
ফুটবলের
ফিনিক্স
সপ্তর্ষি
সেনগুপ্ত
রূপকথায়
বর্ণিত অপূর্ব সুন্দর ফিনিক্স পাখির কথা কমবেশি আমরা সবাই জানি। মৃত ফিনিক্সের
ছাইভস্ম থেকে জন্ম নেয় সুন্দরতর নতুন ফিনিক্স। বাস্তবে এমন কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব
না থাকলেও, ফুটবল বিশ্বে এমন একজন ফুটবলার ছিলেন
, যার জীবনের গল্প কোনো অংশে ফিনিক্স
পাখির রূপকথার থেকে কম নয়। প্রায় শেষ হয়ে আসা ফুটবল জীবন থেকে অভাবনীয়ভাবে ফিরে
এসেছিলেন খ্যাতির শীর্ষে। নির্বাসিত, কলঙ্কিত
খলনায়ক থেকে হয়ে উঠেছিলেন এক রূপকথার মহানায়ক।
১৯৫৬ সালে
ইতালির প্রাতো শহরে জন্ম এই রূপকথার নায়কের। কিশোর বয়সেই ফুটবল প্রতিভায় তিনি নজর
কাড়েন। প্রথম জীবনে খেলতেন রাইট উইঙ্গার হিসাবে। ১৯৭৩ সালে, মাত্র ১৭ বছর বয়সেই ইতালির প্রথম সারির ক্লাব জুভেন্টাসের
সিনিয়র দলে খেলার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। কিন্তু বার বার চোট আঘাতে জর্জরিত হয়ে, ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫, তিন বছরে
জুভেন্টাসের হয়ে মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পান। এরপর অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য
তাঁকে জুভেন্টাস থেকে তুলনামূলক ছোটো ক্লাব কোমোতে পাঠানো হয়। কোমো ক্লাবের হয়েই
ইতালিয়ান প্রথম ডিভিশন লীগ ‘সিরি এ’-তে অভিষেক হয় তাঁর। কোমোর হয়ে ছয়টি ম্যাচ
খেললেও, গোল করতে পারেননি একটিও। তাঁর খেলা
মোটেও সন্তুষ্ট করতে পারেনি কোমো কর্তাদের। তাই পরের মরসুমেই তাঁকে পাঠানো হয়
দ্বিতীয় ডিভিশনের (‘সিরি বি’) ক্লাব ভিনসেঞ্জা-র হয়ে খেলার জন্য। এই ক্লাবের হয়ে ‘সিরি
বি’-এর একটি খেলার আগে, দলের প্রধান
সেন্টার ফরওয়ার্ড চোট পেলে, কোচ প্রথমবার
তাঁর নিজস্ব পজিশন রাইট উইং-এর পরিবর্তে, সেন্টার
ফরওয়ার্ড পজিশনে খেলান। তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায় এই একটি সিদ্ধান্তে। গোল করার যে
সহজাত প্রবণতা এতদিন সুপ্ত ছিল তাঁর ভিতরে, সেটি
যেন এতদিনে সুযোগ পায় নিজেকে মেলে ধরার। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। সে
বছরই ২১ গোল করে ‘সিরি বি’-এর সর্বোচ্চ গোলদাতা হন তিনি, সঙ্গে
সঙ্গে নিজের ক্লাবকে ‘সিরি বি’ চ্যাম্পিয়ন করে ‘সিরি এ’-তে উন্নীত করেন। পরের
মরসুমেই, অর্থাৎ ১৯৭৭-৭৮ সালে, তিনি ২৪ গোল করে ‘সিরি এ’-র সর্বোচ্চ গোলদাতা হন এবং নিজের
ক্লাব ভিনসেঞ্জা-কে ‘সিরি এ’-তে দ্বিতীয় স্থানে তুলে আনেন। তাঁর এই অসাধারণ
সাফল্যের কারণেই ১৯৭৮ বিশ্বকাপ দলে তাঁকে সুযোগ দেন ইতালীয় কোচ এনজো বিয়েরজোত।
জীবনের
প্রথম বিশ্বকাপে দেশবাসীকে হতাশ করেননি তিনি। প্রথম রাউন্ডের খেলায় ফ্রান্স ও
হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে এবং দ্বিতীয় রাউন্ডে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে গোল করেন এবং তিনটি
গোল করে সেই বিশ্বকাপে ইতালির হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। তিনি
সেই বিশ্বকাপের ফিফা ঘোষিত ‘অল ষ্টার’ দলেও সুযোগ পান এবং বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেরা
ফুটবলারের পুরস্কার ‘সিলভার বল’ জেতেন। ইতালি সেই বিশ্বকাপে চতুর্থ স্থান পেলেও, তিনি নিজের দেশে ফিরে পান বীরের সম্মান। ইতালির নানা ক্লাব
তাঁকে দলে পাবার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু ভিনসেঞ্জা
মালিক সেই সময়ের রেকর্ড মূল্যে তাঁকে নিজেদের দলেই রেখে দেন। তিনি সে সময়ে বিশ্বের
সবথেকে মূল্যবান ফুটবলার হিসাবে ভিনসেঞ্জা ক্লাবেই থেকে যান আরও একটি বছর। কিন্তু
১৯৭৮-৭৯ মরসুমে দুর্ভাগ্যবশত চোটের কবলে পড়েন তিনি, ভিনসেঞ্জাও
‘সিরি এ’-তে অবনমনের আওতায় পড়ে যায়। তিনি বাধ্য হয়ে আরেক ‘সিরি এ’ ক্লাব পেরুজিয়া-তে
খেলার জন্য সই করেন।
পেরুজিয়া-তে
১৯৭৯-৮০ মরসুমে ১৩ গোল করেন তিনি। কিন্তু এরপরেই তাঁর ফুটবলার জীবনে নেমে আসে গভীর
অন্ধকার। ১৯৮০ সালে ইতালি ফুটবলের কালো অধ্যায় হিসাবে উঠে আসে নানা গড়াপেটার
অভিযোগ। এ সি মিলানের মতো ক্লাবকে চরম শাস্তি দেওয়া হয়। শাস্তির কবলে পড়েন অনেক
ফুটবলারও। দুর্ভাগ্যবশত তিনিও দু’বছরের জন্য নির্বাসিত হন সবরকম ফুটবল থেকে।
রাতারাতি মহানায়ক থেকে খলনায়ক হয়ে যান তিনি। দু’বছরের জন্য হারিয়ে যান ফুটবলপ্রেমীদের
মন থেকে।
এই দুই বছর
তিনি কোথায় ছিলেন, কীভাবে দিন কাটিয়েছেন, ফুটবল বিশ্ব সেই খবর রাখেনি। তিনি আবার খবরে এলেন, যখন ১৯৮২ সালে, তাঁর
নির্বাসন শেষ হবার পর পরই জুভেন্টাস ক্লাব তাঁকে তাদের দলে সামিল করে। দুই বছর
প্রায় অজ্ঞাতবাসে থাকা এক কলঙ্কিত ফুটবলারকে দলে সামিল করার জন্য জুভেন্টাস ক্লাবকে
সেই সময় সম্মুখীন হতে হয়েছে বিশেষজ্ঞ ও সমর্থকদের অনেক সমালোচনার। শোনা যায়, জুভেন্টাসের এই সিদ্ধান্তের পিছনে ছিল তৎকালীন ইতালি জাতীয়
দলের কোচ বিয়েরজোতের অঙ্গুলিনির্দেশ। সেই সমালোচনার চোরা স্রোত আগ্নেয়গিরি হয়ে
ফেটে পড়ে, যখন জুভেন্টাসে মাত্র তিনটি ম্যাচ
খেলার পরেই বিয়েরজোত সাহেব তাঁকে ১৯৮২ স্পেন বিশ্বকাপের ইতালি দলে অন্তর্ভুক্ত
করেন। সংবাদ মাধ্যমে নিয়মিত মুণ্ডপাত হতে থাকল বিয়েরজোত সাহেবের। ফুটবলার হিসাবে
তিনি যে খুব ভালো অবস্থায় নেই এবং তিনি বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা রাখেন না, সেটা প্রমাণ করার জন্য প্রায় সারা ইতালিবাসী সোচ্চার হয়ে উঠে।
কিন্তু বিয়েরজোত ছিলেন অবিচল, তাই একদা
মহানায়ক, সে সময় খলনায়ক হয়ে যাওয়া সেই
