
অরণ্যের ডাকে
পবিত্র চক্রবর্তী
সেই ছোট্ট থেকেই পায়ে সরষে। আমি ঘুরেফিরে বেড়াই। আসলে এককালে বড়োলোক বাপের বখাটে ছেলের
তকমা নিন্দুকেরা গায়ে একপ্রকার লাগিয়েই দিয়েছিল। কী আর করা! অনেকটা পথ চলে এটাই উপলব্ধি করলাম, আমি ঠিক যেমনটা চেয়েছিলাম,
হয়তো আজও তার খোঁজ করার জন্যই এই জীবন। তবে এখন তার সুফল কিছুটা পাই।
সালটা ঠিক তেমন মনে নেই, সম্ভবত ২০০৬-এর পরেই।
হিসাব মতো ১০টি বছর আগে।
হঠাৎ একদিন ঘুম থেকে উঠেই মন বেজায় ভালো। সঙ্গী করলাম বাইক। হাফ প্যান্ট আর টি-শার্ট আমার যেন রাষ্ট্রীয় বস্ত্র। আর পিঠে রুকস্যাক। তখন মোবাইল ছিল, কিন্তু ম্যাপে চোখ
লাগিয়ে রাস্তা খোঁজার ব্যবস্থা ছিল না।
পথ চলতি মানুষ, গুমটির আড্ডাবাজ বা নিদেনপক্ষে গোবর ল্যাপা
হাতের কাকিমারাই ছিলেন ম্যাপের ভাগ্য বিধাতা।
“রানীবাঁধের রাস্তা
কী এটাই?”
“হো গো, সামনের রাস্তাটা
ধঁরেইন সিধা চইলে যাও,” ক্ষনিক বিড়ি খাওয়া থামিয়ে কোনও বৃদ্ধ রাঢ় বাংলার উচ্চারণে আমি
করতে লাগলাম পথের অনুসন্ধান।
বর্তমানের এস এইচ ২ তখনও সেজে ওঠেনি, তাই খানিক যাই, আরেকটু থামি। ভাঙাচোরা তো বটেই, তার উপর রাস্তা
তো অচেনা। তবে
এই সব অচেনা রাস্তা কোনও কালেই প্রতিবন্ধকতা হয়নি। বরং কিছুটা উদ্দেশ্যহীন, অজানা পথ ক্রমশ সেই সকল মানুষের সান্নিধ্যে আনল, যারা
সমাজের অনেকটাই নীচে।
এদের বাহ্যিক প্রাচুর্য নেই, তবে রয়েছে ভালোবাসা,
সংস্কৃতি।
পলাশ, অর্জুন, আমলকী, বহেড়া আর বেশ কিছু
বেনামী গাছে ঘেরা রানীবাঁধ অঞ্চল।
বাঁকুড়া আর পুরুলিয়া জেলার সীমান্তে তার ঠিকানা। আমি যে সময়টা গেছিলাম, তখনও শহুরে
সভ্যতার লেশ বলতে চল্লিশটি পরিবারের মধ্যে একটি বা বড়োজোর দুটি বাড়িতে একশো ওয়াটের
বাতি জ্বলা ছাড়া প্রায় ৭১০০ হেক্টর জমি আর থ্যাবড়া মাথার পাহাড়ে আর কিছুই এসে পৌঁছয়নি। দুর্গাপুর থেকে এখানে আসতে মোট সময়
লাগে ঘন্টা আড়াই। এমন
জায়গায় যাওয়ার কয়েকটি কারণের মধ্যে প্রধান তিনটি কারণ হল – কাঁড়াখুটা খেলা, আদিবাসী শ্রেনির মানুষদের সান্নিধ্য
আর মহুয়া। যদিও
আজ বুঝি, অন্য কারণগুলোর মধ্যে তখন মনে হয় মহুয়াই বেশি আকৃষ্ট করেছিল।
কুমারী ও কংসাবতী
নদীর
সঙ্গমস্থলেই মুকুটমণিপুর।
খাতড়া শহরকে বাঁয়ে রেখে খানিক এগোলেই রয়েছে সুবিশাল জলাধার। আর তার ঠিক পাশ দিয়ে
মাটির রাস্তা। তখন যেহেতু শীতকাল, সেহেতু রুক্ষ ভূমি। ধুলো ওড়ে বেশি। সব কিছুকে
যদি উপেক্ষা করতে পারেন, দেখবেন আপনি এঁকেবেঁকে পাহাড়ে উঠতে শুরু করেছেন। আমি যেমন
করেছিলাম তাও করতে পারেন। জলাধারের পাশ বরাবর পাকা রাস্তা চলে গেছে। বাইকটাকে দাঁড়
