
হাবাগোবা ও
ঘোড়ার
ডিম
অর্ণব ভট্টাচার্য্য
(১)
হট্টপুর থেকে মুক্তোনগরী
ছাড়িয়ে
আরও
উত্তরে
ক্ষীরসাগর
পেরিয়ে, পক্ষীরাজ
ঘোড়ায়
চেপে
দু’ঘন্টা
মতো
উড়ে, পাঁচবার
ডিগবাজি
আর
দশবার
গড়াগড়ি
দিলেই
প্রথম
যে
রাজ্যটা
চোখে
পড়বে
তার
নাম
হল, খাম্বাজপুর।
এই
খাম্বাজপুরের
রাজা
হলেন
শ্রী
বীর
বিক্রম
বাহাদুর
হাঁড়িচাচা
রায়।
রাজার
গোয়াল
ভরা
গরু, হাতিশালে
হাতি, ঘোড়াশালে
ইউনিকর্ন
আর
খাঁচাভর্তি
পক্ষীরাজ।
সেই
দেশে
সবার
মনে
শুধু
আনন্দ
আর
ফুর্তি, তাদের
চাষের
জমিতে
সোনার
ধান
ফলে
আর
পুকুরে
রুপোলি
মাছ।
সে
রাজ্যে
হিরে
জহরত, মণি
মাণিক্য, এত
পাওয়া
যায়
যে
লোকে
পাত্তাই
দেয়
না।
তারা
ভালোবাসে
গাছকে।
যার
যত
ভালো
মন
এবং
যার
বাড়িতে
যত
বেশি
গাছ, তারাই
সেই
রাজ্যের
সবথেকে
বড়োলোক
মানুষ।
কিন্তু
কিছুদিন
ধরেই
হাঁড়িচাচা
রায়ের
মন
একদম
ভালো
নেই।
কেন? আসলে
তার
হঠাৎ
ইচ্ছা
হয়েছে
তার
রাজ্যে
এমন
একটা
কিছু
খুঁজে
পেতে
যা
সারা
পৃথিবীতে
আর
কোথাও
পাওয়া
যাবে
না।
কিন্তু
তার
রাজ্যে
যা
আছে
সবই
পৃথিবীর
বিভিন্ন
দেশে
অল্পবিস্তর
পাওয়াই
যায়।
তাই
সেদিন সভাসদদের
জরুরি
তলব
করলেন
মহারাজ।
তারাও
সঙ্গে
সঙ্গে
দৌড়ে, লাফিয়ে, হামাগুড়ি
দিয়ে
রাজসভায়
পৌঁছে
গেল।
রাজা
সবাইকে
দেখে
একটা
গভীর
নিঃশ্বাস
ফেলে
বললেন, “ভারী
দুঃখের
কথা।” এদিকে
আবার
রাজার
সভাসদগুলো
একেকটা
অর্কমা।
তাদের
নিজেদের
কোনো
বোধ
বুদ্ধি
নেই,
খালি
রাজার
কথায়
কথা
মেলায়।
ফলে
তারা
সবাই
সায়
দিয়ে
বলে
উঠল, “তাই
তো খুব দুঃখের কথা।”
রাজা বললেন, “আহা দুঃখের
কথাটা
কী, সেটা
তো
আগে
শোনা
দরকার।”
সবাই একসঙ্গে বলল, “হ্যাঁ, হ্যাঁ,
আগে
তো
সেটা
শোনা
দরকার।”
“হয়েছে
কি,
আমার
খুব
কান্না
পাচ্ছে।”
“ঠিক তো, কান্না
পাওয়ারই
কথা।
কী
দুঃখের
কথা, কান্না
তো
পাবেই।”
এই বলে সভাসদদের কেউ খুব কাঁদতে
লাগল।
কেউ
হাত-পা
ছড়িয়ে
বিলাপ
করতে
লাগল।
কেউ
গড়াগড়ি
দিতে
লাগল।
রাজা
এইসব
দেখে
খুব
বিরক্তি
সহকারে
বলল, “ধ্যাৎ! কেউ
আসল
কথাটাই
শুনছে
না।”
অমনি সবাই উঠে দাঁড়িয়ে
বলল, “ঠিক।
খুব
অন্যায়।”
কৃষিমন্ত্রী বললেন, “দেশটাই
তো
নকলে
ভরে
গেল, আসল
কথাটা
শুনবে
কে?”
