
রাজকুমারীর কলম
সুস্মিতা কুণ্ডু
_____
সুস্মিতা কুণ্ডু
রাজকুমারীর কলমখানি
হারিয়ে গেছে। সারা রাজপুরী জুড়ে ‘খোঁজ খোঁজ’! চারিদিক তোলপাড়।
দাস-দাসী-সেপাই-সেনাপতি সবার মুখে ‘কই গেল?’, ‘কোথায় গেল?’, ‘এখানেই তো ছিল!’, রব।
রানিমা পাকশালার কাজ
ফেলে দৌড়ে এসে শুধোন, “বল দেখি কোথায় শেষ দেখেছিলি মা?”
রাজকুমারী মুখ ভার করে
বলেন, “জানি নে!”
রাজামশাই রাজসভার কাজ
মুলতুবি রেখে, ছুটে এসে বলেন, “বল তো মা শেষ কী লিখেছিলি?”
রাজকুমারী গোমড়া মুখে
জবাব দেন, “মনে নেইকো!”
দাসদাসীরা বিশাল বড়ো
রাজমহলের সব ক’খানি ঘর তোলপাড় করে কলম খুঁজেই চলে। এই খাটের তলায়, ওই কেদারার নিচে, সেই আলমারির মাথায়। এমনকি
রাজপুরীর সবার ওপরের মহলে ঠাকুরঘরের নকুলদানার কৌটোটির ঢাকনাটিও খুলে দেখে সবাই।
কতবার তো এমন হয়েছে রাজকুমারী লুকিয়ে লুকিয়ে ঠাকুরঘরে নকুলদানা বাতাসা মিছরির
টুকরো খেয়ে আসেন। সেখানেই যদি কলমটা হারিয়ে থাকে। ওদিকে সেপাইরা খোঁজে রাজদরবারে,
রাজামশাইয়ের সিংহাসনের গদি হাঁটকায়। রাজকুমারী মাঝেসাঝে বাবার সিংহাসনে বাবার কোলে
বসে বসে লেখাপড়া করেন কিনা। যদি কোনোভাবে সেখানে হাত থেকে পড়ে গিয়ে থাকে কলম।
নাহ্! কোথাও নেই! কোনোখানটিতে
নেই! কলম কি পাখনা গজিয়ে ডানা মেলে পাখির মতো উড়েই গেল? নাকি সাঁতার কেটে
রাজমহলের নীল সরোবরের লাল মাছের দলের সঙ্গে মিশে গেল, কে জানে!
এদিকে সাঁঝ নেমে আসে,
রানিমা দুঃখু দুঃখু মনে শাঁখে ফুঁ দিয়ে ঠাকুরকে ডাকেন, কলমটা যেন শিগগিরই মেলে।
রাজামশাই সেদিনের মতো রাজসভার কাজে ইতি ঘোষণা করে গড়গড়ায় টান দিয়ে মাথা নাড়েন
ভাবনায়। মেয়ের কলমটা গেল কোথায়?
গুরুমশাই খড়ম খটখটিয়ে
সময়মতো এসে হাজির। ভারি গলায় যতটা পারা যায় খাদে নামিয়ে কোমল সুরে ডাক দেন, “রাজকুমারী!
কই এসো মা পুঁথি নিয়ে। আজ তোমায় সাতের ঘরের নামতা পড়াব। গ এর পাশে ল আর ল এর পিঠে
প চাপলে কী হয় জানো? সেইটে শোনাব।”
রাজকুমারী কথা কইলে তো!
আরও কয়েকবার সাধাসাধি
করেও রাজকুমারীর সাড়া না পেয়ে শেষমেষ বিফল মনোরথ হয়ে ফিরে গেলেন তিনি।
রাজকুমারীর সেই এক জেদ,
এক বায়না। কলম না মিললে কোনও কথাই শুনবেন না তিনি, কোনও কাজই করবেন না। রুপোয়
গড়া, সোনার নিবওয়ালা, মাথায় ময়ূরের পালক লাগানো কলমটি যে রাজকুমারীর ভারি শখের।
তার ওপর কলমের গায়ে হিরের কুঁচি বসিয়ে বড়ো বড়ো করে রাজকুমারীর নাম খোদাই করা।
সেই কলমটা না পেলে কিছুতেই তিনি পাঠশালে যাবেন না, লেখাপড়া করবেন না, গুরুমশাই
শতবার ডাকলেও না, মা হাজারবার সাধলেও না, বাবা কোটিবার বকলেও না। কিছুতেই না!