করিয়ে নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দেখতে ব্যাগ থেকে ঈষৎ শক্ত পানীয় পেটে ঢেলে বেশ
কিছুক্ষণ বসেই ছিলাম (যদিও আমার মতো লক্ষ্মীছাড়া না হওয়াই ভালো)।
আর মনে মনে ভাবছিলাম,
ওই যে দূরে পাহাড় দেখা যাচ্ছে ওখান দিয়ে যদি হাতির পাল আসে তবে বেশ হয় (ঘটনাটা
সত্যি, কারণ দলমার হাতিরা আসে ওই পথ দিয়েই)।
আরও মিনিট তিরিশ বাইক চালানোর পর এলাম
পাহাড়ের উপর সেই গ্রামে। মূলত মাটির বাড়ি, খড়ের চাল। বাইকে চাপা ছোকরা দেখে একটু
অবাক হয়েছিলেন বৈকি। তবে দূরে সরিয়ে দেননি, নিপাট সারল্য। চারিদিকে একটা অন্ধকার
অন্ধকার ভাব। বুঝলাম খানিক পর সুজ্জি মামা অস্ত যাবেন। আমি এদের কাছে অচেনা, আর
ওরাও অচেনা আমার কাছে। তবে আমার বুনো চেহারা দেখে খানিক আশ্বস্ত হয়েই এক ওঁরাও
পরিবার থাকতে দিলেন। আসলে ব্যাপারটা হল, জীবনে আর কিছু রপ্ত না করতে পারলেও আমি
বরাবর যে কোনও মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে পারতাম। আমার অভিলাষ জানাতেই থাকতে দিলেন
একটা ঘরে।
এদিকে রাত বাড়ে যত, পাথরের বেডরুম ঠাণ্ডা
হয় তত। ঘরের দেওয়াল মাটি আর পাথর দিয়ে বানানো। ঘরের কর্তা বাড়ীর সব থেকে বৃদ্ধ ও
বুড়ো মুরগি নিজের হাতেই কাটলেন। আমি হ্যারিকেনের আলোয় দেখি দূরে ছোট্ট মাটির
দেওয়াল দেওয়া ছাদহীন রান্নাঘর। মোটা মোটা লাল ভাত আর দেশি মুরগির ঝোল, এককথায়
অসাধারণ। বিপত্তিটা বাধল পরের দিন ভোরে। শহরের মানুষ, ঘরের
মধ্যে ঘরেই প্রাতঃকৃত্য সারি, কিন্তু এখানে ধান খেতের পাশে নদীর ধারই হল সকালের
কাজ সারার একমাত্র উপায়। কিছু করার নেই। গেলাম, কিন্তু ফুরফুরে হাওয়ায় ঘুম এল ঠিকই,
বাকিটা ভিতরেই সেঁধিয়ে থাকল।
ভাইফোঁটার পরের দিন। মূলত অক্টোবর মাসে এই
ওঁরাও, মুন্ডা, ভূমিজ ও সাঁওতাল অধ্যুষিত গ্রামে হয় কাঁড়াখুটা খেলা। ‘কাঁড়াখুটা’ শব্দটার
অর্থ হল মোষকে খুঁটিতে বেঁধে বিশেষ একপ্রকার খেলা। দুপুরের পর থেকেই খেলাটা শুরু
হয়। গ্রামের ঠিক মাঝ বরাবর স্থানে বেশ গভীর গর্ত করে ঈষৎ মোটা একটা খুঁটি পোঁতা হয়।
তার সঙ্গে বেশ করে বাঁধা থাকে একটি মোষ। কানের পাশে বাজতে থাকে দামামা, মাদল, কাঁসর।
দলের জোয়ানরা মূলত হাতে ধুপকাঠি নিয়ে মোষের নাকের কাছে ধরবে আর অপরদিকে আরেক দল
মড়া মোষের শুকোনো চামড়া খুঁটিতে বেঁধে রাখা মোষের নাকের কাছে ধরে থাকবে।
সময় গড়ায়। মাদলের শব্দ, মানুষের আজব কলরব
ক্রমশ বাড়তে থাকে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঝনঝনা ঝন বাজনা আর কুপিত মোষের রক্তচক্ষু দেখতে
