিমসিম
খেতে
হয়
আমাকে।
তার
উপর
রসগোল্লা।
ওগুলো
আমাদের
মতো
গরিব
ঘরে
রোজ
খাওয়া
মানে
বিলাসিতা, হাতে
চাঁদ
পাওয়া।
একদিন
আমার
কাছে
আপনার
রসগোল্লা
খাওয়ার
গল্প
শুনেছিল
ওরা।
তারপর
থেকে
ছেলের
বায়না
ওই
বড়ো
রসগোল্লা
খাবে।
তাই
প্ল্যান
করে...। আপনি বিকালের রসগোল্লা
খেয়ে
ঘুমিয়ে
পড়লে
আমি
নিশ্চিন্তে
একটা
রসগোল্লা
নিয়ে
চলে
যাই।
ভাবলাম
আপনি
তো
সবগুলো
খান, আমরা
একটা
না
হয়
চার
ভাগ
করে
খাব।
ছেলেমেয়ে
দুটো
তো
খুশি
হবে...”
“আমাকে একবার বলতে
পারতে।
বললে
কি
আমি
দিতাম
না?
তাই
বলে
এইভাবে
ঘুমের
ওষুধ
মিশিয়ে
চুরি
করবে?”
“অন্যায় করে ফেলেছি
বাবু।
খুব
অন্যায়
করে
ফেলেছি।”
“গতকাল আপনার দেওয়া
রসগোল্লার
টুকরো
পরীক্ষা
করা
হয়েছে।
তাতে
স্লিপিং
পিলের
স্যাম্পেল
পাওয়া
গেছে।
আর
একটা
জিনিস, গতকাল
আপনার
বাড়ি
থেকে
বেরোনোর
সময়
বাইরের
গেটে
রসগোল্লার
রস
পড়েছিল।
বোধহয়
চুরি
করে
নিয়ে
যাওয়ার
সময়
পঞ্চম
ভাইয়ের
কাছ
থেকেই
পড়েছিল।
আর
পড়বি
তো
পড়
আমার
জুতোর
উপর।
সারা
রাস্তা
চ্যাট
চ্যাট
চ্যাট
চ্যাট।
তখনই
মনে
হয়েছিল
ভূত
এবাড়ির
বাইরে
থেকে
এসেছে।
আর
আপনার
ভাড়াটেরা
কেউ
মিষ্টি
ভক্ত
নন।
রেবাদেবীরা
ঘোরতর
মিষ্টি
বিরোধী।
হাই
সুগার।
আর
বাবলো
বিকাশো
ছবি
ছাড়া
বোঝেন
না।
এক
সন্দেহ
হয়েছিল
ওই
পাপাই-এর
উপর।
বাচ্চা
ছেলে, হয়তো
লোভে
পড়ে... কিন্তু
অত
উপরে
ঝোলানো
মিষ্টির
হাঁড়ি
থেকে
রসগোল্লা
বের
করে
খেতে
গেলে
আপনার
কাছে
কোনো
বার
না
কোনো
বার
ধরা
পড়তই...। আর রিপোর্টে ঘুমের
ওষুধের
বিষয়ে
জানতে
পারার
পর
বুঝতে
পারলাম, ওটা
কোনো
বাচ্চা
ছেলের
কাজ
নয়।
বড়ো
মাথার
প্ল্যান।
আমি
চায়ের
দোকানের
দোকানদারের
কাছে
শুনে
অনুমান
করেছিলাম
মাত্র।
আর
আজ
ঘুমের
ভান
করে
শুয়ে
থাকতেই
পঞ্চম
ভাই
প্রতিদিনের
মতো
আজও
এসে
ধরা
দিল
ফাঁদে।”
“ঘুমের ওষুধ কি সবগুলোতেই...?”
“না, শুধু চার নম্বর
রসগোল্লাতে।
সবগুলোতে
হলে
আপনি
সারাদিন
ঘুমোতেন।
তাতে
সন্দেহ
হতে
পারত।”
বাড়ি ফিরে এলাম
অনাদি
দেবের
দেওয়া
এক
ভাঁড়
বিশুদ্ধ
রসগোল্লা
হাতে
ঝুলিয়ে।
রসগোল্লা
রহস্যের
সমাধান
হয়েছে।
আশ্চর্য
একটা
ঘটনা
আমার
জীবনের।
কেউ
এইভাবে
রসগোল্লা চুরি
করতে
পারে! পৃথিবীতে
কত
আশ্চর্যই
ঘটে।
কিন্তু
বিচিত্রবাবু
কেমন
যেন
মনমরা।
“কী হয়েছে বিচিত্রবাবু? রসগোল্লা
রহস্যের
কেস
তো
সল্ভড।
প্রথম
কেসেই
বাজিমাত।”
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে
উনি
বললেন, “না,
পঞ্চমের
কথা
ভাবছি।
এখনও
এই
স্বাধীন
দেশের
মানুষ
খাওয়ার
জন্য
কত
অসহায়।
নিজের
ছেলেমেয়েকে
খাওয়াতে
চুরি
করতে
হয়।
আসলে
আমাদের
সব
লড়াই
তো
শুরু
হয়
ওই
খাওয়া
দিয়েই, তাই
না?”
হাসি দিয়ে শুরু
হলেও
পঞ্চমের
কথা
ভেবে
মনটা
বিষাদে
ভরে
গেল
আমারও!
“কিছু রহস্যের সমাধান
না
হলেই
বোধহয়
ভালো
হয়
এই
দুনিয়ায়।
অসহায়
মানুষের
সুখদুঃখগুলোই
এক
একটা
রহস্য
যেখানে, সেখানে
গোয়েন্দাগিরি
করা
মানে
দশ
বাজারে
দুঃখ
বেচা।
তাই
ভাবছি
গোয়েন্দাগিরি
আর
করব
না।” বিচিত্রবাবুই
কথা
শেষ
করলেন।
----------
ছবি - শ্রীময়ী

খুব ভালো লাগলো। অসাধারণ।
ReplyDelete