ফুটবলারটিও ইতালি দলের সঙ্গে স্পেনগামী বিমানে নিজের জায়গা পেয়ে গেলেন।
সে
বিশ্বকাপে ইতালির প্রথম খেলা ছিল পোল্যান্ড-এর বিরুদ্ধে। বিয়েরজোত সব সমালোচনাকে
বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তাঁকে প্রথম একাদশে খেলালেন। বিগত আড়াই বছরে, যিনি ম্যাচ খেলেছেন সাকুল্যে তিনটি, তাঁকে
ইতালির মতো দলের প্রথম একাদশে দেখে আবার সমালোচনার ঝড় উঠল সারা দেশ জুড়ে। খেলাটি
গোলশূন্যভাবে শেষ হয়, আর তিনি সারা ম্যাচে ছিলেন চূড়ান্ত
নিষ্প্রভ।
পরের ম্যাচে
প্রতিপক্ষ ছিল পেরু। এই ম্যাচটিও জিততে সক্ষম হল না ইতালি। খেলা শেষ হয় ১-১ গোলে
অমীমাংসিতভাবে। তিনি যথারীতি
চূড়ান্ত নিষ্প্রভ। ৪৬ মিনিটে তাঁকে বদল করতে বাধ্য হন কোচ। দেশে সমালোচনার ঢেউ যেন
সুনামি হয়ে আছড়ে পড়তে লাগল।
প্রথম
রাউন্ডের শেষ ম্যাচ তুলনামূলক অনভিজ্ঞ ক্যামেরুনের বিরুদ্ধেও জয় অধরা থাকল। ১-১
গোলে খেলা শেষ হল। তিনি আবারও হতাশ করলেন চূড়ান্তভাবে। তিনি দলের প্রধান সেন্টার ফরওয়ার্ড
হিসাবে খেলেও তিন ম্যাচে একটিও গোল করতে না পারায় এবং দল একটি ম্যাচেও না জিততে
পারায় কোচ বিয়েরজোত ও তাঁর একান্ত আস্থাভাজন ফুটবলারটির বিরুদ্ধে তখন সমালোচনা
রীতিমতো বিক্ষোভে পরিণত হয়েছে।
একটি ম্যাচ
না জিতলেও, তুলনামূলক ভালো গোল পার্থক্যের কারণে
গ্রুপে দ্বিতীয় হয়ে পরবর্তী রাউন্ডের টিকিট পেল ইতালি। ইতালির সংবাদ মাধ্যমে তখন
মুণ্ডপাত চলছে তাঁর। তিনি তখন জাতীয় খলনায়ক। ইতালির সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি তখন ‘ghost aimlessly wandering over the field’। কেন
তরুণ প্রতিভা আলেক্সান্দ্র আলতোবেলি সুযোগ পাচ্ছেন না, সেই
প্রশ্ন বার বার উঠে আসতে লাগল। এমন
পরিস্থিতিতেও নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল ইতালীয় কোচ দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রথম ম্যাচে
ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে আবারও সেন্টার ফরওয়ার্ড পজিশনে মাঠে
নামালেন সেই বিতর্কিত খলনায়ককে। যথারীতি
আবারও ব্যর্থ তিনি। কিন্তু ২-১ গোলে ইতালি আর্জেন্টিনাকে হারালে এবং আর্জেন্টিনার
উঠতি প্রতিভা দিয়াগো ম্যারাডোনাকে বোতলবন্দি করে ইতালীয় ডিফেন্ডার ক্লাওদিও
জেন্টিল নায়কের সম্মান পেলে, তাঁর
ব্যর্থতা কিছুটা হলেও চাপা পড়ে যায়।
এর পরের
খেলা ছিল বিশ্বকাপের ‘হট ফেভারিট’ ব্রাজিলের বিরুদ্ধে। ব্রাজিল দলে তখন দাপিয়ে
খেলছেন জিকো, সক্রেটিস, ফ্যালকাও, জুনিয়র-রা। জিকো ইতিমধ্যেই চারটি গোল করে তখন পর্যন্ত
সর্বোচ্চ গোলদাতা ও সোনার বুটের অন্যতম দাবিদার। সাম্বার তালে তালে হলুদ ঝড় তুলে
বিপক্ষকে বিধ্বস্ত করে ব্রাজিল তখন বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নে বিভোর। অন্যদিকে চার