শুধু কি লেখাপড়া থেকেই
মুখ ফেরালেন রাজকুমারী? রাতের বেলা একগাল খাবারটুকুও মুখে তুললেন না! রানিমা এত
সাধ করে পোলাও রাঁধলেন, সোনামুগের ডাল, ছানার ডালনা, গরম গরম বেগুনি, সরোবরের ইয়া বড়ো
কাতলা মাছের কালিয়া, আরও কত কী তরিতরকারি রাঁধলেন ঘেমে নেয়ে। এমনকি লাল লাল
বেদানার দানা ছড়ানো নলেন গুড়ের পায়েসও তয়ের করলেন। তার সুবাসে সারা রাজবাড়ি ম ম
করছে। তবু রাজকুমারীর গোঁসা কমল না, মন গলল না, একটা খাবারও দাঁতে কাটলেন না তিনি।
আর তিনি না খেলে কি আর রানিমা, রাজামশাই কারোর মুখে খাবার রোচে?
এ তো বেজায় মুশকিল!
একটা কলমের কারণে যে সবকিছু অচল হতে বসল। সবাই করুণ মুখে ঘুমোতে গেলেন যে যার ঘরে।
পরের দিন খুব ভোরের
বেলায় রাজকুমারীর ঘুম-চোখ খুলে গেল এক বাঁশির সুরে। এমনি করে বাঁশি কে বাজায়? আগে
তো এ দেশে এমন করে বাঁশি বাজাতে কাউকে শোনেননি। গায়ের রেশমের চাদর সরিয়ে, নরম
পালকের বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন রাজকুমারী। বাগান থেকেই যেন সুরটা ভেসে আসছে।
রাজকুমারী চোখ দুটি হাতের চেটোয় রগড়ে নিয়ে গুটি গুটি পায়ে এগোলেন দরজার দিকে।
দরজার দুই পাশে দুই সেপাই তখনও কাত হয়ে শুয়ে ভোঁস ভোঁস নাক ডাকছে। রাজকুমারীর
শুরুতে একটু রাগ হল! এই পাহারা দেওয়ার ছিরি? অ্যাঁ! তারপর নিজেই আবার ভাবেন, আহা
রে! বেচারা মানুষগুলো কাল সারাবেলা রাজকুমারীর কলম খুঁজতেই তো হয়রান হয়েছে। কোথায়
না কোথায় ছুটোছুটি করেছে লোকগুলো। মনটা একটু খারাপই লাগে, একটু কেমন দোষী দোষী বোধ
হয়। এতজন মানুষকে এভাবে নাকানিচোবানি খেতে হল কলম খুঁজতে গিয়ে।
সেপাইদের না জাগিয়ে
ধীরে ধীরে পাশ কাটিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলেন রাজকুমারী। রাজমহলের খাস বাগান! সেখানে
দুনিয়ার সব ফলের গাছ, সবরকম ফুলের গাছই হাজির। দূর দূর দেশ থেকে কতরকমের চারা নিয়ে
আসে রাজার সেপাইরা ঘোড়া হাঁকিয়ে গিয়ে। সেইসব চারাগাছ ভারী সাবধানে মাটিতে পোঁতে
রাজবাড়ির মালিরা সকলে। তারপর তাইতে জল দাও, সার দাও, পাতার ওপর থেকে ধুলো ঝেড়ে
দাও, পোকায় খেল কিনা নজর করো। তবেই না রাজকুমারীর বেণীতে সাজানোর সেরা ফুলটি
ফুটবে, তবেই না রাজকুমারীর সরবত বানানোর সবচেয়ে মিঠে ফলটা ফলবে।
বিশাল বাগানের ঠিক
কোনখানটি থেকে বাঁশির সুর ভেসে আসছে সেটা অনুসরণ করতে করতে এগোন রাজকুমারী।
বাগানের ঠিক মাঝখানটিতে একটা ঝাঁকড়া বুড়ো বটগাছ। ইয়া মোটা তার গুঁড়ি। কতশত ঝুরি
নেমেছে সেই গাছ থেকে। গাছের তলাটা পাথর দিয়ে বাঁধিয়ে সুন্দর এক বেদি বানানো। সেই
বেদির ওপর কে যেন বসে আছে। বাঁশিতে সুরটি সেই মনে হয় ধরেছে। রাজকুমারী আরও একটু
এগিয়ে দেখে, এ তো তাঁরই বয়সি একটা ছোটো মেয়ে। রাজকুমারী অবাক হয়ে শুধোন, “কে গা
তুমি? কাদের মেয়ে? আগে তো কখনও দেখিনি তোমায় হেথা!”
