
সম্পত্তির ধাঁধা
[দ্বাত্রিংশৎপুত্তলিকা নামে সংস্কৃত গল্প-সংকলনের থেকে নেওয়া এটি চব্বিশ নম্বর গল্প]
অনুবাদঃ মৌ দাশগুপ্ত
বিক্রমাদিত্যের
রাজ্যে পুরন্দরপুরী নামে এক নগরী ছিল। সেখানে এক মহাধনী বণিক থাকতেন। সেই মানুষটি
তাঁর চার ছেলেকে ডেকে বললেন, “দ্যাখো বাবারা! আমি মারা গেলে পরে তোমরা চার ভাই
একসঙ্গে থাকতেও পারো আবার না-ও পারো, কারণ পরে তোমাদের মধ্যে বনিবনা না-ও থাকতে
পারে। তাই বেঁচে থাকতেই আমি তোমাদের মধ্যে ‘এটা বড়ো ছেলের, এটা মেজো ছেলের –’
ইত্যাদিক্রমে আমার সব সম্পত্তি ভাগ করে দিয়ে যাচ্ছি। সব কিছুই চার ভাগ করে ওই
খাটের নিচে আমি পুঁতে রেখে যাব। তোমরা বড়ো, মেজ, সেজো, ছোটো – এই অনুযায়ী সেই
ভাগগুলি নেবে।” তাঁর এই কথায় ছেলেরা সবাই রাজি হল।
তারপরে
একদিন তিনি মারা গেলেন। তাঁর মারা যাওয়ার পর তাঁর চার ছেলে মাত্র এক মাস একসঙ্গে
থাকতে পারল। তারপরেই তাদের বউদের মধ্যে ঝগড়া লাগল। এই অশান্তিতে জেরবার হয়ে চার
ভাই ঠিক করল, এখানে খামোখা গোলমাল করে লাভ কী? বাবা তো বেঁচে থাকতেই আমাদের
চারজনের জন্যে সম্পত্তি ভাগ-বাঁটোয়ারা করে গেছেন। তাহলে তাঁর ওই খাটের নিচের মাটি
খুঁড়ে যেমন ভাগ করেছেন সেই মতো প্রত্যেকে নিজের ভাগ বুঝে নিয়ে আলাদা হয়ে গেলেই
ঝামেলা মিটে যায়, আমরা বেশ শান্তিতে যে যার মতো থাকতে পারব। সেই খাটের নিচের মাটি
একটু খুঁড়তেই চারটি পাত্র পাওয়া গেল, প্রত্যেকটি পাত্রে একটি করে পুঁটুলি, সেই
পুঁটুলিগুলোর মধ্যে একটাতে ছিল মাটি, একটাতে ছাই, আরেকটিতে হাড় আর একটিতে ছিল কিছু
আমপাতা। এই চার পুঁটুলি দেখে তো চার ছেলে তাজ্জব। তারা হতভম্ব হয়ে বলাবলি করতে
লাগল, “এ বাবা! আমাদের বাবা যেভাবে ধন ভাগ করে দিয়েছেন তা বুঝবে এমন সাধ্যি কার
থাকতে পারে?” এই সব ভেবে তারা তো রাজার সভায় চলল। রাজার সামনে সব বৃত্তান্ত খুলে
বলল। রাজার সভাসদরা এই ধন ভাগের মাথা মুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারলেন না। তারপর চার ভাই
যেখানেই কোনো পণ্ডিতের খোঁজ পায়, সেখানেই ছুটে গিয়ে তাঁদেরকে সেই সম্পত্তি বাঁটোয়ারার
অর্থ জিজ্ঞেস করে। কিন্তু কেউই এর মানে কী তা বলতে পারেন না।
এমন
সময়ে রাজা শালিবাহন এক কুমোরের বাড়িতে লুকিয়ে বাস করছিলেন। তিনি এই বৃত্তান্ত
শুনতে পেয়ে বললেন, “এতে না বোঝারই বা কী আছে, আর আশ্চর্য হবারই বা কী আছে?” তারপর
তাঁর কথা শুনে সবাই যখন তাঁকেই এই অদ্ভুত ভাগ-বাঁটোয়ারার অর্থ জিজ্ঞেস করল, তখন
তিনি বললেন, “এই চারজনই হচ্ছে একজন বণিকের পুত্র। বেঁচে থাকতেই এদের বাবা বড়ো,
মেজো, সেজো ইত্যাদিক্রমে নিজের সম্পত্তি ভাগ করে দিয়েছেন। তাই এখানে যেহেতু বড়ো
ছেলের জন্যে সবার ওপরে রাখা পাত্রে মাটি পাওয়া গেল, তার মানে তিনি তাঁর সম্পত্তির
মধ্যে সমস্ত জমিগুলি তাকে দিয়ে গেছেন। দ্বিতীয় ছেলের হাঁড়িতে আমপাতার গুচ্ছ, এর
মানে তাকে তাঁর সমস্ত শস্যের মালিকানা দিয়েছেন। তৃতীয়জনের পাত্রে রয়েছে হাড়, তার
মানে তাকে তার বাবা নিজের যাবতীয় গবাদি পশুগুলি দিয়ে গেছেন আর চতুর্থ পুত্রের পাত্রের
ছাই বোঝাচ্ছে তাকে তিনি তাঁর সঞ্চিত সোনাদানা দিয়ে গেছেন।” এইভাবে শালিবাহন এই
সম্পত্তির বাঁটোয়ারার মানে বুঝিয়ে দিতে চার ভাই খুশি হয়ে নিজেদের নগরে ফিরে গেল।
--------
ছবিঃ সুকান্ত মণ্ডল
এই গল্প তো আগেও পড়েছি তবু তোমার অনুবাদে আবার পড়ে খুব ভালো লাগলো
ReplyDelete