বিষয়
ফোটোগ্রাফিঃ এক্কেবারে ছবির মতো – দ্বিতীয় পর্ব

পিসীমাকে চিঠি - ২
তনুশ্রী চক্রবর্তী
পিসীমা – সরি সরি সরি –
কান মুলছি, পায়ে পড়ছি! অনেক দেরি হয়ে গেল এই চিঠিটা লিখতে; খারাপ
লাগছে নিজেরই। তুমি বেশ কয়েকটা ছবি পাঠিয়েছ আমাকে হোয়াটস অ্যাপে, আর লাস্ট চিঠিতে জানিয়েছিলে
ছবি তোলা সংক্রান্ত তোমার মজার মজার অভিজ্ঞতা, লিখেছিলে তোমার অনেক প্রশ্নও আছে আর
আশা করেছিলে যে আমি চটপট সেগুলোর উপর তোমাকে ফিডব্যাক দেব। খুব অপরাধবোধ হল যখন লাস্ট
মেসেজে বললে যে তোমাকে আমি অপেক্ষায় রেখেছি। সত্যি গো - অজুহাত দিয়ে আরও সময় নষ্ট
করব না – বরং দেখি দোষখন্ডনের জন্য এ যাত্রা তোমাকে বেশ কয়েকটা
হালকা ফুলকা মুচমুচে টিপস দিয়ে পটিয়ে ফেলা যায় কিনা! এই টিপসগুলো তোমার ছবি তোলায়
অনেক সাহায্য করবে, তখন কিন্তু আমাকে চটপট মাফ করে দিও।
তোমার তোলা যে ফটোগুলো পাঠিয়েছ – বিশ্বাস করো – সবকটাই বেশ চমকে দেবার মত। একটুও বাড়িয়ে বলছি না। আমি সত্যি এতটা আশা করিনি। আসলে
তুমি যে সিরিয়াসলি আমার কথা শুনে ও মেনে মন দিয়ে ছবি তুলছ এতে আমার শেখানোর উৎসাহ
সত্যি অনেক বেড়ে গেছে। শুধু যদি সময়টা একটু বেশি পেতাম – যাক গে – ওই কথা আর
তুলছি না!
তোমার পাঠানো ছবিগুলোর একটা একটা
করে ধরে ধরে আলোচনা করব ভাবছিলাম কারণ তুমি লিখেছ “ছবিতে নিশ্চয়ই অনেক খামতি আছে” – তারপর ভাবলাম
সেটা করার আগে বরং ছবি তোলার কিছু কমন খামতি নিয়ে একটু আলোচনা করে নিই। এই খামতি আমাদের সকলেরই
হয় যখন আমরা প্রথম প্রথম ছবি তুলি। মজার ব্যাপার হল, অন্যের তোলা ছবি দেখার সময় যদিও
এগুলো ত্রুটি হিসেবে খুব সহজেই চোখে পড়ে, নিজে ছবি তোলার সময়
কিন্তু সেগুলো অতটা খেয়াল থাকে না। একটু সতর্ক থাকলেই কিন্তু খুব
সহজে কিন্তু এগুলো এড়ানো যেতে পারে।
একটা খুব সাধারণ ছবির উদাহরণ দিয়ে
বোঝাই - যেমন ধরো, নিচের ছবিটা (এটা তোমার তোলা নয়, নেট থেকে নেওয়া) – সারি
দিয়ে দাঁড়ানো গাড়ি আর তার উপরে রেলিংগুলো বেশ একটা সুন্দর প্যাটার্ণের এফেক্ট
