
ফসিল
যখন জ্যান্ত হয়
আমাদের এই পৃথিবী
জুড়ে লক্ষ লক্ষ প্রজাতির প্রাণী। তার মধ্যে সবচেয়ে উন্নত প্রাণী হল মানুষ। আর তার এই
শ্রেষ্ঠত্বের পেছনে আছে বিজ্ঞানের অবদান।
বিজ্ঞানের অসীম করুণায় মানুষের জীবন এখন অনেক নিরাপদ
আর জ্ঞানভান্ডারে পূর্ণ। প্রতিনিয়ত পৃথিবীর নানান প্রান্তে বহু বিজ্ঞানীর নিরলস
পরিশ্রম চলেছে মানুষের সেবা আর কৌতূহল মেটানোর চেষ্টায়। তার ফলে পৃথিবীর অজানা বহু রহস্য
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে একটু একটু করে উন্মোচিত হচ্ছে মানুষের চোখের সামনে।
তবুও এমন কিছু কিছু রহস্য আজও রয়ে গেছে, যার সমাধান
বিজ্ঞানীরা এখনও করে উঠতে পারেননি, এই একবিংশ শতকে এসেও। সেগুলো আজও রয়ে গেছে মানুষের
ধরাছোঁয়ার বাইরে। আজ সেরকমই এক অদ্ভুত রহস্যের কথা তোমাদের শোনাব, যা শুনলে বসে বসে অবাক হয়ে
ভাবতে হবে, এ কেমন করে হয়?
১৮৫৬ সাল। উত্তর-পূর্ব ফ্রান্সের একটি প্রত্যন্ত এলাকায় এক
রোদ-ঝলমল সকালে শুরু হল হৈ হৈ রৈ রৈ কান্ড। সেখানে মাটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে একটা বিশাল উঁচু
চুনাপাথরের পাহাড়। তার গায়ে এখানে ওখানে গজিয়ে ওঠা কয়েকটা গাছ ছাড়া শুধুই রুক্ষ আর শুষ্ক পাথর। আর সেই
উঁচু পাহাড়টাকে ঘিরে এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে আছে আরও কয়েকটা ছোটোবড়ো টিলার সারি। কিন্তু
অন্য কোথাও নয়, সেই খাড়া আর ন্যাড়া পাহাড়টার ঢালেই আজ অগুনতি লোকের সমাবেশ। তাদের
কারও হাতে শাবল, গাঁইতি বা বেলচা, কারও হাতে বিস্ফোরক বোমা। এরা কারা? কী করতে
এসেছে এখানে?
এই পাহাড়ি অঞ্চলটা যে কত হাজার বছর ধরে এখানে এই
একইভাবে দাঁড়িয়ে আছে, তার কোনও হিসেব নেই। এলাকার কয়েক মাইলের মধ্যে কোনও লোকবসতি নেই। এমনকি,
কোনও মানুষের পা-ও যে কস্মিনকালে এখানে পড়ে না, তা এর চেহারা দেখলেই বোঝা যায়।
অথচ সেই পাহাড়টাই আজ কয়েকশো লোকের লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। কারণ, গত
কয়েকমাস ধরে যে রেললাইনটা পাতা হচ্ছে এই এলাকায়, সেই লাইনটা সোজা চলে যাবে এই
পাহাড়টা ভেদ করে। আর তাই এই পাহাড়টা ফাটিয়ে সুড়ঙ্গ কেটে তৈরি করা হবে রেলওয়ে টানেল।
ইঞ্জিনিয়ার আর বিশেষজ্ঞরা দেখেশুনে কয়েকটা পয়েন্ট ঠিক
করলেন। সেইসব জায়গায় পাহাড়ের গা খুঁড়ে সেট করা হল ডিনামাইট। সবাই সরে এল নিরাপদ
দূরত্বে। আর তার পরেই ডিটোনেটর যন্ত্রের হাতলে চাপ। শুরু হয়ে গেল বিস্ফোরণ।
একের পর এক বিস্ফোরণে ফেটে যেতে লাগল পাহাড়ের নিচের
দিকটা। আগুন আর ধোঁয়ায় ঢেকে গেল চারপাশ। পাথরের টুকরো গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে ছড়িয়ে পড়ল বাতাসে। বিস্ফোরণের
শব্দগুলো ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হতে লাগল গোটা প্রান্তর জুড়ে।
কয়েক মিনিট পর সব শান্ত। ধ্বংসলীলা শেষ। এবার শাবল
আর গাঁইতি হাতে এগিয়ে গেল শ্রমিকের দল। ফেটে যাওয়া বোল্ডারের আশেপাশে ঘা মেরে পাথর ভাঙতে
ভাঙতে তৈরি হবে গুহা।
কিন্তু এর ঠিক কয়েক মিনিট পরেই ঘটে গেল সেই আশ্চর্য
ঘটনা। বিজ্ঞানের ইতিহাসে অসম্ভব হলেও যা জ্বলজ্যান্ত সত্য। উপস্থিত মানুষগুলো সেই মুহূর্তে
কিছু বুঝতে না পারলেও পরে বুঝেছিল। চোখ কপালে তোলা সেই খবর শুনে একদিকে যেমন তারা আশ্চর্য
হয়েছিল, তার পাশাপাশি এক ইতিহাসের সাক্ষী হতে পেরে গর্বিতও হয়েছিল তারা।
তখন বেশ বড়োসড়ো একটা গুহামুখ তৈরি হয়ে গেছে, আর
শ্রমিকের দল পাথর ভাঙতে ভাঙতে এগিয়ে গেছে তার ভেতরে। হঠাৎ গাঁইতির ঘা মারতে গিয়ে আতঙ্কে
পিছিয়ে এল সামনে থাকা দলটা। বিস্ফোরণে ফেটে যাওয়া পাথরের মধ্যে ওটা কী দেখা যাচ্ছে?
