
হারানো গাছের ছায়া
সৈকত মুখোপাধ্যায়
২৮ এপ্রিল, ২০২১।
সাহিত্যিক অনীশ দেব আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।
‘আমাদের
ছেড়ে চলে গেলেন’ – এমনটা বলা ভুল।
বলা উচিত, করোনার মারণ ভাইরাস তাঁকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিল।
না হলে অনীশদার মতন তরতাজা এবং স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের এখনও আরও অনেকদিন বেঁচে থাকার কথা ছিল।
১৯৫১ সালে তাঁর জন্ম, অর্থাৎ সবে সত্তরের ঘরে পা রেখেছিলেন।
চা ছাড়া অন্য কোনো নেশা ছিল না তাঁর।
যেখানে হাঁটার সুযোগ থাকত সেখানে গাড়ি নিতেন না।
যেখানে সিঁড়ি ভাঙার সুযোগ থাকত সেখানে লিফটে চড়তেন না; এবং সবচেয়ে বড়ো কথা, নানান ধরনের কাজ এবং লেখালেখি নিয়ে সারাক্ষণ আনন্দে থাকতেন – সুস্থভাবে বাঁচার যেটা প্রথম শর্ত।
তবু তাঁকে অকালে এবং আকস্মিকভাবে চলে যেতে হল।
বাংলা সাহিত্য তার এক কৃতী-সন্তানকে হারাল এবং আমরা হারালাম আমাদের প্রিয় এবং শ্রদ্ধেয় একজন মানুষকে।
অনীশদার স্মৃতিতে কিছু লিখতে বসলে প্রথমেই যে-সমস্যাটা দেখা দেয় সেটা হল, কোন অনীশ দেবকে নিয়ে লিখব?
মেধাবী ছাত্র অনীশ দেব?
অধ্যাপক এবং গবেষক অনীশ দেব?
সম্পাদক অনীশ দেব?
পাঠক অনীশ দেব?
অনুজ লেখকদের অভিভাবক অনীশ দেব?
নাকি সব বয়সের বাঙালি পাঠকের চোখের মণি ছিলেন যিনি, সেই সাহিত্যিক অনীশ দেব?
হ্যাঁ। এতগুলো
পরিচয়ই ছিল তাঁর, এবং এই প্রত্যেকটি ভূমিকাতেই তিনি ছিলেন সফল।
তবু এই স্মৃতিচারণা লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে, অনীশ দেবের সাহিত্যকৃতি নিয়ে এখানে কিছু বলাটা আমার ধৃষ্টতা হবে। এতই বিপুল তাঁর লেখার পরিমাণ এবং এমনই বিচিত্রধারায় তা প্রবাহিত যে, তাঁর সাহিত্য বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে তা একটি স্বতন্ত্র প্রবন্ধের আকার নেবে।
তাছাড়া সাহিত্যিক অনীশ দেবের তো মৃত্যু হয়নি। কোনো সত্যিকারের শিল্পীরই মৃত্যু হয় না।
তাঁরা তাঁদের সৃষ্টির মধ্যে বেঁচে থাকেন।
প্রজন্মের পর প্রজন্ম সেই সৃষ্টির মধ্যে দিয়েই তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন।
মৃত্যু হয়েছে মানুষ অনীশ দেবের।
মৃত্যু হয়েছে এমন একজন মানুষের, যাঁর সম্বন্ধে খুব সঙ্গত-ভাবেই বলা যায়, ‘তোমার সৃষ্টির চেয়ে তুমি যে মহান’।
সেই মানুষ অনীশ দেবের কিছু কথাই এই লেখার স্বল্প আয়তনে ধরা থাক।
একেক-জন ছাত্রের কথা আমরা শুনি-না, যারা জীবনে কোনো পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়নি? ছাত্র হিসেবে অনীশদার অর্জন ছিল ঠিক সেইরকমই উজ্জ্বল।
তাঁর পড়াশোনার শুরু হিন্দু স্কুলে।
তারপর কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত-পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বি-টেক (কলেজের নাম ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি), এম-টেক এবং পি.এইচ.ডি করেন।
বলাই বাহুল্য, প্রত্যেকবারই প্রথম-স্থান অধিকার করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সম্মান জগত্তারিনী স্বর্ণপদক পান – একবার নয়, দু্’বার।
এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো।
দীর্ঘ পনেরো-বছর আমি অনীশদার ছায়াসঙ্গী ছিলাম, কিন্তু একবারের জন্যেও তাঁর নিজের মুখ থেকে এইসব কৃতিত্বের কথা শুনতে পাইনি।