এনেছিল। ছবিটা ফ্রেমিং-র সময় কিন্তু ব্যাপারটা ভালই ছিল, কিন্তু শাটার
টেপার মুহূর্তে ফ্রেমে ঢুকে পড়েছে ওই স্কুটারের আদ্ধেকটা। আর সেটা ফটোগ্রাফারের
খেয়ালে আসেনি – তাই একটা ভাল কম্পোজিশন মার খেয়ে গেছে। মজা কী জানো তো, বেশিরভাগ
সময়েই ছবি তোলার সময় আমাদের মনোযোগ থাকে সাবজেক্টের উপরেই, তাই ছবির কিনারা ঘেঁষে
যেসব ক্লাটার ঢুকে পড়ে সেদিকে আমরা নজর দিই না তত; অথচ ছবি দেখার সময় কিন্তু ওই
ক্লাটারগুলোই আমাদের চোখে পিন ফুটোতে থাকে, আর দাঁতে কাঁকর পড়ার মতো লাগে।

তাই আজকের প্রথম পাঠ হল এইটা – খেয়াল
রাখা – সাবজেক্টের সাথে সাথে চোখ রাখতে হবে ছবির কিনারেও। কাজটা খুবই সহজ, ছবির
সাবজেক্টের উপর ক্যামেরা তাক করে শাটারটা টেপার জাস্ট আগে একবার চোখটা ছবির চার
কিনারা বরাবর ঘুরিয়ে নেওয়া – আর তারপর ডিসিশন নেওয়া – শাটার কখন টিপব। যেমন, এই ছবিতেই দেখ –
স্কুটারটা ওরকম আধখ্যাঁচরা হয়ে আছে বলেই বিপত্তি – শাটার টেপার আগে যদি কয়েক
সেকেন্ড অপেক্ষা করা যেত তবে পুরো স্কুটারটা ফ্রেমে এসে যেত – তাহলে ব্যাপারটা মন্দ
দাঁড়াত না! আর সেটা না পছন্দ হলে, কয়েক সেকেন্ড আরও অপেক্ষা করলেই স্কুটার বেরিয়ে
যেত ফ্রেম থেকে – ব্যাস! এটা এড়াবে কীভাবে সেটা বলব খানিক বাদেই –তার আগে দুনম্বরটা
বলে নিই – কারণ দুটোর মধ্যে খানিক যোগসাজশ আছে কিনা, তাই!

এই ছবিটা বেছে নিয়েছি পরবর্তী পাঠ
হিসেবে – টপিকের নামটাও বলে দিইঃ “স্নিপিং”! খুব গুরুতর কিছু না বটে – কিন্তু জরুরি
তো বটেই! তোমার বেশ কয়েকটা ভালো ছবিতে দেখলাম এই সমস্যাটা হচ্ছে। ছবিটা চিনতে পারছ
তো? তোমারই তোলা । তুমি লিখেছিলে যে তোমার মন ভরেনি ছবিটা দেখে – অথচ কেন যে ছবিটা ভালো হয়নি সেটা ধরতে পারছ না।
তোমার মনে হয়েছে এটা আলোর সমস্যা!
আমি চেষ্টা করছি তোমাকে ধরিয়ে
দিতে – কেন এই ছবিটা একটা দারুণ ছবি হতে গিয়েও হল না। স্নিপিং নিয়ে তো বলবই
কিন্তু অন্য খামতিগুলোও বলি। প্রথম ত্রুটি – হ্যাঁ, তুমি ঠিকই আন্দাজ করেছ! আলোই
হল প্রধান কালপ্রিট, কিন্তু সে একা নয়! এছাড়াও আছে কালপ্রিটের অন্য বদমাইশ সহযোগীরা!
