
বইঃ বাংলার ডাকাত
লেখকঃ পাঁচুগোপাল ভট্টাচার্য
আলোচনাঃ সুচরিতা দত্ত
হা রে রে রে রে রে... কী বন্ধুরা? কী ভাবছ? ভাবছ তো যে ভাবাভাবির আছেটা কি? এরপর তো "আমায় ছেড়ে দে রে দে রে"। উঁহু হল না। আমি এই বিখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতের কথা বলছি না। যে সময়ের কথা বলছি সে সময় এই গান লেখাই হয় নি। বলছি আজ থেকে আড়াই তিনশো বছর আগেকার কথা। যখন বেশিরভাগ জায়গাই ছিল বনবাদাড়ে পরিপূর্ণ। সেই সুযোগ নিত তাগড়াই চেহারার কিছু মানুষ। হাতে থাকত লাঠি। মধ্যরাতে তারা জঙ্গলে কালী পূজা করত আর তারপর 'হা রে রে রে রে রে' করে গৃহস্থদের ধনসম্পদ লুঠ করত। এরা বাংলার বিখ্যাত ডাকাত, যাদের ভয়ে জমিদার থেকে সাধারণ মানুষ থরহরি কম্পমান ছিল। এরকমই দুর্ধর্ষ কিছু ডাকাতির বিবরণ নিয়ে পাঁচুগোপাল ভট্টাচার্যের বই 'বাংলার ডাকাত'। এই বইতে তিনটি গল্প আর দুটি উপন্যাস আছে।
গল্পগুলি হল - ১। মানিক ঘোষের আত্মকথা ২। বিষ্টু ঘোষের আত্মকথা ৩। ঠাকুর ডাকাত।
দুটি উপন্যাস হল - ৪। সনাতন সর্দার এবং ৫। রাণা সর্দার।
মানিক ঘোষের আত্মকথা ও বিষ্টু সর্দারের আত্মকথা এই দুটি গল্পই হল ধরা পড়ার পর সাহেবের কাছে (তখন ব্রিটিশ রাজত্ব) দুই দুর্ধর্ষ ডাকাতের দোষ স্বীকার, ইংরাজীতে যাকে আমরা confession বলি। ঠাকুর ডাকাত গল্পে কিভাবে এক বুদ্ধিমতি বধূর প্রচেষ্টায় তাদের বাড়িতে ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর ডাকাতির কিনারা হয় তারই মনোজ্ঞ বিবরণ আছে।
রাণা সর্দার ও সনাতন সর্দার দুই দুর্দান্ত ডাকাত সর্দারের ডাকাতির ঘটনা নিয়ে রচিত উপন্যাস। এগুলি লেখার সময় লেখক কখনও সরকারী নথি ঘেঁটেছেন, কখনও বা লোকমুখে শুনে আসা ঘটনার সঙ্গে আপন মনের মাধুরী মিশিয়েছেন। তাই গল্পগুলি নিছক কাল্পনিক নয়। বানানবিধি বা ভাষাবিন্যাসে একটু সেকেলে ছাপ থাকলেও বাংলার ডাকাতদের কাহিনী পড়তে তোমাদের একটুও অসুবিধা যে হবে না তা হলফ করে বলতে পারি; বরং সেকালের ভাষা সম্বন্ধে একটু আধটু ধারণা জন্মাবে।
কিন্তু ছোট্ট বন্ধুরা, তোমরা ডাকাতের গল্পের কথা শুনে মনে মনে ভয় পাচ্ছ না তো? না না ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আসলে সেকালের ডাকাতরা নামেই দুর্ধর্ষ, মানুষ হিসাবে কিন্তু তারা খারাপ নয়। অবস্থার পাকে চক্রে কেউ কেউ ডাকাতি করতে বাধ্য হয়েছে। কারোর ডাকাতির উদ্দেশ্য কেবল পরোপকার। রবিনহুডের মত তারা ধনী জমিদার বা সম্ভ্রান্ত মানুষদের বাড়িতে ডাকাতি করেছে আবার সেই ডাকাতির সমস্ত টাকা পয়সা নিজের জন্য না রেখে খরা কবলিত কোন অঞ্চলের মানুষদের সাহায্য করতে বিলিয়ে দিয়েছে অথবা কোন গরীব মানুষকে কন্যাদায় থেকে উদ্ধার করেছে। বাংলার ডাকাতরা যেন ডাকাত নয়, বাংলার রবিনহুড। তাই ডাকাতি করার সময় তারা অপ্রয়োজনে কাউকে মারধর করার কথা মনেই আনে না, আর বাড়ির মেয়েদের তো তারা দেবী জ্ঞানে পূজা করে। তাই বন্ধুরা নির্ভয়ে বাংলার ডাকাতদের কথা পড়ে ফেল। এ বই পড়লে শুধু ডাকাতির কথাই না, জানতে পারবে সে সময়কার সমাজের চিত্র। সেদিক থেকে দেখলে এ বই পড়া একদম মাস্ট। তাই না? তাহলে? তাহলে এ বই ইচ্ছে তালিকায় ঢুকে গেল তো? ডাকাতির গল্প পড়ে কেমন লাগল তা জানিও কিন্তু আমাদের মেল ঠিকানায়।
বইঃ বাংলার ডাকাত
লেখকঃ পাঁচুগোপাল ভট্টাচার্য
দামঃ ১৫০ টাকা
প্রকাশকঃ সুবর্ণরেখা
প্রথম প্রকাশঃ জানুয়ারী, ২০১৬
_________
No comments:
Post a Comment