শুনেছি অন্যদের মুখে। অন্যদের প্রশংসায় তিনি যতটা পঞ্চমুখ ছিলেন, নিজের সম্বন্ধে কোনো আলোচনায় ছিলেন ঠিক ততটাই কুন্ঠিত।
আসলে অনীশ দেব ছিলেন হাড়ে-মজ্জায় একজন অভিজাত ভদ্রলোক।
এই সৌজন্য ছিল তাঁর রক্তে।
যাই হোক, পড়াশোনা শেষ করার পরে অল্প কিছুদিন তিনি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন এবং তার পরে সেই যে ১৯৮৩ সালে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে লেকচারারের চাকরিতে যোগ দিলেন, সেখান থেকেই অবসর নিলেন ২০১৬ সালে অক্টোবর মাসে।
এর মধ্যে দীর্ঘ আঠারো বছর তিনি ছিলেন ওই বিভাগের প্রফেসরের পদে।
শিক্ষক হিসেবে কেমন ছিলেন প্রফেসর এ.ডি.? এ-বিষয়ে আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা তো নেই, তবে কিছু পরোক্ষ অভিজ্ঞতা রয়েছে।
সেটা বলি।
কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনার কাজ থেকে অবসর নেওয়ার পরে তাঁকে কলকাতারই একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ খুব সম্মান দিয়ে ডেকে নিয়ে যায়।
কাজপাগল মানুষ অনীশদা ‘হেড অফ দ্য ফ্যাকাল্টি’ হওয়ার সেই আহ্বানকে উপেক্ষা করতে পারেননি এবং কলেজের ওই বিশেষ ফ্যাকাল্টিটাকে তিনি – যাকে ইংরিজিতে বলে ‘from the scratch’ – নিজের মনের মতন করে তৈরি করে নিয়েছিলেন।
একটা নতুন জিনিস গড়ে তুলতে গেলে যে সময় এবং পরিশ্রম দিতে হয় তা তো ছিলই।
তার ওপরে যে-কোনো কাজের ক্ষেত্রেই অনীশদার ডেডিকেশন ছিল হান্ড্রেড পার্সেন্ট, সেখানে শতকরা নিরানব্বই ভাগ বলেও কিছু ছিল না।
তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর থেকে অনীশদার হাতে প্রকৃত-অর্থে অবসর বলে আর কিছুই রইল না।
ওই বছরগুলোতে অনীশদার সঙ্গে গুছিয়ে আড্ডা মারার একমাত্র জায়গা ছিল কলকাতা বইমেলার মাঠ।
সারা বছরের ছুটি তিনি ওই-ক’টা দিনের জন্যে জমিয়ে রাখতেন এবং প্রায় প্রতিদিন, মেলার শুরু থেকে শেষ অবধি, মাঠের মধ্যে পরিচিত মানুষদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা মারতেন।
তাঁকে কাছে পাওয়ার এই সুযোগটা আমি ছাড়তাম না।
পূর্ববঙ্গের ভাষায় যাকে বলে ‘লগে লগে ঘোরা’, আমি ঠিক সেইভাবেই তাঁর লগে লগে ঘুরতাম আর ওইভাবে ঘুরতে-ঘুরতেই দেখতাম, কিছুক্ষণ বাদে-বাদেই কখনও একজন আবার কখনও একসঙ্গে একঝাঁক তরুণ-তরুণী মেলার ভিড়ের মধ্যে থেকে আলগা হয়ে এসে তাঁর পা ছুঁয়ে প্রণাম করছেন।
হাসিমুখে জিজ্ঞেস করছে্ন, “কেমন আছেন স্যার? চিনতে পারছেন? আমি অমুক ব্যাচ।”
বুঝতেই পারতাম, ওঁরা অনীশদার প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী।
অনীশদা যতক্ষণ তাঁদের মধ্যে কোনো একজনের সঙ্গে কথা বলছেন, ততক্ষণ হয়তো অন্য কয়েকজন একটু দূরে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে স্মৃতিচারণ করছেন, “ওঃ! স্যারের অমুক ক্লাসটা মনে আছে? তিন-বছরের আন্ডার-গ্র্যাজুয়েট লাইফে যে-জিনিসটা বুঝতে পারিনি, সেটা ওই একটা ক্লাসেই একেবারে জল হয়ে গিয়েছিল।” তাদের প্রতিক্রিয়া থেকে বুঝতে পারতাম, ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে অনীশদার জনপ্রিয়তা ঠিক কোন লেভেলের ছিল।
একটু আগেই বলছিলাম-না, নিজের কোনো কৃতিত্ব নিয়ে আলোচনায় তাঁর ঘোর অনীহা ছিল।