প্রধান সহযোগী হল ক্লাটার - ওই যে দেখ ডানদিকের কোণে কালো একটা বাক্স-মতো, আর
বাঁদিকে খুরপি... ! ক্লাটার বাদেও আছে স্নিপিং, আছে ফোকাসিং সমস্যা আর “ক্যামেরা
শেক” (এ হল আমাদের আজকের শেষ পাঠ)। এছাড়াও ছবির অ্যাঙ্গেল আর পারসপেকটিভও
খুব গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে একটা ছবিকে সুন্দর করার জন্য। হয়তো দেখবে এই ক্লাটারকে
এড়াতে গিয়ে তুমি এমন একটা অ্যাঙ্গেলে ছবিটা তুলতে বাধ্য হবে যে সেটা হয়তো ছবিটাকে
একদম একটা অন্য লেভেলে নিয়ে যাবে।
আর আলো তো খুবই গুরুত্বপূর্ণ,
সেটা আগেও লিখেছি। এমন নয় যে মেঘলা দিনে সুন্দর ছবি ওঠে না, অবশ্যই ওঠে। কিন্তু আলো
থাকা না থাকার প্রত্যক্ষ প্রভাব ছাড়াও পরোক্ষ প্রভাবটাও কিছু কম নয়! আলো কম থাকলে ছবি
কেঁপে যাওয়ার সম্ভাবনাটা অনেক বেড়ে যায় আর তাই ছবি একটু ঝাপসাটে আসে। এর পিছনে যে বৈজ্ঞানিক
কারণ আছে ছোট্ট করে সেটা বলি। আলো কম থাকলে সেটার ক্ষতি পূরণ করার জন্য ক্যামেরাই
বল বা মোবাইল, অটোমেটিক সেটিং-এ শাটার স্পিডটা কমিয়ে দেয়, যাতে আলো বেশি ঢোকে আর
ছবিটা অন্ধকার না হয়ে যায়। কিন্তু শাটার বেশিক্ষণ খোলা থাকার জন্য এক সেকেন্ডের ওই
অনেক ভাগের একভাগ সময়ের মধ্যেও ফটোগ্রাফারের হাত (বা সাবজেক্টেরও) কেঁপে যাওয়ার
সম্ভাবনা থাকে, তখন ছবিটা ঝাপসা হয়ে যায়। এটা খুব কমন ব্যাপার। তোমার এই ছবিতে ফোকাসিং
সমস্যা ছাড়াও কিছু শেক লক্ষ্য করেছি। কিন্তু ক্যামেরা শেক হল পাঠ নাম্বার তিন! তার
আগে পাঠ নাম্বার দুই-য়ের পালা খতম করি।

এবার বলি স্নিপিং কারে কয়! ইনি
হলেন ‘এক ধরনের ক্রপিং’ সেটা শতকরা ৯০ ভাগ সময়েই হয় অনিচ্ছাকৃত ভাবে! বাংলায় যাকে
আমরা বলি “কেটে গেছে”। স্নিপিং হল সেই আদি ও অকৃত্রিম “দুধ ও চোনা”-র গল্প! ক্রপিং
আর স্নিপিং-এ তফাত আছে কিন্তু! দেখাচ্ছি বুঝিয়ে!
তোমারই তোলা এই ছবিটায় দেখ – লাল বৃত্তটা দিয়ে মার্ক করেছি যেখানে
পাপড়িটা সেখানে কেটে গেছে সামান্য। নইলে ছবিটা বে-শ ভাল
তুলেছিলে! স্নিপিং কেন মন্দ? কারণ স্নিপিং বোঝায় অমনোযোগী কম্পোজিশন! ক্রপিং হল
ইচ্ছাকৃত কাটা! সেটা কক্ষনও ওইটুকু পাপড়ি কুচ করে কেটে নেবে না! বেশ খানিকটা কাটবে
– ঘ্যাঁচ করে! সেটা দেখো পরের ছবিতে! অথচ যদি একচুল জায়গা থাকত পাপড়ির আশেপাশে
তাহলে ছবিটা খুব সুন্দর হত - “ফুল এবং মৌমাছি”
এই সাবজেক্টের ছবি হত। স্নিপিং সম্বন্ধে একবার সচেতন হয়ে গেলে তারপর স্নিপিং দেখলে
খুব অস্বস্তি হয় – যেমন আমার হচ্ছে এই ছবিটা দেখে – (আমার বুঝি শুচিবায়ু থাকতে
নেই? হিহিহি), অথচ এটা এড়ানো খুবই সহজ, জাস্ট একটু খেয়াল রাখা, ব্যস।

তোমার এই ছবিটাকেই এবার ক্রপিং
করে দেখানোর চেষ্টা করলাম – কম রেজোলিউশন বলে একটু ঝাপসা হল – সে যাক গে!