মেয়েটি হঠাৎ করে অন্য
কারও গলা শুনে চমকে বাঁশি বাজানো থামিয়ে পেছন ফিরে চায়। অবাক চোখে চেয়ে দেখে
রাজকুমারীকে। কোমল গলায় বলে, “তুমি বুঝি রাজকুমারী?”
রাজকুমারী ঘাড় নাড়েন।
মেয়েটি ঝটপট উঠে দাঁড়িয়ে একটু ভয়ে ভয়ে বলে, “আমি বুঝি তোমার ঘুম ভাঙিয়ে ফেললুম?”
রাজকুমারী মেয়েটাকে ভয়
পেতে দেখে তড়িঘড়ি বলে ওঠেন, “না না! আমি তো উঠেই পড়েছিলুম। আসলে কাল আমার সাধের
সোনার নিবওয়ালা, ময়ূরপালক সাজানো, হিরেকুঁচির নাম লেখা, রুপোর কলমটি খোওয়া গেছে
কিনা। তাই আমার মন খারাপ ভারি।”
মেয়েটি বলে, “আমি জানি
রাজকুমারী। আমার বাবাও তো কাল সারাদিন সারা বিকেল এমনকি রাতেও মশালের আলোয় গোটা
বাগানময় খুঁজেছে তোমার কলমটি। তাও মেলেনি কলমটা। আজ তাই সকালে বাবা ঘুম ভেঙে উঠতে পারেনি। সেই কারণেই তো আমি ছুটে
এলাম বাগানের গাছগুলোয় জল দিতে। নইলে যে ওরা শুকিয়ে যাবে। গাছ মরে গেলে আমার বড়ো
দুঃখ হয়।”
রাজকুমারী অবাক হয়ে
মেয়েটার কথা শোনেন। ও তাহলে রাজার বাগানের মালির মেয়ে।
“তুমি বাঁশি বাজাতে
শিখলে কী করে? আর তোমার ওই ঝুড়িতে ওগুলো কী গো?”
মেয়েটি তার পাশে রাখা
ছোটো বেতের ঝুড়িটা থেকে ক’টা কাঠের খেলনা বার করে। একটা হাতি, একটা বল, একটা
খেলনা তরোয়াল, খান দুই পুচকে পুচকে পুতুল...
রাজকুমারী খেলনাগুলো
হাতে তুলে নিয়ে দেখেন। অপটু হাতে বানানো খেলনাগুলো, তবু যেন মন টানছে রাজকুমারীর।
মেয়েটা রাজকুমারীর হাসি
হাসি মুখ দেখে সাহস পেয়ে বলে, “এগুলো আমি নিজে বানিয়েছি তো, তাই অতটা নিখুঁত হয়নি
রাজকুমারী, তবে আমার বাবা খুব ভালো কাঠের খেলনা বানায় জানো। এই যে বাঁশিটা আমি
বাজালুম এটা তো আমায় বাবা-ই তৈরি করে দিয়েছে। এই দেখ...”