তবু একবার কথায়-কথায় তিনি আমাকে বলে ফেলেছিলেন, গল্প-উপন্যাস যত লিখেছি, তার চেয়ে বেশি লিখেছি রিসার্চ-পেপার।
এটা কিন্তু একেবারেই কথার কথা নয়।
ভারতে এবং ভারতের বাইরে বিভিন্ন নামী বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত তাঁর রিসার্চ-পেপারের সংখ্যা সত্তরের বেশি।
তার চেয়েও বড়ো-কথা, বিজ্ঞান-গবেষণার ক্ষেত্রে সব থেকে সম্মানিত কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থা থেকে (যেমন Elsevier
[India], Anthem Press [U.K.], CRC Press [U.S.A.], Springer [Switzerland]) তাঁর অনেকগুলি গবেষণামূলক প্রবন্ধের বই প্রকাশিত হয়েছে – সারা পৃথিবীর ফলিত-পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের কাছে যে বইগুলির মূল্য অপরিসীম।
এর মধ্যে কোনো কোনোটির ক্ষেত্রে তিনি অবশ্য ছিলেন কো-অথর।
পাঠ্যপুস্তকের
পাশাপাশি সেই ছোটোবেলা থেকেই তাঁর ছিল গল্পের বইয়ের নেশা।
শুধু গল্পই নয় – গল্প, কবিতা, ভ্রমণকাহিনি, প্রবন্ধ – অর্থাৎ ছাপার অক্ষরে যা পেতেন পড়ে ফেলতেন।
এর মধ্যে বিশেষভাবে কেন যে রহস্য-রোমাঞ্চ-গোয়েন্দা-কল্পবিজ্ঞান গোত্রের গল্প-উপন্যাসগুলোই তাঁকে বেশি টানল, তা বলা মুশকিল।
তবে অনীশদার ছোটোবেলায়, মানে ষাটের দশকে, খুব সস্তার তিনটে রহস্য-পত্রিকা প্রকাশিত হত। পত্রিকাগুলোর জনপ্রিয়তা ছিল বিশাল।
তাদের নাম ‘মাসিক রহস্য পত্রিকা’, ‘মাসিক রোমাঞ্চ’ এবং ‘মাসিক গোয়েন্দা’। কিশোর
অনীশ দেব স্বপনকুমার, দীনেন্দ্রকুমার রায় কিংবা নীহাররঞ্জন গুপ্তের গোয়েন্দা গল্পের পাশাপাশি এই পত্রিকাগুলোও নিয়মিত পড়তেন।
জঁর ফিকশনের প্রতি যে তাঁর আজীবনের আকর্ষণ, তার সূত্রপাত নিশ্চয় সেখানেই।
তারপর যেটা ঘটল, সেটা সচরাচর ঘটে না।
মাত্র ষোলো-বছর বয়সে তিনি নিজেই লিখে ফেললেন ‘ভারকেন্দ্র’ নামে একটা ছোটো গোয়েন্দা গল্প এবং সেটা পাঠিয়ে দিলেন ‘মাসিক রহস্য পত্রিকা’-য়।
গল্পটা ওই পত্রিকায় প্রকাশিতও হল।
হ্যাঁ, মাত্র ষোলো বছর বয়সে।
সেই যে শুরু হল, আর তাঁর কলম থামেনি, যতক্ষণ না মৃত্যু এসে তাঁকে থামিয়েছে।
পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে পরিব্যাপ্ত এই লেখক-জীবনে তিনি ছোটোদের উপযোগী বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ লিখেছেন, লিখেছেন তাঁর আরেক প্রিয় বিষয় ধাঁধা নিয়ে বই।
অজস্র বিদেশি গল্প বাংলায় অনুবাদ করেছেন।
এমনকি মূল ধারার গল্প-কবিতাও এক-দুটি লিখেছিলেন; কিন্তু ওই ষোলো-বছর বয়সেই তিনি যেন ঠিক করে নিয়েছিলেন, জঁর-ফিকশনের প্রতিই নিবেদিত থাকবেন।
কেন আর কিছু লিখলেন না, এই প্রশ্ন করলেই অনীশদা মুচকি হেসে স্টিফেন কিং-কে কোট করতেন – “Why do you assume that I
have a choice?” অস্যার্থ, “আমার আর উপায় কী ছিল বলে মনে হয় আপনার?”
ঠিকই বলতেন।
একেক লেখকের মনের মাটিতে একেক ধরনের গল্পের ফসল ভালো জন্মায়।
অনীশ দেব নিজের মনের নির্দেশ অমান্য করেননি।
লেখার ব্যাপারে একবগগা হলেও, পাঠক হিসেবে শেষদিন অবধি তিনি ছিলেন সর্বগ্রাসী এবং স্মৃতিধর। শুনলে হয়তো কৌতুক বোধ করবেন, জঁর ফিকশনের বাইরে তাঁর প্রিয় দুটি সাহিত্যের ধারা ছিল আধুনিক বাংলা কবিতা এবং বাংলা নাটক।
একটু আগেই বলেছি, তাঁর অভিধানে শতকরা নিরানব্বই বলে কোনো শব্দ ছিল না।
কাজেই এই দুটি ধারাকেও তিনি পাঠক হিসেবে আত্মস্থ করে ফেলেছিলেন।
কতটা আত্মস্থ?