এ হোলো ক্রপ! নির্মমভাবে কাটা – বোঝাই
যাচ্ছে ইচ্ছাকৃত –আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে বলছে – উঁহু, ফুলটা নয়, আমার সাবজেক্ট হল মৌমাছি!
উপরের ছবিতে নীল বৃত্তগুলো কেন দাগিয়েছি
জিজ্ঞেস করবে নিশ্চয়ই! ওগুলো হল আরও কিছু ক্লাটার, যেটা মনে হয় তুমি অ্যাভয়েড করতেই
পারতে যদি ক্যামেরাটা সামান্য ডানদিকে ঘোরাতে ছবি তোলার সময়।

এবার ফিরে আসি আগের ছবিটায় – ওটাকেও
গোল পাকিয়েছি স্নিপিং যেখানে যেখানে হয়েছে সেখানে! দেখ।
এবার তোমাকে একটা কাজ দিই – হোমওয়ার্ক
- তুমি নিজে খুঁজে বের কর তো, কোথায় কোথায় ক্লাটার আছে এটাতে? আমি কিন্তু ইচ্ছে
করেই দু-দুটো ক্লাটারের উল্লেখ করিনি আগের লিস্টে। দেখ তো আরও কিছু বের করতে পারো
কিনা। ক্লাটার স্পট করতে পারাটা একটা বিশাল পদক্ষেপ ফটোগ্রাফির ব্যাপারে। ছবি
তোলার সময় এই চোখটা কাজে লাগবে। তোমার ঘরবাড়ি যেমন তকতকে সুন্দর সাজানো থাকে,
ছবিকেও তেমনি করে ক্লাটার-ফ্রি বানাও দেখি।

আজকের এক নম্বর পাঠ ঝালিয়ে নিই
একবার - আমি জানি পরেরবার যখন তুমি ছবি তুলবে তখন এই যে সব হিজিবিজি যা যা আমি
বকছি সব তোমার মাথায় ভেসে উঠবেই - যদি তুমি মনে রাখো নিচের এই ছবিটা (এটা যে কোন
ছবির ব্যাপারেই প্রযোজ্য!) প্রথম প্রথম ছবি তোলার সময় ভিউফাইন্ডার দিয়ে যখন দেখা
হয় (বা ডিসপ্লে-তে), সব ফটোগ্রাফাররা কেবল এক (১) লেখা অংশটার দিকেই নজর রাখে
প্রধানত। কিন্তু নজর রাখতে হবে পুরো ছবিতেই। শাটার টেপার আগে এক লেখা লাল
গোল্লার বাইরেও চোখ তো বোলাতে হবেই, কিন্তু খেয়াল রেখো সবচেয়ে ডেঞ্জারাস হল ওই দুই
নম্বর লেখা অংশটা! ওখানেই যত গড়বড় চুপিচুপি এসে ভীড় করে! ক্লাটার এসে যায়, স্নিপ
হয়ে যায় (এই ছবিতেও স্নিপ আছে বইকি) ইত্যাদি... । তাই একবার আলতো করে ছবির কিনারা
বরাবর দেখে নিতে ভুলো না – আর দেখো তোমার পরের লটের ছবিগুলো কত ভালো ওঠে! নিজেই তখন
বুঝতে পারবে খামতিটা কোথায় হচ্ছিল, ও কেন।
আজকের মত শেষ গপ্প, বা পাঠ, বলার
আগে একটু ভাল কথা বলে নিই – অনেক দোষ ধরছি অনেকক্ষণ ধরে কিনা, তাই একটু অন্য
দিকটাও বলি! তোমার মধ্যে একটা দারুণ ভালো গুণ লক্ষ করলাম কিন্তু। দেখলাম তুমি নিজের তোলা ছবি নিয়ে একদম
সন্তুষ্ট নও। এটা খুব ভালো লক্ষণ, এর মানে হল যে তুমি ভালোমন্দের তফাত বোঝ, আর তোমার
মধ্যে দেখার চোখ আছে। আত্মসন্তুষ্টি কিন্তু এ ব্যাপারে বেশ বাজে জিনিস – তা হলে এগোনোর
পথ বন্ধ হয়ে যায়, দেখার চোখটা মরে যায়!