ম্যাচে মাত্র একটিতে জিতে ইতালির রীতিমতো কোণঠাসা অবস্থা। এই ম্যাচে ড্র করলেই
ব্রাজিল পৌঁছে যাবে সেমিফাইনালে, সেখানে
ইতালির চাই অবশ্যই জয়। ইতালির অতি বড়ো সমর্থকও সেদিন ইতালির জয় আশা করেননি, যেখানে দলের মূল সেন্টার ফরওয়ার্ড তখনও একটিও গোল করতে
ব্যর্থ।
কিন্তু খেলা
শুরু হতেই সমানে সমানে লড়াই শুরু হল। খেলার তিন
মিনিটে ইতালিয়ান মিডিও মার্কো তারদেলির মাইনাস পেনাল্টি বক্সে পেয়েও হাস্যকরভাবে
সুযোগ নষ্ট করেন সেই খলনায়ক। দেশ জুড়ে মুণ্ডপাত হতে লাগল তাঁর। এমন গুরুত্বপূর্ণ
খেলায় আলতোবেলি কেন তাঁর পরিবর্তে মাঠে নেই, এই
প্রশ্ন তুলে দিলেন ধারাভাষ্যকাররাও। দুই মিনিট পরই, সেন্টার
লাইনের ধারে রাইট উইং বরাবর বল পেলেন ইতালিয়ান মিডিও ব্রুনো কন্তি। হালকা ড্রিবল
করে কিছুটা এগিয়ে তিনি প্রান্ত বদল করিয়ে ক্রস পাঠান লেফট উইঙ্গে আন্তোনিও
ক্যাবরিনির উদ্দেশ্যে। ক্যাবরিনি সেই বল ভাসিয়ে দেন ব্রাজিল গোলমুখে। বল ব্রাজিল
ডিফেন্ডার অস্কার ও লুইজিনহো এবং ইতালি স্ট্রাইকার গ্রাজিয়ানির মাথা টপকে যখন ভেসে
যাচ্ছে মাঠের বাইরে, সেই মুহূর্তে হঠাৎই যেন মাটি ফুঁড়ে
ওঠে এলেন তিনি। আর বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে দেখল, তাঁর
দুরন্ত হেডে বল জড়িয়ে যাচ্ছে ব্রাজিলের গোলে। সেই
বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ল দুরন্ত ব্রাজিল। আর সমালোচিত খলনায়ক
থেকে সেই মুহূর্তেই যেন তাঁর ফুটবল জীবন ইউ টার্ন নিয়ে আবার ফিরে এল নায়কের
কক্ষপথে। কিন্তু খেলার ১২ মিনিটেই সক্রেটিসের গোলে সমতা ফেরায় ব্রাজিল। খেলার ২৫
মিনিটে নিজেদের পেনাল্টি বক্সের সামনে ব্রাজিল ডিফেন্ডার সেরেজো একটি দায়সারা পাস
দেন সতীর্থ জুনিয়রের উদ্দেশে, আর জুনিয়রকে
ততোধিক দায়সারাভাবে বলের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, অবিশ্বাস্য
দ্রুততায় মাঝপথেই সেই পাস ‘ইন্টারসেপ্ট’ করে, দলের
ও নিজের দ্বিতীয় গোল করে যান আবারও সেই তিনিই। এর পর মরিয়া ব্রাজিলের একের পর এক
আক্রমণ আছড়ে পড়তে থাকে ইতালি রক্ষণে। ইতালি অধিনায়ক গোলকিপার দিনো জফ অতিমানব হয়ে
দলের পতন রক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু তারপরেও খেলার ৬৮ মিনিটে ফ্যালকাও-এর গোলে
সমতায় ফেরে ব্রাজিল। ড্র হলেই যেহেতু ব্রাজিল সেমিফাইনালের টিকিট পেয়ে যাবে, তাই সারা বিশ্ব আশা করেছিল এই পরিস্থিতিতে ব্রাজিল রক্ষণে
মনোযোগ দেবে। কিন্তু বিশ্ববাসীকে ভুল প্রমাণ করে ব্রাজিল ক্রমাগত আক্রমণ চালিয়ে
যেতে থাকে। খেলার ৭৪ মিনিটে একটি কর্নার পায় ইতালি আর ব্রুনো কন্তির নেওয়া সেই
কর্নার থেকে ব্রাজিল গোলের দিকে নেওয়া তারদেলির গোলার মতো শট সামান্য ছোঁয়ায় দিক