আধুনিক কবিতার প্রতি আমার আগ্রহের কথা তিনি জানতেন।
মনে আছে, ছ-সাত বছর আগে এক বইমেলায় ঘুরতে-ঘুরতে হঠাৎ এক তরুণী কবির নাম করে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, পড়েছেন ওঁর কবিতা?
সত্যিই পড়িনি তখনও, যদিও নাম শুনেছিলাম।
খুব বেশিদিন আগে সেই কবি কবিতা লেখা শুরু করেননি।
বললাম অনীশদাকে সে-কথা।
উনি শুনে কোনো মন্তব্য করলেন না; শুধু কিছুক্ষণের জন্যে কোনদিকে যেন চলে গেলেন।
একটু বাদে ফিরে এসে আমার হাতে সেই কবির দুটি বই উপহার হিসেবে তুলে দিলেন।
বললেন, “পড়ে দেখুন।
কী অসামান্য লিখেছে।”
এইভাবেই মৃত্যুর আগে অবধি তরুণতম বাঙালি কবির শেষতম কবিতাটিও তিনি পড়ে গেছেন। মনেপ্রাণে চাইতেন, যে-কোনো পত্রিকায় যেন ছড়া এবং কবিতার জন্যে একটুকরো সম্মানের আসন পাতা থাকে।
মানুষ যেন কবিতা পড়তে ভুলে না যায়।
কিশোর ভারতী পত্রিকার ছড়ার পাতার নেপথ্য সম্পাদক ছিলেন তিনিই।
নাটক নিয়েও তিনি একটা সময়ে ডুবে ছিলেন।
শুধু যে নাটক দেখতেন তাই নয়, নাটকের স্ক্রিপ্ট খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তেন।
এতটাই খুঁটিয়ে যে, সেইসময়ে তাঁর নাটক বিষয়ক প্রবন্ধগুলি নিয়মিত প্রকাশিত হত ‘বহুরূপী’ পত্রিকায়, শ্রদ্ধেয় কুমার রায় ছিলেন যে-পত্রিকার সম্পাদক।
এই যে বিপুল পরিমাণে এবং বিচিত্র বিষয়ে পড়াশোনা, এ কি শুধুই পড়ার আনন্দে? তাঁর সঙ্গে কথা বলে আমার কিন্তু তা মনে হয়নি।
অনীশদা বিশ্বাস করতেন, এবং আমাদের, মানে অনুজ-লেখকদের প্রায়ই বলতেন, ভালো-লেখকের লেখা এক-হাজার লাইন পড়লে, তবে নিজে এক-লাইন লিখতে পারা যায়।
বলতেন, কবিতা চর্চা না করলে গদ্যের ভাষা শুদ্ধ হয় না।
নাটক পড়াটাও ছিল তাঁর শিক্ষানবিশীর অঙ্গ।
তিনি ছিলেন সত্যজিৎ রায়ের প্রবল ভক্ত।
প্রায়ই বলতেন, সত্যজিতের গল্প-উপন্যাস থেকে তিনটে জিনিস শিখবার।
এক, শব্দের পরিমিতি – একটা শব্দকেও যেন বাহুল্যবোধে লেখা থেকে বাদ দেওয়া না যায়; দুই, ডিটেইলসের ব্যবহার – অল্প কয়েকটা আঁচড়ে একজন মানুষ কিংবা একটা বাড়ির ছবি পাঠকের মনে গেঁথে দেওয়া; এবং তিন, গল্প-উপন্যাসের চরিত্রদের নিজেদের মধ্যে কথোপকথন।
শুনলে যেন মনে হয়, সত্যিকারেই রক্ত-মাংসের দু’জন মানুষ নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। অনীশদা বলতেন, এই তিনটে ক্ষমতাই রায়-মশায় অর্জন করেছিলেন তাঁর স্ক্রিপ্ট লিখবার অভিজ্ঞতা থেকে।
আর অনীশ দেব নিজে এই ক্ষমতাগুলো অর্জন করেছিলেন স্ক্রিপ্ট পড়ে।
কাজেই বোঝা যাচ্ছে, শুধু পড়ার আনন্দে নয়; তিনি বই পড়তেন একজন ছাত্রের আগ্রহে।
শেষদিন অবধি নিজেকে ভেবে গেছেন সাহিত্যের একজন শিক্ষানবীশ।
প্রায়ই বলতেন, আমি এখনও লেখা শিখছি। প্রচুর পড়তেন।
পড়তে-পড়তে নিজের লেখাকে বদলাতেন।
অনুজ লেখকদের বলতেন প্রাণ খুলে তাঁর লেখার সমালোচনা করতে… কোথাও
ভুল থাকলে ধরিয়ে দিতে, এবং ঠিক এইজন্যেই পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি ‘ক্রাউড-পুলার’-এর সম্মানটা ধরে রাখতে পেরেছিলেন।