আগেরবারই বলেছিলাম তোমাকে, ছবি
তোলা হল সায়েন্স আর আর্ট – এই দুয়ের মিশ্রণ। দেখার চোখ থাকা মানে আর্টিস্টিক
অ্যাপটিটিউড আছে তার প্রমাণ! সায়েন্স শেখানো যায় অপেক্ষাকৃত সহজে –কিন্তু এই শিল্পীসুলভ
চোখ থাকাটা হল ঈশ্বরের আশীর্বাদ!
যার এই চোখ নেই তাকে দেখতে শেখানো
হয়তো যায়, কিছুটা, (“ডেভেলপিং দ আই” বলে একটা পেপার ছিল আমাদের কারিকুলামে),
কিন্তু যে নিজে থেকেই দেখতে পায় তার এগিয়ে যাওয়া রুখবে কে?
এবার আজকের শেষ পাঠ – ক্যামেরা শেক
সংক্রান্ত!
তোমার পাঠানো যে ক’টা ছবি দেখলাম তার
মধ্যে একটা কমন সমস্যা লক্ষ্য করেছি আমি। দুয়েকটা বাদে বাকি ছবিগুলো দেখলাম ঠিক ঝকঝকে/শার্প
নয়। মানছি
তুমি মোবাইলে ছবি তুলছ তাই ডিএসএলআরের শার্পনেস আশা করা যায় না, কিন্তু মোবাইলেও আজকাল
মোটামুটি শার্প ছবি তোলা সম্ভব –যদি তার জন্য কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চল! সেগুলো মাথায় রাখলেই
দেখবে তোমার তোলা ছবি কোন লেভেল থেকে কোন লেভেলে চলে যাচ্ছে। ঝাপসা ছবি ছাড়াও আরেকটা কমন সমস্যা
হল ক্যামেরার অ্যাঙ্গেলে গড়বড় –ফুলটুলের ব্যাপারে সেটা নিয়ে অতটা মাথা না ঘামালেও চলে – কিন্তু মানুষের তো বটেই, এমনকি জন্তুজানোয়ারের ছবি তোলার
সময়েও এই অ্যাঙ্গেলটা ঠিক রাখতে না পারলে কিন্তু মুশকিল! ওইরকম ছবি দেখতে কেমন যেন
বিটকেল লাগে – যাকে টেকনিক্যাল ভাষায় বলে পার্স্পেক্টিভ ডিসটরশন।
তবে ডিসটরশন কি আর সবসময় খারাপ? যারা সেলফি ভালো তোলে
তারা কিন্তু এটাকে খুব ভালো কাজে লাগাতে পারে – যাতে গোলগাল মুখও
পানপাতার মতো দেখায়! সেটাও তোমাকে শেখাব না হয়! অক্সফোর্ড ডিক্সনারিও যখন সেলফিকে সম্মানের সাথে ঠাঁই দিয়েছে তাদের পাতায় – তুমি “ম্যা-গো” করলে হবে? আচ্ছা আচ্ছা – এক্ষুনি এটা নিয়ে ঘাবড়িও না – সেলফি টপিক না হয়
পরের বারের জন্য তোলা রইল –এ সবের চেয়ে আগে চলো বরং একটু ঝাপসা ছবির চিকিৎসা করা যাক। আজকাল সব ক্যামেরাই, মায় মোবাইলেও হাত
কাঁপার থেকে রক্ষা পাবার ইন বিল্ট অ্যান্টি-শেক মেকানিজম থাকে –কিন্তু তারও তো একটা সীমা আছে। কিছু সাবধানতা নিজেকেও নিতে হবেই তোমায়। সেটাই শেখবার।
জানোই নিশ্চয়ই ছবি ঝাপসা হবার প্রধান
কারণ হল ছবি তোলার সময় ক্যামেরা বা সাবজেক্ট নড়ে যাওয়া। আগে যেমন ফোটোগ্রাফাররা ছবি তোলার
সময় “নড়বেন
না, নড়বেন না” বলে সবাইকে একটা স্টিফ মূর্তির মতো দাঁড় করিয়ে
রাখত অতটা কড়া না হলেও চলে আজকাল... তবে হ্যাঁ সাবজেক্টের নড়াচড়া
না করাই ভালো, বিশেষত আলোর হাল সুবিধের না হলে। কিন্তু আসলে যার নড়াচড়া করা প্রায়
বারণ সে হোল ফটোগ্রাফার নিজে। এবার বলি – ছবি তোলার সময় নিজের
নড়াচড়া কমাবে কী করে। তুমি হয়তো বলবে “নড়ি না তো”!