একটা বিশাল আকৃতির পাখি। চেনা কোনও পাখির সঙ্গে তার কোনও
মিলই নেই। কী হিংস্র এর চেহারা! সরু লম্বা ঠোঁটের মধ্যে তীক্ষ্ণ আর ধারালো দাঁতের
সারি। চারটি পায়ে বাঁকানো নখ। গায়ের চামড়ায় ছোটো ছোটো আঁশও বেশ স্পষ্ট। কী পাখি এটা?
দেখতে দেখতে সকলের কৌতূহলী চোখের সামনেই পাখিটা একটু
যেন নড়ে উঠল। তারপর একটু একটু করে সামনের দিকে এগিয়ে এল। ডানায় ভর দিয়ে একবার যেন ওড়বারও
চেষ্টা করল। কিন্তু সামান্য দূর গিয়েই আর পারল না। নিথর হয়ে গেল। আর তার একটু পরেই বোঝা গেল যে
পাখিটা আর বেঁচে নেই।
উপস্থিত শ্রমিকদের ক’জন মিলে পাখিটার মৃতদেহ নিয়ে গেল
কাছের শহরে। সেখানে একটা ছোটোখাটো মিউজিয়ম ছিল। সেখানকার বিশেষজ্ঞের দল পাখিটাকে পরীক্ষা করে দেখলেন। আর তখনই
সবাই জানতে পারল সেই অবাক করা তথ্য।
পাখিটা কোনও সাধারণ পাখি নয়। এ হল পৃথিবীর এক প্রাচীন
প্রজাতির পাখি, যার নাম টেরোড্যাক্টিল। যখন পৃথিবীর বুকে ডাইনোসরের দল দাপিয়ে বেড়াত, তখনই এ
পাখির দেখা পাওয়া গিয়েছিল। সে ছিল আজ থেকে প্রায় পনেরো কোটি বছর আগের কথা। তারপর
থেকেই চিরতরে অবলুপ্ত হয়ে গেছে এই পাখি। অথচ সেই পাখিকেই আজ জীবন্ত অবস্থায় দেখা গেল! এ কী করে
সম্ভব? যেখানে কোনও অক্সিজেন বা খাদ্য পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই, সেখানে এত কোটি
বছর ধরে প্রাণীটার দেহে প্রাণ থাকে কী করে? আর আজ হঠাৎ আলো বাতাসের সংস্পর্শে এসেই
বা সে প্রাণ ফিরে পায় কী করে?