তাঁর সঙ্গে যাঁরা লিখতে এসেছিলেন, তাঁরা সেই কবেই কলমে ঢাকনা পরিয়ে চলে গেছেন; শুধু অনীশ দেবের উপন্যাস পড়ার জন্যে আজকের পনেরো-বছরের মেয়েটিও মুখিয়ে থাকত, যেভাবে পঁচিশ-বছর আগে থাকতেন মেয়েটির মা কিংবা পঞ্চাশ-বছর আগে থাকতেন তার দিদিমা।
আজকের ওই কিশোরীটিও অনায়াসে তাঁর ভাষার সঙ্গে, তাঁর উপমা এবং ডিটেইলিং-এর সঙ্গে একাত্ম হয়ে যেতে পারত।
এই কঠিন কাজটা শুধু প্রতিভা দিয়ে হয় না।
এর জন্যে যে অক্লান্ত চর্চার প্রয়োজন হয়, সেটা অনীশদা সবার অগোচরে এবং খুব নীরবে সারাজীবন চালিয়ে গিয়েছেন।
নিজের লেখার পাশাপাশি আরেকটা কাজ তিনি সারাজীবন ধরেই করে গেছেন – বাংলা জঁর-ফিকশনকে বাঁচিয়ে রাখা এবং তার উন্নতির চেষ্টা।
এই কাজে প্রতিকূলতা ছিল অনেক।
অভিজাত পত্রিকার সম্পাদক এবং লেখকেরা চিরকালই গোয়েন্দা-কল্পবিজ্ঞান-রহস্য ঘরানার লেখাকে হীন চোখে দেখতেন।
এখনও দেখেন।
ফলে একজন নতুন লেখক, ক্ষমতা থাকলেও, এই-ধরনের লেখায় হাত দিতে চায় না।
যদি বা লেখে, প্রকাশ করার জায়গার অভাবে কিছুদিন বাদেই হতোদ্যম হয়ে পড়ে।
এই অবস্থাটাকে পালটানোর জন্যে অনীশ দেব খুব সুচিন্তিতভাবে তিনটে কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন।
এক, বিদেশি জঁর ফিকশনের দৃষ্টান্তমূলক গল্প-উপন্যাসগুলোকে অনুবাদের মধ্যে দিয়ে সাধারণ বাঙালি পাঠকের সামনে নিয়ে এসেছেন – যাতে তাঁরা বুঝতে পারেন এই গোত্রের লেখার সাহিত্য-মূল্য কতখানি।
দুই, বাঙালি লেখকদের মধ্যে যাদের কল্পনার জোর আছে (ওই বস্তুটি না থাকলে জঁর-ফিকশন লেখা যায় না) তাদের দিয়ে নতুন গল্প-উপন্যাস লিখিয়ে নেওয়া।
এবং তিন, নিজের সম্পাদিত সংকলনের মধ্যে সেই লেখাগুলিকে একটা প্লাটফর্ম করে দেওয়া।
এইখানেই আসে সম্পাদক-অনীশ দেবের কথা।
মূল প্রসঙ্গে ঢুকবার আগে একটা কথা বলে নিই। Book-Production-এর
ক্ষেত্রে অনীশ দেব ছিলেন একজন জহুরি।
একটা বইয়ের পাতার মাপ কেমন হবে, কতটা থাকবে তার পাতার মার্জিন, কোথায় বসবে ইলাস্ট্রেশন, কেমনই বা হবে তার প্রচ্ছদ এবং অক্ষরের ‘ফন্ট’ – এইসব বিষয়ে তাঁর ধারণা ছিল স্বচ্ছ; এবং এতটাই স্বচ্ছ যে, আমি কলেজ-স্ট্রিটের Book-Production-এর আরও দুই কিংবদন্তি-পুরুষ প্রয়াত বাদল বসু এবং শ্রী ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়কে দেখেছি, হাতে নিজেদের প্রকাশনার একটি নতুন বই নিয়ে খুব শ্রদ্ধার সঙ্গে অনীশদার মতামত শুনে চলেছেন।
তাঁর কাছ থেকে বুঝে নিতে চাইছেন, প্রোডাকশনের কোথায় ভুলভ্রান্তি থেকে গেল।
নিশ্চয় আমার দেখার বাইরে আরও অনেক প্রকাশকই তাঁর কাছে পরামর্শ নিতেন।
ফলে অনীশদা নিজে যখন কোনো সংকলনের সম্পাদনায় হাত দিতেন, তখন প্রথমেই প্রকাশককে ছুটি দিয়ে দিতেন।
সেই সংকলনের প্রচ্ছদ থেকে ব্লার্ব অবধি পুরোটাই থাকত তাঁর নিজের হাতে।
এমন নিঃশর্ত পৃষ্ঠপোষকতা দেবার মতন প্রকাশক কি ছিলেন কলেজ-স্ট্রিটে?