রাজকুমারী মেয়েটার
বাড়িয়ে ধরা হাতের মুঠোর বাঁশিটা চেয়ে দেখেন। ভারি সাধারণ একটা বাঁশি। কাঠের গোল
ফাঁপা নল, তাতে গোটাকয় ফুটো করা। না আছে সোনা, না আছে রুপো, না আছে হিরে মাণিক।
অথচ এই জিনিসটা দিয়েই কত মধুর সুর তুলছিল মেয়েটা। পুতুলগুলোও তো একেবারে সাদামাটা।
রাজকুমারীর খেলনামহলে চিনদেশী চিনেমাটির পুতুল, জাপানি খোকন পুতুল, আরও কত না দেশ
থেকে আনা নানারকম খেলনা থরে থরে সাজানো। তবুও তাদের নিয়ে খেলাই হয় না। এই পড়ে
যাবে, এই ভেঙে যাবে, এই ময়লা হয়ে যাবে সেই ভয়ে দাসদাসীরা শুধু ঝেড়েমুছে সাজিয়েই
রাখে দিনে একশোবার। ওইভাবে খেলায় একটুও মজা হয়? তোমরাই বলো? অথচ এই মেয়েটার ঝুড়ির
খেলনাগুলো দেখলেই যেন মনে হয় ‘আয় আয়’ করে খেলতে ডাকছে।
রাজকুমারী হাত বাড়িয়ে
একটা খেলনা হাতে তুলে নিয়ে বলেন, “আমি এটা নেব? দেবে আমায়? তার বদলে তুমি কী নেবে
বল? আমার বাবা তুমি যা চাইবে তাই দেবেন।”
মেয়েটি হেসে বলে, “ও
মা! ভারি তো একটা কাঠের খেলনা। তুমি নেবে বলেছ, এতেই আমি কত খুশি হলাম। এর আবার
দাম কীসের! আমি তো সারাদিন এমনি এমনি ওরকম কত খেলনা বানাই।”
রাজকুমারী একটু উৎসাহ
পেয়ে বলেন, “আমার সব সইয়েরা বলে রাজার মেয়েদের রাজবাড়ির উপযোগী খেলনা নিয়েই খেলতে
হয়, সেইরকম খাবার খেতে হয়, পোশাক পরতে হয়। তাই তো আমার কলম হারিয়ে গেছে বলে আমি
গুরুমশাইয়ের পাঠশালায় যাইনি। সোনার নিব, হিরেকুঁচোর নাম লেখা রুপোর কলম ছাড়া
পাঠশালে গেলে আমার মান থাকে বল? আমার সইরা যে সব হাসাহাসি করবে! ঠিক ওইরকম একটা নতুন কলম বাবা নিয়ে এলে তবেই আমি ফের লেখাপড়া করব।”
মালির মেয়ে গভীর চোখে তাকায়
রাজকুমারীর দিকে। বলে, “একটু বাঁশি বাজাব শুনবে?”
রাজকুমারী ঘাড় নাড়েন।
মালির মেয়ে কাঠের বাঁশিতে ফুঁ
দিয়ে ফের সুর তোলে। একটু পরে বাঁশি থামিয়ে বলে, “রাজকুমারী এই যে তুমি আমার বাঁশির
সুর শুনে আজ এত দূরে ছুটে এলে, চেয়ে দেখ এটা কত সাধারণ বাঁশি। সোনা রুপো দিয়ে গড়া
নয়কো। তবুও কত মিঠে সুরে বাজে। কোনও কিছু শিখতে গেলে শেখার সাধটাই যে বড়ো। তুমি সোনার কলমে লিখলে যা শিখবে, সাধারণ কলমে লিখলেও তো সেটাই শিখবে।
আর যে সইরা তোমায় এমন কথা বলে তারা কি তোমার সত্যিকারের সই? শুধু সোনা রুপো হিরেতেই
কি তোমার পরিচয়? এই দেখ, পাখি গায়, গাছে ফুল ফোটে, ফল ধরে, এদের কোনোটা বুঝি সোনায়
গড়া? যে পুঁথি তুমি পড় সেটা বুঝি রুপোয় গড়া? কেন মিছে তাহলে কলম হারিয়েছে বলে
তুমি এত উতলা রাজকুমারী?”
এতগুলি কথা বলে মালির মেয়ে একটু
হাঁপায়, থমকে যায়। মনে মনে ভাবে এত কথা রাজকুমারীকে বলা উচিত হল কি? উনি যদি রেগে
যান! যদি রাজামশাইকে গিয়ে বলেন, ‘মালির মেয়ের যত বড়ো মুখ নয় তত বড়ো কথা’! যদি
রাজামশাই মালিকে পরিবারসহ দেশের বাইরে তাড়িয়ে দেন কিংবা কারাগারে ভরে দেন। মালির
মেয়ের বুক ঢিপঢিপ করে।
ওদিকে রাজকুমারী যেন কেমন আনমনা।
সত্যিই তো! সোনাদানা দিয়ে গড়লেই কি একটা জিনিস বদলে যায়? হ্যাঁ দেখতে হয়তো একটু
বেশি চকচকেই লাগে, তবে কাজ তো সেই একই থাকে! কই এখন আর কলমটার ততটা অভাব বোধ করছেন
না তো। বরং পাঠশালে যেতে, সবার সঙ্গে সুর মিলিয়ে নামতা পড়তে, হাতের লেখা করতে মন
চাইছে, সে যে কলম দিয়েই হোক না কেন!