আজও বিজ্ঞানীর দল এর কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি।
তবে ফসিলের এই প্রাণ ফিরে পাওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয়। পৃথিবীর
ইতিহাসে এ ঘটনা এর আগে বা পরেও ঘটে গিয়েছে অনেকবার। এবার সে গল্পই বলি।
ডঃ ই.ভি. ক্লার্ক। কেমব্রিজের কেইনস কলেজের অধ্যাপক। তিনি ছিলেন একজন নামকরা
বৈজ্ঞানিক। পাশাপাশি প্রত্নতত্ত্বের প্রতিও তাঁর আগ্রহ ছিল অত্যধিক। মাঝে
মাঝেই তিনি বিভিন্ন অনুসন্ধানকারী দলের সঙ্গে নানা প্রত্নতাত্ত্বিক অভিযানে
অংশগ্রহণ করতেন, আর প্রতিবারেই কিছু না কিছু অদ্ভুত আবিষ্কার করতেন।
সেরকমই একবার এক অভিযানে বেরিয়ে তিনি সমুদ্রশসা নামের
এক সামুদ্রিক প্রাণীর কিছু দেহাবশেষ সংগ্রহ করেন। আশ্চর্য ব্যাপার, সেগুলিকে দেখে
বহু প্রাচীন জীবাশ্ম বলে বোঝা গেলেও তাতে পচন বা বিকৃতির কোনও লক্ষণ ছিল না। ডঃ
ক্লার্ক সেগুলিকে তাঁর গবেষণাগারে নিয়ে এলেন ভালোভাবে পরীক্ষা করার জন্য।
তারপরেই ঘটে গেল সেই আশ্চর্য ঘটনা। মৃত দেহাংশগুলির
মধ্যে একটি দেহে হঠাৎ জীবনের স্পন্দন দেখা গেল। নিজের চোখের সামনে এই ব্যাপার
ঘটতে দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন ডঃ ক্লার্ক। এ কী করে হয়? কত কত বছর ধরে
সমুদ্রের পাশে বালির মধ্যে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকা শরীরে প্রাণের স্পন্দন! বেশ বোঝা
যাচ্ছে, মৃত প্রাণীটা জীবন ফিরে পেয়েছে। তার দেহে দেখা যাচ্ছে বেঁচে ওঠার লক্ষণ।
ডঃ ক্লার্ক এবার ভাবলেন, এগুলো তো জলের প্রাণী, সুতরাং
জলের সংস্পর্শে এলে এর কী অবস্থা হয় সেটা দেখা দরকার। তাই তিনি প্রাণীটার দেহটা তুলে
নিয়ে পাশের একটি পুকুরের কাছে গেলেন। তারপর ধীরে ধীরে সেই পুকুরের জলে তাকে ডোবালেন।
কী কান্ড! কয়েক মুহূর্ত প্রাণীটি নিশ্চল হয়ে রইল। তারপর
নড়েচড়ে উঠেই দ্রুত এঁকেবেঁকে চলে গেল জলের গভীরে। ডঃ ক্লার্ক হতভম্ব হয়ে গেলেন।
পরের দিন তিনি সেই পুকুরের জল পাম্প করে তোলার
ব্যবস্থা করলেন বটে, কিন্তু সেই প্রাণ ফিরে পাওয়া সমুদ্রশসার ফসিলটি আর খুঁজে
পাওয়া গেল না। সে কি রীতিমতো জীবন্ত হয়ে পুকুরের পরিবেশেই মিশে গিয়েছিল? সারাজীবনে সে
উত্তর আর খুঁজে পাননি তিনি।
ডঃ ক্লার্কের এই ঘটনাই হল পৃথিবীর ইতিহাসে জীবন্ত
জীবাশ্মের প্রথম ঘটনা। এর পর দীর্ঘ ব্যবধানে সেই উত্তর-পূর্ব ফ্রান্সের
টেরোড্যাক্টিলের ঘটনা শোনা যায়। তার মধ্যে বিভিন্ন সময়ে আবিষ্কৃত হয়েছে বহু ফসিল। কিন্তু
তা জ্যান্ত হয়ে ওঠার আর কোনও কাহিনি শোনা যায়নি। তবে এর পর থেকে শোনা যেতে লাগল
আরও সব চমকপ্রদ কাহিনি। আর তার মধ্যে বিশেষভাবে জায়গা করে নিল ব্যাঙের ফসিল।
যেমন, একটি ব্যাঙের ফসিল হঠাৎ খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল
ভূগর্ভের ২৫ ফুট নিচে থাকা একটি ম্যাগনেশিয়াম লাইম স্টোন বা চুনাপাথরের চাঙড়ের
ভেতর, যার বয়স ছিল প্রায় দু’কোটি বছর। সেই ব্যাঙটিকে সেখানে যখন আবিষ্কার করা হয়, তখন তার
মধ্যে প্রাণের সমস্ত লক্ষণ ছিল স্পষ্ট এবং এই নতুন করে জীবন্ত হয়ে ওঠার পর ব্যাঙটি
বেঁচে ছিল প্রায় আটচল্লিশ ঘন্টা, অর্থাৎ দু-দুটো দিন। তারপর সত্যিকারের মৃত্যু হয়
তার। আশ্চর্য ঘটনা নয় কি? মাটির তলায়, যেখানে সূর্যের আলো বা হাওয়া কিছুই ঢোকা
সম্ভব নয়, সেখানে সে কীভাবে বেঁচে রইল লক্ষ কিংবা কোটি বছর?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবার জন্যেই এবার বিজ্ঞানীর
দল শুরু করলেন পরীক্ষা। আর সে পরীক্ষায় কিছুটা সফলও হলেন তাঁরা। যেমন
ফ্রান্সের এক বৈজ্ঞানিক। তিনি করলেন কী, গোটা কুড়ি ব্যাঙের দেহ জীবন্ত অবস্থায় প্লাস্টার
অব প্যারিসে ঢালাই করলেন। তারপর মাটিতে প্রায় ২৫-৩০ ফুট গভীর এক গর্ত খুঁড়ে সব ব্যাঙগুলিকে
এক এক করে ওই জীবন্ত অবস্থায় সমাধিস্থ করলেন সেখানে। দীর্ঘ ১২ বছর পরে সেই বৈজ্ঞানিক
মাটির সেই জায়গা খুঁড়ে বার করলেন সেই কুড়িটা ব্যাঙের দেহ। ইতিমধ্যে খবর পেয়ে সাধারণ মানুষ
থেকে মিডিয়া সবাই হাজির হয়েছিল সেখানে। সবার চোখের সামনে এক এক করে প্লাস্টার ছাড়িয়ে নিলে
দেখা গেল সেই আশ্চর্য ব্যাপার, কুড়িটা ব্যাঙের মধ্যে চারটি ব্যাঙ তখনও বেঁচে আছে!