হ্যাঁ, একজন তো ছিলেনই, যিনি না থাকলে অনীশ দেবের এই বহুমুখী প্রতিভা জনসমক্ষে আসত না। তাঁর নাম শ্রী ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়।
লেখক, সম্পাদক, প্রকাশক এবং সংগঠক এই-মানুষটির পরিচয় নতুন করে দেওয়ার কিছু নেই।
নতুন কথা যেটা বলার, সেটা হল, অনীশ দেব এবং ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সম্পর্কটা ছিল দুই সহোদর ভাইয়ের চেয়েও বেশি আন্তরিক।
জীবিত অবস্থায় অনীশ দেবের প্রতিভার স্পেকট্রাম যদি পুরোপুরি কারও চোখে ধরা দিয়ে থাকে, তাহলে তা ত্রিদিবদার চোখেই।
এবং সেই কারণেই অনীশদা যখনই নতুন কিছু করতে চেয়েছেন, ত্রিদিবদা বিনা প্রশ্নে তাঁর নিজের প্রকাশনা পত্রভারতী এবং পত্রিকা কিশোর ভারতীর সম্পূর্ণ ইনফ্রাস্ট্রাকচার তাঁর ব্যবহারের জন্যে হাট করে খুলে দিয়েছেন।
ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সশ্রদ্ধ লালন ছাড়া অনীশ দেবের সৃষ্টির উদ্যম এই স্ফূর্তি পেত না বলেই আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস।
আপনারা জানেন, অনীশ দেবের সম্পাদিত বইগুলোর আর্কাইভাল-ভ্যালু কতখানি।
আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত ‘সেরা কল্পবিজ্ঞান’ এবং ‘সেরা কিশোর কল্পবিজ্ঞান’ এই দুটি বইকে বাংলা কল্পবিজ্ঞানের আকর-গ্রন্থ হিসেবে মানা যায়।
তবু একটা সময়ে এসে অনীশদার মনে হল, ওই বই দুটো যখন প্রকাশিত হয়েছিল, তার পরেও তো বাংলার নবীন লেখকেরা আরও অনেক চমৎকার কল্পবিজ্ঞানের গল্প লিখে ফেলেছেন।
ফলে এবার তিনি শিশু কিশোর অ্যাকাডেমির সহযোগিতায় প্রকাশ করলেন ‘সেরা কিশোর কল্পবিজ্ঞান, সেকাল থেকে একাল’। এছাড়াও
পত্রভারতী থেকে একের পর এক প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সম্পাদিত ‘শতবর্ষের সেরা রহস্য উপন্যাস’, ‘খুনির রঙ’, ‘সেরা ১০১ ভৌতিক অলৌকিক’ ইত্যাদি অসামান্য সব অ্যানথলজি।
সব নাম এই-মুহূর্তে মনেও পড়ছে না।
এর মধ্যে কয়েকটির প্রস্তুতিপর্বে অনীশদার পাশে থাকার সুবাদে তাঁর একনিষ্ঠ কর্মপদ্ধতি খুব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল।
সাধারণত ভৌতিক, অলৌকিক বা থ্রিলারের বাজার-চলতি সংকলনগুলোতে, আগের দশটা সংকলন থেকে খামচে খামচে এখান থেকে দুটো, ওখান থেকে তিনটে গল্প তুলে এনে পাশাপাশি বসিয়ে দেওয়া ছাড়া সম্পাদকের আর কোনো কাজ থাকে না।
সম্পাদক নয়, তাঁদের বড়োজোর বলা যায় সংগ্রাহক।
কিন্তু অনীশ দেব তো অন্য ধাতুতে গড়া লোক।
তাই তাঁর কাজ শুরু হত লেখক খোঁজার মধ্যে দিয়ে।
