
বইঃ সঙ্কলনঃ ভূত নিয়ে অদ্ভুত
সম্পাদনাঃ অজয় দাশগুপ্ত
প্রকাশনীঃ অন্নপূর্ণা প্রকাশনী (কলেজ
স্ট্রিট, কলকাতা)
আলোচনাঃ ঋজু
পাল
বর্ষণমুখর সন্ধ্যেবেলা অফিস থেকে
ফিরে চা তেলেভাজার সাথে যে জিনিসটা সবথেকে বেশি জমে তা হল ঘরোয়া আড্ডা, কখনও বন্ধুদের সাথে তো কখনও বাড়ির লোকজনদের সাথে। মেদিনীপুরের ছেলে আমি, তাই আড্ডা
আর মুড়িমাখা, এই দুটো জিনিস ওতপ্রোত ভাবে জড়িত বর্তমান শহুরে জীবনযাত্রার সাথে। আর
সেই আড্ডার সময়ে দুম করে লোডশেডিং হয়ে গেলে ... আহা, সোনায় সোহাগা। মোমবাতি বা
হ্যারিকেনের কম্পমান আলো আজ দেখা যায়ই বা কোথায়? ফলত মধ্যবিত্ত বাঙালির চিরাচরিত ভূতের
গল্প বা গুল্প যাই বলি না কেন, পরিবেশের অভাবে খেই হারিয়ে ফেলে। যেহেতু বই পড়তে ভালোবাসি,
তাই খুব ছোটবেলা থেকেই শুকতারার ভৌতিক সংখ্যাগুলো পড়ে শিহরিত হতাম, প্রচুর গল্প
সঙ্কলনও কিনতাম স্থানীয় বইমেলা থেকে। এখনকার প্রজন্মর মতো কনজুরিং জাতীয় বিদেশী
ভূতের সিনেমা দেখে অন্তত ভয় পাওয়া জিনিসটা শিখতে হয়নি।
আজ যে বইটির সাথে সবার পরিচয়
করাবো, এটি ছোটবেলায় পাওয়া জন্মদিনের উপহার, ঠাকুমা দিয়েছিলেন, আজ উনি নেই, শুধু
বইটা সাক্ষী হয়ে রয়েছে অনেক ভয়ে ঘুম না আসা রাতের। খ্যাতনামা লেখক, লেখিকাদের কলমের
গুণে গল্প সঙ্কলনটিতে স্থান পেয়েছে মোট ২৮টি ছোট গল্প।
ভূতের মুখেই ভূতের গল্প শুনেছেন
কখনও? তাও
আবার কাছের মানুষ যদি তিনি হন? পড়ে দেখুন শিবরাম চক্রবর্তীর লেখা ‘না ভূতের গল্প নয়’, খানিকটা লেখকের চিরপরিচিত
হাস্যরসের মাধ্যমে। ধরুন রাতের ট্রেন লেট করল, স্টেশন থেকে অন্ধকার ফাঁকা রাস্তা
দিয়ে ফিরছেন, কাঁধে
ব্যাগ, আর পেছন
থেকে সেই ব্যাগ ধরেই কেউ টান মারে? না না, অজ্ঞান হওয়ার আগে পড়ে ফেলুন আশাপূর্ণা
দেবীর ‘শনিবার
রাত দুপুরে’। আমাজন
উপত্যকায় একটা প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে প্রতি বুধবার একজন করে মানুষ উধাও হয়ে যাচ্ছেন!
কোনও
অপদেবতার কারসাজি নাকি অন্য কিছু? পড়ে ফেলুন নলিনী দাশ-এর লেখা ‘কাটুকিরা রহস্য’। আমার অনেকদিন ধরেই চোখের সমস্যা,
চশমা নিতে হয়েছে, আপনারও হয়েছে? শিগগিরি ভালো ডাক্তার দেখান, তবে সাবধান, ভুলেও কোনও গলির মোড়ের চীনা দোকান থেকে চশমা
বানাবেন না, বলা তো যায় না কী থেকে কী হয়!
যেমনটা সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ-এর ‘ভুতুড়ে
চশমা’-তে দেখা
যায়। জঙ্গলঘেরা
রাস্তা দিয়ে নেমন্তন্ন বাড়ি যাচ্ছেন, ফিরতে দেরি হয়ে গেল, রাস্তা হারিয়ে ফেলার ভয়
গ্রাস করলো! কী হবে তখন?
পড়ুন অজয় দাশগুপ্ত-র লেখা ‘অলৌকিক মানুষ’। বিমল করের ‘তিন শূন্যের বাস’, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের
‘পানিমুড়ার কবলে’, বুদ্ধদেব গুহর ‘মউলির সেই রাত’ এই চিরন্তন টানটান
উত্তেজনা মাখা গল্পগুলো ভয় পেতে বাধ্য করাবেই, একথা বলাই বাহুল্য।
এরকমই নানা স্বাদের, নানা আঙ্গিকের
ভূতের গল্প ধরা পড়েছে আবুল বাশার, আনন্দ বাগচি, জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী, অরবিন্দ গুহ, শিশির মজুমদার প্রমুখ বহুল পরিচিত লেখকদের লেখায়। একই সঙ্গে অমিতাভ বসু, অরুন আইন,
সুব্রত সাহা, ইন্দ্রাণী গুহরায় এনাদের লেখাতেও ধরা পড়েছে সেই একই মুনশিয়ানা।
বইটির প্রচ্ছদ-এর তারিফ না করে পারছি না। সম্পাদকের নিখুঁত
হাতে এতোগুলো রোমহর্ষক গল্প একত্রিত হয়েছে, এটা কিশোর পাঠকদের
কাছে এক বড় পাওনা, আর কিশোরই বা বলি কেন, যৌবনে পা দিয়েও দিব্যি উপভোগ করি
ছেলেবেলার স্মৃতিবিজড়িত এই রকম বইগুলো।
বন্ধুদের অনুরোধ করব অবশ্যই পড়ে
দেখো, নিরাশ হবে না।
এই একবিংশ শতাব্দীর হাইটেক যুগে
একটু সময় না হয় বারই করলে ভূতদের জন্য ......।।
_______
No comments:
Post a Comment