দেখতে মাথাটা বেশ টনটন করতে লাগল। আসলে এই পদ্ধতির মাধ্যমে ঘোষণা করা হয় কোন মোষ
আর তার সঙ্গে সেই মোষের মালিক, কে সেরা সেই বছরের। সেই মোষই বিজয়ী হবে যে রেগেমেগে
খুঁটি উপড়ে ফেলে জনা কয়েককে ঘায়েল করতে পারবে। হলও তাই। দেখি ঊর্ধ্বশ্বাসে মোষের দৌড় আর তার
সামনে কিছু মানুষ পড়ি কি মরি এদিক ওদিক ছিটকে পড়ছে। ওটাই উল্লাস, ওটাই সংস্কৃতি।
সুদূর ১০৩ কিলোমিটার (দুর্গাপুর থেকে) দূরের
পাহাড় ঘেরা নদী-বনাঞ্চল আর কিছু গ্রাম্য মানুষের এই অদ্ভুত সংস্কৃতি দেখতে দেখতে
সেদিন মনে হয়েছিল বাংলার বুকে এই কালো কালো মানুষগুলোর মোষ ফাইটিং-এর সঙ্গে
স্পেনের বুল ফাইট, অদ্ভুত একটা সাদৃশ্য। যদিও এখানে অবলা প্রাণীদের দৈহিক নির্যাতন
কম।
ধুলো মেখে সন্ধ্যায় গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে
টর্চের আলোয় সরু পথ দিয়ে হাজির হলাম নদীর ধারে। ছোট্ট করে আগুন জ্বালানো হল। পাড়ে
ছলাত ছলাত করে পলকা ঢেউ হালকা হাওয়ায় ভেঙে পড়ে। পূর্ণিমার রাতে চাঁদের টুকরো
টুকরো প্রতিবিম্ব। সঙ্গে বাকর মেশানো মহুয়া। আগে কোনোদিনই খাইনি। সুতরাং আদেখলার
মতো ঢকঢক করে এক-দুই-তিন গ্লাস গলায় দিলাম...
“আরে ধুর, এ তো জল খাওয়ালে হে...”
তার পরেরটা অবশ্য ইতিহাস। মাঝেমধ্যে ঘুম
ভাঙে সুড়সুড়িতে। সম্পূর্ণ ঘুম ভাঙল পরের দিন বেশ বেলা করেই। তাকিয়ে দেখলাম, মাথার
কাছে মস্ত এক রামছাগল দাড়ি নাড়িয়ে নাড়িয়ে খড় চিবাচ্ছে। গোয়াল ঘরের দড়ির খাটিয়াই যে
গতকালকের শয্যা হয়েছিল, অবশেষে তা বুঝলাম। সুড়সুড়ির উৎস – স্বয়ং রামছাগলের এক তালু
লম্বা দাড়ি।
শহুরে ছেলেকে পেয়ে আদিবাসী মানুষগুলোর
উৎসাহের অন্ত নেই। তবে সেই উৎসাহ কখনোই বিরক্তির সৃষ্টি করে না। ছোট্ট গ্রামের
পাহাড়ের ধারে অনন্তকাল ধরে যে বট শাখাপ্রশাখা মেলে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেখানেই বসে
বিকালের আসর। এরা মূলত কৃষিজীবী। নদীর ধারে যেটুকু জমি আছে, তার বুকেই ফলায় ধান আর
সরষে, মুসুর। নিজেরাই ফলায়, আর তাই দিয়ে একটি বছর কাটায়।
“আপনারা শহরে বিক্রি করেন না কেন?”
“কে লিবে? কী করেই বা লিয়ে যাবক?” পালটা
প্রশ্নে বুঝলাম, আমিই বোকার মতো প্রশ্ন করেছি। যেখানে প্রসূতির জন্য বা নিদেন
ফার্স্ট এইড করার জন্য ৭/৮ কিলোমিটার দূরে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে
গরুর গাড়ি ভিন্ন অন্য কোনও যানবাহনই নেই, সেখানে শস্য বিক্রি করে উপার্জন অনেকটাই
বাতুলতা। জানি না, এখনও সেই অবস্থায় আছে কিনা সেই গুগুলের বাইরের আদিবাসী গ্রামটি!