আগেই বলেছি, তিনি ছিলেন স্মৃতিধর।
একবার যা পড়েছেন তা কখনোই ভুলতেন না।
পঁচিশ বছর আগে পড়া বই নিয়েও আমার সঙ্গে এমনভাবে আলোচনা চালিয়ে গেছেন, চরিত্রদের নাম সমেত, যাতে আমি ভেবেছিলাম তিনি বোধহয় সদ্যই বইটা পড়েছেন।
যাই হোক, সেই স্মৃতি থেকেই তুলে আনতেন অনামী নতুন লেখকদের নাম – যাদের হয়তো একটাই মাত্র ভালো গল্প তিনি কোনো পত্রিকায় পড়েছেন।
যতক্ষণ না তাঁদের খুঁজে পাচ্ছেন এবং তাঁদের দিয়ে নতুন আরেকটি গল্প লিখিয়ে নিতে পারছেন, ততক্ষণ তাঁর সংকলন বেরোবে না।
এই মুহূর্তে মনে পড়ছে, ‘সেরা ১০১ ভৌতিক অলৌকিক’ বইটার জন্যে কীভাবে তিনি খুঁজে বার করেছিলেন দেবার্চন বসু এবং বিতান শিকদার নামে দুই নবীন লেখকের হদিস। সংকলনটি পড়লে বুঝতে পারবেন, তাঁর এই পরিশ্রমে বাংলা সাহিত্য কতটা লাভবান হয়েছিল।
প্রসঙ্গত একটু নিজের কথাও বলতে হচ্ছে।
অনেক বছর আগে আমি দেশ পত্রিকা আয়োজিত রহস্য-গল্প প্রতিযোগিতায় ‘রক্তকস্তুরি’ নামে একটা রহস্য-গল্প লিখেছিলাম।
সেটা আমার লেখক-জীবনের শুরুর দিকের কথা।
স্রেফ নিজের নামটাকে পাঠকদের কাছে একটু পরিচিত করার লোভ থেকেই গল্পটা লিখেছিলাম এবং ওই ধারায় দ্বিতীয় কোনো গল্প লিখবার ইচ্ছেও ছিল না।
সমস্যা হল, গল্পটা অনীশদার চোখে পড়ে গিয়েছিল।
তিনি আর ত্রিদিবদা মিলে, না, আমার ফোন নম্বর নয়, ফোন তখন ছিলও না, কোনোরকমে আমার বাড়ির ঠিকানাটা খুঁজে পেয়েছিলেন এবং একটা চিঠি দিয়ে আমাকে পত্রভারতীর দপ্তরে ডেকে পাঠিয়েছিলেন।
এই দুই অগ্রজের কল্যাণে সেদিন থেকে যে জঁর-ফিকশন লিখতে শুরু করেছিলাম, এখনও থামতে পারিনি।
যে কথাটা বলার জন্যে এই প্রসঙ্গের অবতারণা করলাম, সেটা হল, আমার ঠিকানা খুঁজে বার করতে ওঁদের সময় লেগেছিল তিন-বছর।
হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন – তিন-বছর।
তিন বছর ধরে অনীশদা একজন নবীন লেখকের খোঁজ চালিয়ে গিয়েছিলেন, কারণ তাঁর মনে হয়েছিল এই ছেলেটি জঁর-ফিকশন লিখতে পারবে।
এইরকমই ছিল তাঁর গোঁ। এই কাজটা কি এখন কোনো সম্পাদক করেন, এই ট্যালেন্ট হান্টিং-এর কাজটা? আমার সন্দেহ আছে।
শুধু তো খুঁজে বার করাই নয়, তারপরেও থাকে তাঁকে লেখায় স্থিতু করার কাজ।
তার মানে কিন্তু এই নয় যে, তিনি কাউকে লেখা শেখাতেন।
একদমই না।
তাঁর মতন একজন সাহিত্যবোদ্ধার নিশ্চয়ই এইটুকু বোঝার ক্ষমতা ছিল যে, লেখা কাউকে শেখানো যায় না।
প্রতিটি লেখকই তাঁর নিজের প্রস্তুতি এবং ক্ষমতা অনুযায়ী লেখেন।
হাতের লেখার মতোই লেখার ধরণকেও বদলানো যায় না, বদলানোর চেষ্টা করাও উচিত নয়।
তাহলে তিনি কী করতেন?