পরিবর্তন করে, নিজের হ্যাট্রিক পূর্ণ করেন তিনি।
সারা ইতালি যখন উল্লাসে ফেটে পড়ছে, ডাগ আউটে
কোচ বিয়েরজোত সাহেবের মুখে তখন পরিতৃপ্তির হাসি। ৩-২ গোলে অপরাজেয় ব্রাজিলকে
হারিয়ে, সোনার বুটের দৌড় থেকে ব্রাজিলিয়ান
জিকোকে ছিটকে দিয়ে, ইতালি সেই নায়কের কাঁধে ভর করে পৌঁছে
গেল সেমিফাইনালে। এদিনই শুরু হল তাঁর স্বপ্নের দৌড়।
সেমিফাইনালে
ইতালির প্রতিপক্ষ পোল্যান্ড। পোলিশ স্ট্রাইকার বোনিয়েক চার গোল করে সোনার বুটের
দৌড়ে শীর্ষে। প্রথম রাউন্ডে এই দু’দলের খেলা গোলশূন্য ড্র হলেও, সেমিফাইনালে ২২ ও ৭৩ মিনিটে পর পর দুটি গোল করে ইতালিকে
ফাইনালে তুললেন আমাদের সেই নায়ক। সোনার বুটের দৌড় থেকে ছিটকে গেলেন বোনিয়েক, আর ৫ গোল করে প্রবলভাবে দাবিদার হয়ে উঠলেন তিনি।
ফাইনালে
প্রতিপক্ষ ছিল পশ্চিম জার্মানি। সোনার বুটের দৌড়ে আমাদের নায়কের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে
ছুটছেন ৫ গোল করা জার্মান স্ট্রাইকার কার্ল হেইঞ্জ রুমানিগে। প্রথমার্ধ তুল্যমূল্য
লড়াই হল দুই দলের মধ্যে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের ১২ মিনিটে ইতালি ডিফেন্ডার
জেন্টিলের ভাসানো ক্রস জার্মান গোলমুখে ক্যাবরিনির নাগাল এড়িয়ে আমাদের নায়কের পায়ে
পড়তেই, গোলমুখ খুলে গেল প্রথমবারের মতো।
এরপর তারদেলি, আলতোবেলি আরও দুটি গোল করে ইতালির জয়
সুনিশ্চিত করেন। খেলাশেষের কিছু আগে সান্ত্বনা গোল করেন জার্মান ব্রাইটনার। ৩-১
গোলে জিতে বিশ্বজয়ী হল আমাদের নায়কের দেশ আর তিনি হয়ে উঠলেন এক রূপকথার নায়ক।
প্রায় শেষ হতে চলা ফুটবল জীবন থেকে যেন সেই ফিনিক্স পাখির মতো আরও উজ্জ্বল, আরও বর্ণময় হয়ে পুনর্জীবন পান তিনি। তিনি সেই বিশ্বকাপে
সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসাবে সোনার বুট তো জিতেছিলেন, জিতেছিলেন
বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের সোনার বল পুরস্কারও। তাঁর সেই স্বপ্নের পুনরুত্থান
রূপকথার কাহিনির মতো আজও আলোচিত হয় ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে।
দেশের হয়ে
মোট ৪৮টি ম্যাচ খেলে ২০টি গোল করেছিলেন তিনি। ছিলেন ১৯৮৬ বিশ্বকাপের ইতালি দলেও, কিন্তু
চোটের কারণে শুরুতেই ছিটকে যান তিনি। ১৯৮৭ সালে অবসর নেন সবরকম ফুটবল থেকে।
২০২০ সালের
৯ ডিসেম্বর দুরারোগ্য ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে, মাত্র
৬৪ বছর বয়সেই প্রয়াত হন ‘ফুটবলের ফিনিক্স পাখি’ সেই স্বপ্নের নায়ক, আমরা যাকে চিনি পাওলো রোসি নামে। আজও ফুটবলপ্রেমী মানুষ
আলোচনা করেন তাঁর সেই স্বপ্নের প্রত্যাবর্তন আর বিস্ময়াবিষ্ট হয়ে এখনও বলে থাকেন ‘এভাবেও
ফিরে আসা যায়!!!’
----------
ছবি - আন্তর্জাল
No comments:
Post a Comment