আলতো করে মালির মেয়ের হাতটা
নিজের হাতে নিয়ে রাজকুমারী বলেন, “তুমি আমার সই হবে? আজ থেকে তাহলে রোজ এসো
বাগানে? আমরা বাঁশি শুনব, কথা কইব, কাঠের খেলনা নিয়ে খেলব।”
মালির মেয়ে তো খুব খুব খুশি।
ঘাড় নেড়ে একগাল হেসে বলে, “আসব বই-কি সই! তুমিও কথা দাও আর মন খারাপ করবে না?
আগের মতো আবার সব কিছু করবে! রাজি?”
রাজকুমারী খুশিতে বলে ওঠেন, “রাজি!
রাজি! একশবার রাজি।”
মালির মেয়ে তখন সেই বেতের ঝুড়ি
থেকে একটা জিনিস বার করে রাজকুমারীর হাতে গুঁজে দেয়। তারপর বলে, “এটা তোমার। এখন
আমি যাই, কাল আবার আসব সই।”
এই বলে পালায় ছুটে।
রাজকুমারী হাতের উপহারটা নিয়ে
ধীরে ধীরে নিজের মহলে ফিরে আসেন। এদিকে সেপাই দু’জন জেগে উঠে রাজকুমারীকে দেখতে না পেয়ে রাজামশাইকে খবর দিতে
তো সারা রাজমহলে হইচই। কাল রাজকুমারীর কলম হারিয়েছে আর আজ রাজকুমারী নিজেই হারিয়ে গেছেন।
কী যে অপদেবতার নজর পড়েছে রাজমহলে! রানিমার চোখের জল বাধা মানছে না। রাজামশাই-ও
বেশ ভয় পেয়েছেন। কী বিপদ হল! ফের চারিদিকে খোঁজ খোঁজ। এমন সময় রাজকুমারী এসে
হাজির। রানিমা মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।
“কোথায় চলে গিয়েছিলি মা
রাগ করে?”
রাজামশাই মেয়ের মাথায়
হাত বুলিয়ে বললেন, “মন খারাপ করিসনে মা! আমি স্যাঁকরাকে এখনই খবর পাঠাব। সে আগের
কলমের থেকেও আরও বেশি ভালো কলম গড়ে দেবে। সোনার কলম, সোনার নিব, তাতে হিরেকুঁচি...”
রাজকুমারী মা আর বাবার
হাতদুটো ধরে মধুর হেসে বললেন, “থাক মা! আমার ওসব লাগবে না বাবা। এই দেখ, আমি ওর
চেয়েও দামি কলম পেয়ে গেছি। আমার আর কিছুটি চাই না।”
রাজামশাই আর রানিমা
চেয়ে দেখেন রাজকুমারীর হাতে একটা অতি সাধারণ কাঠের কলম। অপটু হাতে বাঁশের টুকরো
ছুলে ছুলে কেউ বানিয়েছে। রাজামশাই কিছু একটা বলতে গেলে রানিমা তাঁকে থামিয়ে মেয়ের
চোখের দিকে ইশারা করেন। রাজামশাই দেখেন হিরেকুঁচির ঝলক তো মেয়ের দুই চোখে।
রাজকুমারী একরাশ
হাসিখুশি বুকে নিয়ে নিজের ঘরে গেলেন। কাঠের কলমটার ওপর একটা নাম লিখতে হবে, না না
হিরেকুঁচি দিয়ে নয়, এমনি এমনিই।
এই যাহ্! মালির মেয়ের
নামটাই জানা হয়নি তো! রাজকুমারী হেসে ফেলেন মনে মনে। সই-এর আবার নাম কী! আর কলমের
ওপর কী লিখবেন সেটা নিয়েই বা এত ভাবার কী আছে? কাল ভোরেই বাগানে গিয়ে দেখাবেন
‘সই’-কে কলমে কী নাম লিখেছেন...
ছবিঃ অতনু দেব
No comments:
Post a Comment