কিন্তু সামান্য নড়লেও অনেকটা এফেক্ট হয় – সেটা
এড়াতে প্রথমেই যেটা করতে হবে সেটা হল “কনসেন্ট্রেট”!
– এবং শাটার টেপার সময়টুকু – একেবারে স্ট্যাচু!
নিঃশ্বাসটা ধরে রাখতে হবে –দম বন্ধ করে – আজ্ঞে হ্যাঁ ! যতটা ভয়ঙ্কর ভাবছ ব্যাপারটা এটা ততটা
নয় ঠিক। দিনের
আলোয় ছবি তুলতে মোটামুটি ১/২৫০ সেকেন্ড সময় লাগে – রাত্রিবেলা ১/৩০শে দিব্যি আলো আলো ছবি হয়! তাহলে বুঝতেই পারছ এক সেকেন্ডের
চেয়েও কত কম সময়ে ছবি ওঠে –তাই ওইটুকু সময় নিঃশ্বাস ধরে রাখলে
আর মন দিয়ে ছবিটা নিলে কষ্ট হবার কথা নয় মোটেই। নিঃশ্বাস কীভাবে ধরে রাখবে সেটা তোমার
ব্যাপার – মানে, ব্রিদ আউট করে তারপর, না
ব্রিদ ইন করে।
দ্বিতীয় স্টেপ – (এই পড়লাম মুশকিলে
– সঠিক বাংলা প্রতিশব্দ খুঁজে পাচ্ছি না – তা যা হোক, ইংরাজীই ভরসা) – শাটার
টেপার সময় মনে রাখবে “স্কুইজ, নট প্রেস”। তফাতটা বুঝতে পারলে তো? মানে ক্যামেরার বোতামে
আঙুল রেখে আস্তে করে বোতামের উপর চাপ বাড়িয়ে ছবি তুলবে। শাটার প্রেস করলে একটা হালকা ঝাঁকুনি
লাগে ক্যামেরায় যেটা আমরা টেরও পাই না, কিন্তু ক্যামেরা পায়। মোবাইলের ক্ষেত্রে তো টাচই ভরোসা
– তা চেষ্টা করবে যতটা সম্ভব হালকা হাতে সেটা করা যায়।
তৃতীয় নিয়ম – মোবাইল বা ডিজিটাল
ক্যামেরা সবেতেই আজকাল একটা প্রিভিউ স্ক্রিন থাকে – ছবিটা তোলার
সময় শাটার স্কুইজ করে ছবিটা যতক্ষণ না সেই স্ক্রীনে ভেসে উঠছে ততক্ষণ নিজের দম ছাড়বে
না –স্ট্যাচু ভাঙবে না! আবার বলি ভয় পেয়ো
না – এইসব ব্যাপারই মিটে যাবে জ্যাদা সে জ্যাদা এক সেকেন্ডের
মধ্যে! ওটুকুও যদি দম রাখতে না পারো তো এক্ষুনি প্রাণায়াম শুরু
করো – শীগগির – হি হি হি!