পেছন থেকে শিক্ষামন্ত্রী
বললেন, “ঠিক
ঠিক, সব
কালার
হদ্দ।”
প্রধানমন্ত্রী বললেন, “বটেই
তো।
বলি
কথা
যদি
নাই
শুনলি, তবে
ভগবান
তোদের
কানটা
দিয়েছেন
কেন!”
রাজ জ্যোতিষী বললেন, “কথা
বলে
কথা, এ
হল
রাজার
কথা।
তোমরা
আজকালকার
ছেলেছোকরারা
তো
আর
শাস্ত্র-টাস্ত্র
পড়
না।
খালি
নভেল
আর
কাব্য
গিলবে, আর
কোটি
কোটি
তালপাতা
ওইসব
ছাঁইপাশ
লিখে
ভরাবে।
শাস্ত্রে
স্পষ্ট
লেখা
আছে, রাজার
আসল
কথা
না
শুনলে
নরকে
তাকে
সাদা
তেলে
ডিপ
ফ্রাই
করা
হয়, তারপর
যমদূতেরা
তাকে
টম্যাটো
সস
মাখিয়ে
খায়।”
এই কথায় রাজসভা
জুড়ে
ভারী
হট্টগোল
পড়ে
গেল, কেউ
বলল, “এবার
কী
হবে?”
কেউ বলল, “ওরে বাবা,
আমাকেও
সস
মাখিয়ে
খাবে?”
আবার কেউ বলল, “আর
নকল
কথা
না
শোনার
নিদান
কী
দিয়েছে
ঠাকুর?”
রাজা এবারে তেলেবেগুনে
জ্বলে
উঠলেন, “সবকটা
একেকটা
গাধা।
একেবারে
নিস্কর্মা, খালি
খায়দায়
আর
ইয়েতির
মতো
পড়ে
পড়ে
ঘুমোয়।
এতক্ষণ
ধরে
একটা
গুরুতর
কথা
বলছি, তা
নয়
ব্যাটারা
খালি
শাস্ত্র
আর
নভেল
আউড়াচ্ছেন।
এই
জল্লাদ, এদের
সবক’টাকে
একশো
বার
কানধরে
উঠবোস
করিয়ে
তারপর
পঁচিশবার
কান
মুলে
দিয়ে
বিদায়
করো।”
সকলেই এ কথায়
হাঁ
হাঁ
করে
উঠল, “মহারাজ
আমাদের
মা-বাপ।
আপনি
যে
শাস্তি
দেবেন
তা
আমরা
মাথা
পেতে
নেব।
কিন্তু
ওই
ব্যাটা
জল্লাদও
আমাদের
কথায়
মুচকি
মুচকি
ফিচিক
ফিচিক
হাসছিল,
ওরও
শাস্তি
হওয়া
উচিত।”
রাজামশাই ঘাড় নেড়ে
বললেন, “ফিচিক
ফিচিক
হাসি
খুব
খারাপ।
ওতে
অম্বল
হয়।
আর
কে
না
জানে
তাহলে
কম্বল
চাপা
দিয়ে
শুয়ে
থাকতে
হয়, বাপ
রে! তাই জল্লাদেরও একই শাস্তি
হবে।”
সেনাপতি বলল, “কিন্তু
মহারাজ
ও
যদি
নিজের
কান
আস্তে
করে
মোলে?”