প্রায় ঝিম ধরে থাকা গ্রামের বুকে খেলার
পরের আরেক আনন্দের খবর। বাইরে বেরিয়ে দেখি একটি লম্বা বাঁশের দুই প্রান্তে দুই
সাঁওতাল যুবক আর মাঝে ঝুলছে একটা গোলাকৃতি টামাক। অপেক্ষাকৃত কম বয়েসের একটি ছেলে
সেটি বাজাতে বাজাতে ঘোষণা করে যাচ্ছে “যাইত্রা যাইত্রা যাইত্রা, আজ রাতেক কইল্কেতার
যাইত্রা।”
খুবই অবাক হলাম, যাত্রা তাও আবার কলকাতার।
দেখতে হবে। ওঁরাও,
মুন্ডা, সাঁওতাল বধূরা ঢেঁকিতে দ্রুত পা চালায়, মাঠের ছেলে চটপট বলদ দুটি নিয়ে এসে
তেল মাখায়। আমার এক থাল ভাত, পাতলা ঝোল (মুরগির নখ সমেত পায়ের হলদে অংশ) হাজির।
খাওয়ার পর আমার আশ্রয়দাতা মুখশুদ্ধি হিসাবে দিলেন কালচে একপ্রকার বিস্কুট। নোনতা
নোনতা খেতে। পরে শুনলাম, গতকাল যে ছাগলটা কাটা হয়েছিল তার জমাট শুকনো রক্ত দিয়ে
তৈরি এই বরফি বিস্কুটটি। সত্যি বলতে কী, শোনার পর গা’টা একটু গুলিয়ে উঠেছিল বৈকি।
খাদ্যাভ্যাস এমনটা কী করে তৈরি হয়! অবাক হই। কিন্তু আজ তার উত্তর খুঁজে পাই। পাথরের
পাহাড়, প্রায় রুক্ষ অনাবাদী ভূমির জন্য এই ভূমিপুত্ররা বাঁচার তাগিদে মুখে নিয়েছিল
কোনও এক কালে এমন আহার।
অক্টোবরে পার্বত্যভূমিতে বেশ ঠাণ্ডা। মেয়েটির
নাম রত্না। শ্যামলা গড়ন। দু’দিন ধরে ওইই সন্ধে হলেই হ্যারিকেন নিয়ে আসে। ওকে
জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম আর্টিস্টরা ক্লাবঘরে থাকবেন। খানিকটা এগোতেই বেশ ফাঁকা
জায়গা। মস্ত শামিয়ানা দেওয়া মঞ্চ। যাত্রা শুরু হবে রাত ৯টায়। ভাবলাম দেখা করে আসি
শিল্পীদের সঙ্গে। কিন্তু যাবো কী! ক্লাবের একমাত্র জানলা ঘিরে কিলবিল করছে নরনারী।
শিল্পীরা কতটা আগ্রহ নিয়ে মুখে মেকআপ করে চপ মুড়ি কেমন করে খাচ্ছেন তা দেখতে এই
উৎসাহী মানুষের ঢল। মুহূর্তে মুহূর্তে তাদের হাঁক পেড়ে সরাচ্ছে মাতব্বররা। ফিরে
গেলাম ঘরে। প্রথমে যে উৎসাহটা ছিল, তা কেন জানি না মরে গেল। কী জানি, অত্যাধুনিক
জীবনযাত্রা আর বড়ো বড়ো হলে সিনেমা দেখার ফল কিনা। রত্না ছাড়ে না। হাতে ধরিয়ে দিল
চটের থলে। প্রশ্নসূচক মুখে তাকাতেই মিষ্টি হেসে জানাল, “উটাতে বইসবেন।”
ধুলোর মধ্যেই নিজের নিজের চটের আসনে বসে
কেউ হাসে কেউ কাঁদে। আর আমি খুঁজি শিল্পরুচি। দেখলাম মূল নায়ক খল চরিত্রে অভিনয়
করেই কাঠের পাটাতন বেয়েই দৌড় লাগায় সন্ন্যাসীর বেশ ধরে আসার জন্য। খানিক পরেই
মাথার জটা হাত দিয়ে ধরে বন্ধ হয়ে যাওয়া মাইক্রোফোন বার কয়েক টোকা মেরে ডায়লগ বলতে
শুরু করে। মিথ্যা বলব না, হেসে ফেলেছিলাম। আসলে সেদিন রুচির মিল খুঁজতে যাওয়াটা
সত্যিই অন্যায় হয়েছিল। যে গ্রামে একশো ওয়াটের আলো সন্ধ্যার অন্ধকার দূর করে সেখানে
যাত্রাপালা বিলাসিতা। তবুও ওই জনজাতি সেই আনন্দের মাঝেই খোঁজে জীবনীশক্তি বাকি
দিনগুলির জন্য।
পরের দিন ফিরে আসার জন্য বাইকে চেপেছি। দেখি
রত্নার বাবা একটা ছোট্টখাট্টো পুঁটলি বেঁধে দিচ্ছে। জিজ্ঞসা করলাম, “কী আছে ওতে?”
উত্তর পাইনি তখন। বাড়ি ফিরে গদি আঁটা চেয়ারে দড়ির প্যাঁচ খুলতে খুলতে দেখলাম
একমুঠো সোনালী ভালোবাসা, মুসুরির ডাল। অতিথি দেব ভব। শহরের বুকে যক্ষ্মার মতো
অতিথির সেবা ক্ষয়ে গেলেও আদিম জনজাতিরা কিন্তু পুঁথিগত শিক্ষার বাইরে থেকেও তা
ভোলেনি। তাই তো তারা আদি বাসিন্দা। বসুন্ধরার প্রাচীন সন্তান।।
_____
ছবিঃ আন্তর্জাল
No comments:
Post a Comment