অর্থাৎ বিজ্ঞানের সাময়িকভাবে জয় হল আবার। প্রাকৃতিক ঘটনাও যে মানুষের আয়ত্তে এনে ফেলা যায়,
সেটাই প্রমাণ করা গেল। তবে এর কারণ কী, অর্থাৎ কীভাবে ব্যাঙগুলো এত বছর খাদ্য বা
অক্সিজেন ছাড়া বেঁচে রইল তার ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারল না। আর সে ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত
পৃথিবীর কোনও বিজ্ঞানী দিতে পারেননি। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে কোনওদিন জানা যাবে, কোন মন্ত্রবলে
হঠাৎ বেঁচে উঠেছিল কোটি কোটি বছর ধরে ঘুমিয়ে থাকা এইসব প্রাণীর ফসিল।
_____
ছবিঃ আন্তর্জাল
Bapre.romhorshok byapar.khub bhalo laglo.er opor based kore ekta uponyas likhle besh hoy Krishnenduda
ReplyDeleteদারুন রোমাঞ্চকর লেখা
ReplyDeleteযদি সেটি জীবন্ত রয়েছে তবে সংজ্ঞা অনুযায়ী তাকে ফসিল বলা যায় না । প্যালিওন্টলজি র পুরানো ক্লাস নোট এবং বই এর পাতা মনে করবার চেস্টা করে যা মাথায় এলো তা হচ্ছে "the remains or impression of a prehistoric plant or animal embedded in rock and preserved in petrified form". যে পাখীটির কথা বলা হয়েছে সেটি কোনো ভাবেই অবশিষ্টাংশ নয়, সেটি প্রস্তরীভূত ও হয় নি । সমুদ্রশসা বাঁ ব্যাঙের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে । যে ব্যাঙ টির কথা বলা হল সেটি recent, কোনোভাবেই prehistoric নয় ।
ReplyDeleteঘটনাটা অবিশ্বাস্য সত্যি! তবে প্রস্তরীভুত হলে প্রাণের সম্ভাবনা থাকা কি সম্ভব? আর একটা প্রশ্ন জাগল। ডিনামাইট দিয়ে পাহাড় ফাটিয়ে ফেলার কথা বলা হয়েছে ১৮৫৬ সালে, কিন্তু ঐ বস্তুটির আবিষ্কার তো হয় আরও পরে। আলফ্রেড নোবেল এর পেটেন্ট ই নেন ১৮৬৭ সালের অক্টোবর মাসে, ব্যবহার শুরু হয় আরও কিছুদিন বাদে। ইতিহাস তাই বলছে।
ReplyDeleteএই লেখাটির সাথে আজও যা রহস্য বইয়ের জীবন্ত ফসিলের আশ্চর্য কাহিনী লেখাটির খুব মিল।এমনকি ভাষাও প্রায় একই।বইটি একটি অনুবাদ বই।অনুবাদ করেছেন পৃথ্বীরাজ সেন।সূর্য পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত।ইংরাজি বইটির নাম World famous Supernatural Mysteries,লেখক সুখদেব প্রসাদ,পুস্তক মহলের বই।প্রবন্ধটির নাম The Living Fossil| অস্বাভাবিক মিল সেই লেখার সাথে।
ReplyDelete