বাকিরাও বলল, “হ্যাঁ
মহারাজ।
ও
ব্যাটা
ভারী
নচ্ছার।
নিজের
কান
আস্তে
মুলবে
আর
আমাদের
জোরে
জোরে।”
এসব শুনে খানিক
মাথা-টাথা
চুলকে
হাঁড়িচাচা
রায়
বললেন, “তাহলে
এক
কাজ
করো, সবাই
মিলে
ওকে
পাকড়ে
পাঁচ মিনিট
ধরে
কাতুকুতু
দাও।”
এ কথায় সবাই ভারী
খুশি
হল।
কেউ
কেউ
আহ্লাদে
এট্টু
নেচেও
নিল।
মন্ত্রীমশাই
আবেগে
চোখের
জল
মুছে
বললেন, “আহাঃ!
কী
সুন্দর
বিচার! আমাদের
মহারাজ
যেন
সাক্ষাৎ
ধর্মরাজ!” তারপর
সেদিনের
মতো
সভা
ভঙ্গ
হল।
(২)
বিষণ্ণ মুখে হাঁড়িচাচা
রায়
প্রবেশ
করলেন
তার
কক্ষে।
মুখ
তার
ভার।
যেন
সারা
পৃথিবীর
সমস্ত
দুঃখ
এসে
জড়ো
হয়েছে
সেই
মুখে।
ধীরে
ধীরে
সেই
কক্ষে
প্রবেশ
করলেন
রাজপুত্র
হাবা
এবং
রাজপুত্র
গোবা।
অবশ্য
তাদের
ভালো
নাম, কুমার
হাবুলচন্দ্র
রায়
এবং
কুমার
গোবরচন্দ্র
রায়।
রাজ্যসুদ্ধ
সকলে
ভালোবেসে
হাবা
গোবা
নামে
ডাকে।
তারা
পিতার
দুঃখের
কথা
শুনেছে, তাই
তার
কাছে
এসে
বলল, “পিতা
আপনি
কষ্ট
পাবেন
না।
আমরা
সাত
সমুদ্র
তের
নদী
পার
করে
আপনার
জন্য
এমন
বস্তু
নিয়ে
আসব
যা
পৃথিবীর
আর
কোথাও
পাওয়া
যায়
না।”
রাজামশাই একটু দুঃখের
স্বরে
বললেন, “বাবারা, কত
বড়ো
বড়ো
মানুষ
এমন
কিছু
আনতে
পারল
না, আর
তোমরা
তো
এখনও
ছেলেমানুষ।
না
না,
শুধু
শুধু
তোমাদের
ঝামেলা
কাঁধে
নিতে
হবে
না।
আর
তাছাড়া
সাত
সমুদ্র
তের
নদীর
পারের
দেশে
যদি
সে
জিনিস
পাওয়াই
যায়, তাহলে
আর
সেটা
অনন্য
হল
কী
করে? আমার
নিজের
রাজ্যে
কি
এমন
কিছুই
নেই
যা
আর
কোথাও
পাওয়া
যায়
না?” তবু
হাবা
আর
গোবা
খুব
জোর
করতে, অবশেষে
বাধ্য
হয়ে
মহারাজ
মত
দিলেন।
ব্যস,
তাদের
আর
পায়
কে, এমনিতেই
গুরুদেবের
পাঠশালায়
সংস্কৃত আর
রাজ্য
পরিচালনার
পরীক্ষায়
ফেল
করার
পর
থেকে
অবধি
বন্ধুরা
তাদের
দুয়ো
দেয়।
ফলে
এবার
একটা
সুযোগ
পাওয়া
গেছে
তাদের
মুখের
উপর
জবাব
দেবার।
পরদিন
সকালেই
তারা
দু’জন
একা
একা
বেরিয়ে
পড়ল
পথে।
চলতে
চলতে
দুপুরবেলায়
এসে
পৌঁছোলো
এক
গ্রামে, সেখানে
একজনের
বাড়িতে