চতুর্থ চালাকি – সব সময় ক্যামেরা বা
মোবাইল যাতেই ছবি তোলা হোক সেটা দু’হাতে ধরবে – একদম একহাতে ধরার
চেষ্টাই করবে না আর সেই হাতগুলো যতটা সম্ভব শরীরের কাছাকাছি শরীরের সাথে ঠেসে রাখবে
– পারলে কনুইদুটো শরীরের দু’পাশে চেপে – দেখবে কতটা এক্সট্রা সাপোর্ট পাওয়া যায়। ক্যামেরা যত ভারী হবে তত এর কার্যকারিতাটা
টের পাবে – কিন্তু কার্যকারিতা সব ক্যামেরার জন্যই সত্যি। এই এক্সট্রা সাপোর্টের আরও অনেক উপায়
আছে বলছি – যেমন যেমন দরকার প্রয়োগ কোরো।
একঃ আশেপাশে কোনও দেয়াল বা শক্ত সাপোর্ট
থাকলে তাতে হেলান দিয়ে দাঁড়ালে সুবিধে! এছাড়াও সবসময় সাপোর্ট খুঁজবে চারদিকে –
বেঁটে পাঁচিল, খাবার টেবিল, সিঁড়ির হাতল – মানে যা পাবে তার উপর ক্যামেরা বা মোবাইলকে
বসিয়ে নেবে। এভাবে
ছবি তুললে ক্যামেরা শেক সংক্রান্ত ঝামেলা অনেকটা কমে – ওজনটা সাপোর্টের উপর
চলে যায় – ক্যামেরার ডিগ্রি অফ ফ্রিডমের বেশ কয়েকটার ভুষ্টিনাশ
করা যায় আর কি! এছাড়া ট্রাইপড – মোনোপড,
গোরিলাপড, বিনব্যাগ ইত্যাদি নানান ব্যবস্থা আছে
সেটা আমি তোমাকে বড়ো ক্যামেরা নিয়ে যখন ছবি তুলবে তখন বলব!

নাকি এখনই একটু বলে রাখি? তাহলে পরে খুঁজে পেতে
সুবিধা হবে। কিছুটা
হয়তো ধোঁয়াটে ঠেকবে তোমার – তাও শুনে রাখো।
আজকাল প্রায় সব ভালো ক্যামেরাতেই অ্যান্টিশেক
ফিচার আছে! ছবি তোলার সময় সেটা অন রাখতে হয়। কিন্তু যখন ট্রাইপড ব্যবহার করা হয়
তখন কিন্তু সেটা অফ করে দিতে হয়, নইলে ক্যামেরা যখন ট্রাইপডের উপর বসে থাকে তখন ওই অ্যান্টিশেক
ফিচারটা একটা ভাইব্রেশন তৈরি করে। এটা খুব জরুরি ব্যাপার কিন্তু।
তবে শুধু অ্যান্টিশেক ফিচারের উপর
ভরসা করলে কি চলবে? না! শেক কমানোর জন্য ছবি তোলার সময় শাটার স্পিডটা বাড়িয়ে রাখতে
হয় – আর
সেটা কম্পেনসেট করার জন্য আইএসও এবং অ্যাপারচার বাড়িয়ে এক্সপোজার অ্যাডজাস্ট করা হয়!
আর ডিএসেলয়ার ছাড়াও আজকাল অটো ক্যামেরাতেও দেখবে নানা রকম চিহ্ন থাকে,
দৌড়বাজ, ফুল ইত্যাদি। এদের মধ্যে দৌড়বাজ আইকনটিকে বলে স্পোর্টস
মোড –
এতে রেখে ছবি তুললে ছবি কাঁপার সম্ভাবনা কম! যদিও স্ট্যাচু হওয়া
প্র্যাকটিশ করো, দেখবে আর কিছুরই কোনও দরকার পড়বে না অতটা!
এইসব সামান্য কিছু ব্যাপার একটু
মেনে চলো, দেখবে একটু সামান্য খেয়াল রাখলেই তোমার ছবির মান একলাফে পৌঁছে যাবে অনেকখানি
উপরে। আমি বসে রইলাম সেইসব ছবির জন্য!
_____
দারুন
ReplyDelete