
আটটি কুকুরের গল্প
অদিতি বসুরায়
মায়া, ওল্ড জ্যাক, সর্টি,
ডেভে, ট্রুম্যান, শ্যাডো, ব্রুক, ছোট ম্যক্স – এরা আটজন। আটটি কুকুর। তখন
তারা আন্টার্কটিকায়। পরিস্থিতির চাপে বরফে আটকে পড়ে। খাবার
ছিল না। ভয়াবহ ঠাণ্ডা। মালিক কাম ট্রেনার
তাদের ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু তারা কেউ একে অপরকে ছেড়ে যায়নি। কয়েকজন মানুষের প্রাণ বাঁচানোর বিনিময়ে তাদের পরিত্যক্ত হতে হয়েছিল বরফের
দেশে। কেননা, মানুষ হওয়ার সমস্যা অনেক। হিমশীতল নির্জন এলাকায় খিদেতে কষ্ট পেতে পেতেও তারা সঙ্গীদের খাবার যোগাড় করার
চেষ্টা করে গেছে।
ছবিটি রিলিজ করেছিল ২০০৬ সালে। নাম - এইট
বিলো। ওয়াল্ট ডিজনির পরিবেশনায় আমেরিকা, কানাডা ও গ্রীনল্যান্ডে একসঙ্গে রিলিজ করে। আসলে ‘এইট বিলো’ বন্ধুত্বের ছবি। যে বন্ধুত্ব পরিস্থিতির চাপে পড়ে কখনও পিছু হটে না।
অস্তিত্বের সঙ্কট কেড়ে নিতে পারে না সহমর্মিতাকে। আটটি কুকুর যখন নিজেদের
নির্বান্ধব এবং আশ্রয়হীন হিসেবে আবিষ্কার করে, তখন থেকেই জার্নি শুরু। মায়া তাদের
লিডার। তাকে ফলো করে বাকি সাতজন। এরা সকলেই ‘স্লেজ ডগ’ মানে যারা মেরু অঞ্চলে বেঁচে থাকার যোগ্য। এদের গা ফারের মতো পশম-সমান লোমে ঢাকা। যার ফলে এরা মেরু প্রদেশের কড়া শীতে ঘোরাফেরা করতে
পারে। শেফার্ড, মানে তাদের মালিক আন্টার্কটিকায়
তাদের ছেড়ে যাওয়ার পর পুরোপুরি দুটি সপ্তাহ তারা অপেক্ষা করে। শেষপর্যন্ত খাবারের
অভাবে আর অন্য কোনও উপায় না খুঁজে পেয়ে ম্যাক্স যায়
সিগাল শিকার করতে। বাকিরাও যায় তার পিছু পিছু। কিন্তু ওল্ড জ্যাক পারেনি। কেননা,
সে ছিল সবচেয়ে বয়স্ক এবং কাহিল। অনাহারে ক্লান্ত জ্যাক আর বেরোতে পারেনি আস্তানা ছেড়ে। এবার ডেভের পালা। পা পিছলে পড়ে গিয়ে মারাত্মক চোট পায়
সে। বাকি ছয়জনের চোখের সামনে মারা যাওয়া ডেভেকে সারারাত ঘিরে রাখে তার সঙ্গীরা। বরফ, শীত কিছুই তাদের সরিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি বন্ধুর
মৃতদেহের পাশ থেকে। এ এক আশ্চর্য আখ্যান! ছ’টি অসহায় প্রাণী - একটি মৃতদেহ, অন্ধকার
রাত, সব মিলিয়ে বড়ো কষ্ট হয়। সেই সঙ্গে মনে হতে থাকে কী মায়াময় এই
জীবনযাপন! গাল বেয়ে গড়িয়ে আসা চোখের জল
মুছে নিতে নিতে এই মানব অস্তিত্বকে বড়ো ক্ষুদ্র মনে হয়। ছবি এগোতে থাকে। পরদিন
ভোরে ফিরে যায় বাকিরা। বরফের বিছানায় একা ঘুমিয়ে থাকে
ডেভে চিরকালের মতো।
এর মধ্যে আবার ম্যাক্স দল
থেকে আলাদা হয়ে যায়। ফিরে আসার পথে দলের জন্যে খাবারের বন্দোবস্ত করতে গিয়ে সে
একটি লেপার্ড সিলকে মারার চেষ্টা করে কিন্তু উলটে এই সিলের দলবলই
অ্যাটাক করে তাদের। মায়া গুরুতর জখম হয়। ম্যাক্স আবার ফিরে আসে
নিজের পরিজনদের কাছে। মেরু এলাকার ঠান্ডায়, অনাহারে, ক্লান্তিতে ঘুরে বেড়ায় তারা
আশ্রয় এবং খাবারের সন্ধানে। আহত মায়া এই অসম লড়াইয়ে হেরে যায় শেষে! মারা যায় সে এক
গাঢ় ঠাণ্ডার দিনে। লুটিয়ে পড়ে বরফের ওপর। কোথাও কোনও শব্দ নেই তখন। কেবল তার বন্ধুরা বসে থাকে তাকে ঘিরে। তারপর একসময় শুয়ে পড়ে
দলপতির পাশেই। বরফ পড়ে যায় অবিশ্রাম। এভাবে কেটে যায় প্রায় ছ’মাস।
এই সময় শেফার্ড বহু চেষ্টার পরে ফিরে আসে তার কুকুরদের কাছে।
সেও খুব অশান্তিতে ছিল এদের রেখে। কিন্তু
সেও খুবই অসহায়, কেননা, মেরু অঞ্চলে আসার মতো টাকা তার কাছে ছিল না। আবার সে
স্পনসরও পাচ্ছিল না। তাকে মায়ার কাছে নিয়ে যায়
ম্যাক্স। অসুস্থ মায়াকে নিয়ে আসে শেফার্ড। ফিরে আসে সবাইকে নিয়ে। শুধু ওল্ড জ্যাক
আর ডেভে ঘুমিয়ে থাকে বরফের কফিনে।

এই যুদ্ধের, বারুদের,
রাগের, ঝগড়ার দুনিয়ায় ‘এইট বিলো’ এক লুকিয়ে থাকা ভালোবাসার দেরাজ।
এই দেরাজটিকে খুলতে পারলেই বেরিয়ে আসে বন্ধুত্ব, সখ্যের মণিমুক্তো। এসো, এদের হাত ধরি। বরফ ফুঁড়ে জন্ম নিক গোলাপ-চারা।
______
ভালো লাগল।
ReplyDelete