রুটি
আর
আলুভাজা
খেয়ে
আবার
বেরিয়ে
পড়ল
পথে।
এদিকে
সেই রাজ্যে
আবার
এক
ভিনদেশি
ঠগ
এসেছিল
লোককে
ঠকিয়ে
ব্যাবসা
করতে।
কিন্তু
সারাদুপুর
ঘুরেও
কোনো
সুবিধা
করতে
না
পেরে
সে
যখন
ফিরে
যাচ্ছিল, তখন
পথে
দেখতে
পেল
হাবা
গোবাকে, আর
হাবাও
করেছে
কী,
সেই
লোকটাকেই
জিজ্ঞেস
করেছে, “ও
মশাই
শুনছেন, এখানে
কোনো
অনন্য
জিনিস
পাওয়া
যায়
যা
আর
কোথাও
নেই?” ঠগ
ভাবল
এ
সুযোগ
ছাড়া
উচিত
নয়।
তাই
সে
কাঁচুমাচু
মুখ
করে
বলল, “অবশ্যই
খোকা! এই
তো
আমার
কাছেই
এমন
জিনিস
আছে।
আমি
জাদুকর
তো,
তাই।” বলতে
বলতে
সে
ঝোলা
থেকে
একটা
ডিম
বের
করে
দেখাল, “এই
যে,
এটা
হল
ঘোড়ার
ডিম।”
হাবা সঙ্গে সঙ্গে
বলল, “সংস্কৃতে
ফেল
করেছি
বলে
আমাদের
বোকা
ভেবেছেন
নাকি! ঘোড়ার
যে
ডিম
হয় না
তা
কি
আমরা
জানি
না?”
এ কথায় লোকটা খুব হেসে
তার
বেতো
বুড়ো
ঘোড়াটার
দিকে
তাকিয়ে
বলল, “সেইজন্যই
তো
এ
ডিম
অনন্য
খোকা।
এই
পৃথিবীতে
একমাত্র
আমার
জাদুঘোড়াই
ডিম
পাড়ে।”
গোবা ভারী অবাক
হয়ে
বলল, “ওই
বুড়ো
ঘোড়াটা?”
এ কথায় লোকটা আবার
বলল, “বুড়ো
হলে
কী
হবে,
ও
তো
জাদুঘোড়া।”
“কী করে বিশ্বাস
করব?”
এ কথায় ঠগটা খুব হেসে
এক মুঠো
ঘাস
ঘোড়াটার
মুখের
সামনে
ধরল, সঙ্গে
সঙ্গে
সেটা
একটা
সোনার
আংটি
হয়ে
গেল।
আসলে
লোকটি
সাধারণ
হাতসাফাইয়ের
খেলা
দেখিয়েছিল, তার
হাতে
আগে
থেকেই
আংটি
লুকোনো
ছিল।
কিন্তু
হাবা
গোবা
ভাবল
এ
নিশ্চয়ই
মস্ত
জাদু
ঘোড়া।
তাই
তারা
সঙ্গে
সঙ্গে
বলল, “এই
ডিম
আর
ঘোড়া
আমাদের
চাই।”
ঠগটা সঙ্গে সঙ্গে
বলল, “অবশ্যই
ডিম
আর
ঘোড়া
পাবে, তবে
যদি
তোমাদের
হাতের
ওই
হিরের
আংটি
আমায়
দাও।”
রাজপুত্ররা বিনা বাক্যব্যয়ে
তাদের
হাতের
আংটি
খুলে
তাকে
দিয়ে
দিল।
জাদুকর
সেটা
নিয়ে
ওদের
হাতে
ডিম
আর
ঘোড়ার
লাগাম
দিয়ে
বলল, “কিন্তু
একটা
কথা
মনে
রেখো।
আমার
ঘোড়া
যখন
শুধু
মর্জি
হয়
তখনই
জাদু
দেখায়।”
(৩)
মহামন্ত্রী ডিমটা হাতে
নিয়ে
নেড়েচেড়ে
বললেন,
“কুমার, আপনারা নিশ্চিত
এটা
ঘোড়ার
ডিম?”