তিনি লেখালেখির বাস্তব জগতটায় পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করতেন।
লেখালেখির ওই বাস্তব-দুনিয়ার বাইরে যারা আছেন, তাঁরা ধারণাও করতে পারবেন না, ওই জগতে একজন তরুণ লেখকের টিকে থাকাটা কী কঠিন।
বুদ্ধদেবের তপস্যার সময় আর ক’জন ‘মার’ তাকে ভয় দেখাতে এসেছিল? তার চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক ‘মার’ কলেজ-স্ট্রিটের বইপাড়ায় প্রতিদিন ঘুরে বেড়ায় আর কোনো তরুণ কিংবা তরুণীকে সাহিত্যের তপস্যায় সামান্য সিদ্ধি পেতে দেখলে তাকে যতভাবে পারে হতোদ্যম করে।
এখন সোশাল-মিডিয়ার রমরমার যুগে মারেদের হাত আরও লম্বা হয়েছে।
একটা সদ্য প্রকাশিত বই কিংবা লেখাকে দলবদ্ধভাবে কুৎসার জলে ধুইয়ে দেওয়া এখন খুবই সহজ।
আক্রমণের মুখে বিমূঢ় তরুণ-লেখকদের কাছে অনীশ দেব ছিলেন বোধিবৃক্ষের ছায়া।
দু-হাত দিয়ে তিনি আগলে রাখতেন তাঁর অনুজদের।
বার বার কানের কাছে জপ করতেন, “ক্রমাগত ভালো লিখে যাওয়া ছাড়া আপনার আর কোনো কাজ নেই।
কে কী বলছে, তাতে কান দেবেন না।
আপনি শুধু লিখে যান, বাকিটা আপনিই হবে।”
বলতেন, “সিক্সটি পার্সেন্ট পাবার মতন লেখা যে কেউ লিখতে পারে।
ওতে হবে না।
আপনাকে সত্তর আশি পেতে হবে।”
বলতেন, “লেখকের কাছে পত্রিকার কোনো গোষ্ঠী নেই, কোনো দল নেই।
পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি পত্রিকার দপ্তরে যেন আপনার একটা লেখা জমা পড়ে থাকে।
মনোনীত হবে না তো হবে না।
আপনি নতুন আরেকটা লেখা লিখতে শুরু করবেন।”
বলতেন, “নিজের আইডেন্টিটি তৈরি করুন।
আপনার লেখার স্বাদটা যেন পাঠক আর কারুর লেখার মধ্যে না পায়।
ওই স্বাদ পেতে গেলে তাকে যেন আপনার কাছেই বার বার ফিরে আসতে হয়।”
এবং বার বার আমাদের সবার কানে কানেই যেটা বলতেন, “পাঠক হচ্ছে লেখকের কাছে ভগবান।
তাকে কোনোদিন নিজের চেয়ে বোকা ভাববেন না।
নিজের লেখাকে পাঠকের চোখ দিয়ে দেখুন, বিচার করুন।
তবেই সাফল্য পাবেন।”
আমি একা নই।
ইতোমধ্যেই অনীশদার স্মৃতিতে আমার অন্যান্য লেখক-বন্ধুরা যা বলেছেন, যা লিখেছেন, তার মধ্যে দেখেছি বার বার ঘুরেফিরে আসছে অভিভাবক অনীশ দেবের কথা।
বাংলা সাহিত্যের সমস্ত গোষ্ঠী, সমস্ত দলাদলির ঊর্ধ্বে ছিল যাঁর অবস্থান।
বইমেলায় তাঁকে ঘিরে-ধরা পাঠকদের ভিড়ের দিকে তাকিয়ে অনায়াসে তিনি বলতে পারতেন, “শুধু আমার বই পড়লে হবে? একে চেনেন? এর নাম অমুক।
খুব ভালো লিখছেন।
যান, ওর বই নিয়ে আসুন।” এবং এই কাজটা তিনি যে শুধু জঁর-ফিকশনের জন্যেই করতেন, তা নয়।
সামগ্রিকভাবে বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি ধারার প্রতিটি লেখকের জন্যেই করতেন।
এই মহত্ত্ব, এই করুণা আর কোথায় পাব?
এপ্রিল মাসের আঠাশ তারিখে আমাদের মাথার ওপর থেকে সেই বৃক্ষের ছায়া সরে গেল।
আমরা খুব দীন হয়ে পড়লাম।

----------
ছবি - সংগৃহীত
ছবি - সংগৃহীত
অনীশ দা অভিভাবক হিসেবে যেমন কোমল ছিলেন ততটাই কঠোরও ছিলেন। আদতে ছিলেন স্নেহের খনি।
ReplyDeleteঅনীশ দেব স্মরণে আজ পর্যন্ত যত লেখা পড়েছি তার মধ্যে এটা সেরা। অনীশ দেবের সমস্ত সত্তার উপর যেভাবে আলোকসম্পাত করা হয়েছে এই লেখায় তা আগে কোথাও পাইনি। ফলে এই প্রবন্ধ শুধুমাত্র ওবিচুয়ারি কিংবা স্মরণিকা হয়ে আটকে থাকেনি, এক অসাধারণ মাত্রায় পৌঁছে গেছে।
ReplyDelete