হাবা সঙ্গে সঙ্গে
বলল, “অবশ্যই।
এক
জাদুকরের
কাছ
থেকে
আমরা
এটা
কিনেছি।”
গোবাও সঙ্গে সঙ্গে
তার
কথায়
সায়
দিয়ে
বলল, “একদম।
আমরা
এই
জাদুঘোড়ার
গুণ
চাক্ষুষও
করেছি।
ও
আমাদের
সামনেই
ঘাসকে
সোনার
আংটি
বানিয়ে
দিয়েছে।”
এমন সময়, রাজজ্যোতিষী
রাজসভায়
প্রবেশ
করে
বললেন, “কী
নিয়ে
এত
কথা
হচ্ছে
শুনি।”
মহামন্ত্রী মাথা-টাথা চুলকে
বললেন, “আজ্ঞে
রাজ্যে
ঘোড়ার
ডিম
দেখা
গেছে।”
এ কথায়, খুব এক চোট
হেসে
রাজজ্যোতিষী
বললেন, “মূর্খ! ঘোড়ার
কোনোদিন
ডিম
হয় না।
যারা
বলে
ঘোড়ার
ডিম
দেখেছে
তারা
ঠগ, জোচ্চোর, মিথ্যাবাদী, পাগল, উল্লুক।
কোন
বুদ্ধু
এ
কথা
বলছে?”
মহামন্ত্রী একটু গলা খাঁকরে
বললেন, “আজ্ঞে
রাজকুমারেরা।”
মহামন্ত্রীর কথা শেষ হতে না হতেই
একটা
বিষম
খেয়ে, রাজজ্যোতিষী
বললেন, “ও
তাই
নাকি।
দেখেছ
বুড়ো
বয়সে
কিছু
মাথায়
থাকে
না।
কী
বলতে
কী
বলে
ফেলেছি, কিছু
মনে
কোরো
না
কুমার।
এখন
মনে
পড়ল
বটে, শাস্ত্রে
পরিষ্কার
লেখা
আছে, ঘোড়ার
ডিম
হয়
এবং
তা
হয়
রামধনু
রঙের।”
“আজ্ঞে
রাজপুত্ররা
সাদা
রঙের
ডিম
এনেছেন।”
মহামন্ত্রীর দিকে একটা
জ্বলন্ত
কটাক্ষ
ছুঁড়ে
দিয়ে
তিনি
বললেন, “ক্ষেত্রবিশেষে
সাদাও
হয়
বই-কি।”
মহারাজ হাঁড়িচাচা রায়, লাফিয়ে
উঠলেন, “তাহলে
তো
হয়েই
গেল! এ
এমন
অদ্বিতীয়
জিনিস
যা
আর
কোথাও
নেই।
জাদু
ঘোড়া, বাপ
রে! তার আবার ডিম।
হি
হি, কী
আনন্দ! না
জানি
কীরকম
হবে
সেই
ডিম
ফুটে
বেরোনো
ঘোড়ার
ছানা।
সেনাপতি,
তুমি
এক্ষুনি
ঘোড়াটাকে
আস্তাবলে
নিয়ে
যাও।
দেখ
সে
কী
কী
রকম
জাদু
করতে
পারে।
সে
কি
ঝিঙেকে
আম
বানাতে
পারে,
নাকি
মানুষকে
ছুঁচো
বানাতে
পারে! যাও, এই
রাজজ্যোতিষীর
উপরই
বরং
পরীক্ষা
করো! ব্যাটা
বড়ো
বাজে
বকে।”
রাজজ্যোতিষী কাতর কণ্ঠে
বলে
উঠলেন, “তাহলে
রাজ্যের
ভাগ্য
গণনা
কে
করবে
মহারাজ?”
“হুম,
তাও
ঠিক।
তাহলে
শুধু
ঝিঙেই
থাক।
আর
জীববিদ, তুমি
রোজ
নজর
রাখো
ডিমটার
উপর, সেটার
কী
পরিবর্তন
হচ্ছে,
সবসময়ে
খবর
দেবে।
আর
মহামন্ত্রী,
তুমি
এই
উপলক্ষ্যে
আনন্দ
অনুষ্ঠান
আর
রাজকুমারদের
সংবর্ধনা
সভার
আয়োজন
করো।
আহা
রে! সোনার
টুকরো
সব
ছেলে
আমার!”
(৪)
ইতিমধ্যে গোটা খাম্বাজপুর
রাজ্যে
ঘোড়ার
ডিমের
কথা
ছড়িয়ে
পড়েছে।
মাঠে
ঘাটে, হাটে
বাজারে, সর্বত্র
একই
আলোচনা -
ঘোড়ার
ডিম
থেকে
কীভাবে
ঘোড়া
বেরোয়! কেউ
বলল, নিশ্চয়ই
একটা
অসাধারণ
জ্যোতির
সঙ্গে
ঘোড়াটা
ডিম
ফুটে
বেরোবে।
তার
দুটো
শিং, মাথায়
চক্র, সোনার
খুর
হবে।
একজন
পাশ
থেকে
বলে
উঠল, “না
হে! শোনোনি, ডিমটা
যে
ঘোড়ার, সেই
ঘোড়াটা
তো
সাধারণ
ঘোড়ার
মতোই
দেখতে।
ফলে
ওইসব
শিং-টিং
নয়, ঘোড়ার
আসল
শক্তি
হবে
জাদুশক্তি, সে
ডিম
থেকে
বেরিয়েই
বাঁধাকপিকে
ফুলকপি
বানিয়ে
দেবে।”
আবার কেউ কেউ বলল, “না
গো
না, এই
ঘোড়া
আসলে
মাটির
তলা
আর
জলের
উপর
দিয়েও
ছুটতে
পারবে।” রাজ্য
জুড়ে এইসব তর্কের মাঝেই
আমরা
দেখতে
পাব, রাজসভায়
রাজা
বিষণ্ণ
মনে
বসে
আছেন।
রাজপুত্রদের
ধরে
আনা
ঘোড়া
এখনও
অবধি
কোনো
জাদু
দেখায়নি।
তার
সামনে
বিস্তর
ঘাস,
পাতা,
শাক
সবজি
রাখা
হলেও
সে
তাদের
রূপ
বদলে
দেয়নি,
বরং
মহাসুখে
কচর
মচর
করে
চিবিয়ে, তৃপ্তিতে
ঘুম
দিয়েছে।
একদিন
সেনাপতিকে
আনন্দে
ঢুঁসিয়েও
দিয়েছে।
রাজা
খুব
আগ্রহে
ছিলেন, নিশ্চয়ই
এবার
সেনাপতি
গরু, ভেড়া
নিদেনপক্ষে
জলহস্তীতে
রূপান্তরিত
হবেন।
কিন্তু
তারও
এখনও
অবধি
কোনো
লক্ষণ
না
দেখা
দেওয়ায়, সেনাপতি
স্বস্তি
পেলেও, রাজামশাই
খুশি
হতে
পারেননি।
হয়তো
ঘোড়ার
জাদু
দেখানোর
এখনও
মর্জি
হয়নি।
এখন
শেষ
ভরসা
ওই
ঘোড়ার
ডিম।
এমন
সময়
হন্তদন্ত
হয়ে
জীববিদ
এসে
খবর
দিল, “মহারাজ, আমি
গবেষণা
এবং
গভীর
পর্যবেক্ষণের
মাধ্যমে
বুঝেছি, কালই
ঘোড়ার
ডিমটা
ফুটে
শিশু
ঘোড়া
জন্ম
নেবে।” এই
শুনেই
মহারাজা
তড়াক
করে
লাফিয়ে
উঠলেন।
সারা
রাজ্যে
ঢেড়া
পড়ে
গেল।
আগামীকাল
রাজ্যের
পূর্বপ্রান্তের
মাঠে
সবাই
যেন
জড়ো
হয়ে
যায়।
সবাই
সেইমতো
পরদিন
মাঠে
জড়ো
হল।
সকলের
মনেই
চূড়ান্ত
উত্তেজনা, কেউ
কোনোদিন
আগে
ঘোড়ার
ডিম
দেখেনি।
মাঠের
মাঝেই
একটা
মখমলের
কাপড়ে
ডিমটাকে
রাখা
হয়েছে।
অনেকক্ষণ
পেরিয়ে
গেছে,
কিন্তু
ডিমের
কোনো
হেলদোল
নেই।
এমন
সময়
হঠাৎ
যেন
ডিমটায়
একটা
স্পন্দন
লক্ষ
করা
গেল।
ওই
তো
ডিমের
উপরের
অংশটা
ফেটে
যাচ্ছে
ধীরে
ধীরে, ওটা
কী
একটা
ছোট্ট
ছানা
গুটিগুটি
বেরিয়ে
এল।
কিন্তু
ঘোড়ার
কি
অমন
চঞ্চু
হয়, অমন
হলুদ
রং! এ
যে
একেবারে
মুরগি
ছানার
মতো
দেখতে।
মহামন্ত্রী
ততক্ষণে
রাজকুমারদের
কাছে
এগিয়ে
এসে
বললেন, “তোমরা
নিশ্চিত
এটা
ঘোড়ার
ডিম?”
হাবা থতোমতো খেয়ে
বলল, “না
মানে
লোকটা
এত
ভালো
ভালো
কথা
বলছিল,
আর
ঘোড়ার
সামনে
ঘাস
ধরতেই
সেটা
আংটি
হয়ে
গেল, তাই
আর কি
আমাদের
মনে
হল...”
ততক্ষণে সবার কাছে
ব্যাপারটা
পরিষ্কার
হয়ে
গেছে।
ফলে
দর্শকদের
থেকে
হঠাৎ
আওয়াজ
উঠল, “ফিক, ফিক।” প্রধানমন্ত্রী
বললেন, “হি
হি।” রাজজ্যোতিষী
বললেন, “হ্যা
হ্যা।”
সেনাপতি বললেন, “হে হে” আর
জীববিদ
পেটে
হাত
দিয়ে
খ্যাঁ
খ্যাঁ
করে
হেসে
উঠে
বলল, “আমার
ঠিক
আগেই
সন্দেহ
হয়েছিল।”
হাঁড়িচাচা রায় তা শুনে
খেঁকিয়ে
উঠলেন, “তুমি
চুপ
করো
গবেট, ব্যাটা
ঘোড়ার
ডিমে
মুরগির
ডিমে
তফাত
করতে
পারে না, আবার
জীববিদ
হয়েছেন।
নিশ্চিত
টুকে
পাশ।
দাঁড়াও
তোমার
হচ্ছে, তোমাকে
আমি
কান ধরে
যদি
না
ওঠবোস
করাই! আর
রাজজ্যোতিষী,
শাস্ত্রে
কী
বলা
আছে? জাদু
ঘোড়া
ডিম
পাড়ে! ওই
ডিম
আমি
তোমার
মাথায়
হোঃ
হোঃ
হোঃ
হোঃ
হোঃ।” রাজামশাই
আর
নিজেকে
সামলাতে
না
পেরে
মাঠময়
হেসে
গড়াগড়ি
খেতে
লাগলেন।
আর
সারা
মাঠ
জুড়ে
সবাই “হি
হি”, “হাঃ
হাঃ”, “হোঃ
হোঃ”, “খিক
খিক”, “ফিক
ফিক”, “খ্যাঁ
খ্যাঁ” করে
হাসতে
লাগল।
শোনা
যায়,
টানা
চারদিন
খাম্বাজপুরের
সবাই
এইভাবে
হেসেছিল। তারপর সেই তখন থেকে
আজ
অবধি
কেউ
কোনো
অবাস্তব, অসম্ভব
কথা
শুনলেই
বলে, “ঘোড়ার
ডিম
হবে।”
----------
ছবি - শ্রীময়ী
ম্যাজিক ল্যাম্প 



No comments:
Post a Comment